Ameen Qudir

Published:
2019-05-11 19:53:18 BdST

দিন যায় কথা থাকে : সুবীরদা সবাইকে মনে রাখতেন


 

 

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
_________________________


১।মেডিকেলে পড়বার সময় সুবীর নন্দী গান গাইতে কলেজে এলেন।অলিখিতভাবে সমন্বয়ক হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হল। এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে রেস্তোরাঁতে দুপুরের খাবারে জানালেন তিনি ডায়াবেটিক।অনুষ্ঠানে কোন কোন গান গাওয়া হবে তার হোম ওয়ার্কপর্বে ' দিন যায় কথা থাকে ' গাইবার অনুরোধ জানালাম।তিনি অনুরোধ রাখলেন।কানায় কানায় ভর্তি মাঠের দর্শককে জানিয়ে দিলেন এই গানটি তিনি আমার অনুরোধে গাইছেন।এই স্মৃতি আজও আমার সঞ্চয়। সারাদিন ধূম আড্ডা শেষে ফিরতি ফ্লাইটে উড়বার সময় আবেগী গলায় বললেন, ' খোশরোজ ভাই, আপনি গান পাগল লোক।দিন যতই যাক না কেন,কথা থাকবে। '

২।ডাক্তারি পাশ করে সদ্য চাকুরিতে নাম লিখিয়েছি। এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে যেয়ে দেখি সুবীরদা' গাইছেন। শেষ গান পরিবেশন করবার আগে তিনি শ্রোতাদের বললেন,' এইবার এক অনুরোধের গান গাইবো যিনি অনুরোধ করেছেন তিনি এখানে আছেন'।অনুষ্ঠান শেষে তিনি সহাস্যে আমাকে অন্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।আগের দেখার সাথে এই দেখার অবকাশে অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। আমার মাথাভর্তি চুল কেঁটে কদমছাঁট চুলে অনেক নিকটাত্মীয় চিনতে বিভ্রান্ত হলেও ফটোজেনিক মেমোরির সুবীরদা সাহসাই চিনে ফেলেছিলেন।

৩।এরপর বিভিন্ন সময় তাঁর সাথে দেখা হয়েছে। একদিন ' বাই অর্ডারে ' তাঁর বাসভবনে আসতে বললেন।গিয়ে দেখি, আমি একাই নিমন্ত্রিত জন।আমার স্ত্রী সন্তানদের না আনবার জন্য বৌদি খুনসুটি করলেন টিফিন ক্যারিয়ার ভর্তি করে তাদের জন্য খাবার বেঁধে দিলেন।

৪।সময়টা ২০১২। একদিন সকালে সুবীরদা' কন্যা মৌকে নিয়ে আমার গরীবালয়ে পদধূলি দিলেন।কথায় বেরিয়ে এলো হ্রিদরোগসহ নানা জটিলতায় তিনি ভুগছেন।বললেন,' আমি উকিল দেখি পাকাচুল দেখে,ডাক্তার দেখি কাঁচাচুল দেখে। 'তাঁর ও তাঁর পরিবার চিকিৎসার সমন্বয়ক হিসেবে আমাকে বেছে নেয়ায় আমার আনন্দ তাঁর কষ্টের ধারায় মুছে গেল।

৫।২০১৮। তার হ্রিদপিন্ডে স্টেন্টিং করা হল। কিডনির অবস্থাও খুব খারাপ। নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়।

৬।গতমাসে ট্রেনে করে তাঁর দেশের বাড়ি শ্রীমংগল থেকে ফিরবার সময় ঘাড়র পিছনে ব্যথা অনুভব করেন। তাঁকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছিল এটি একটি ' এলার্মিং সিমটম।সেদিন রাতেই তাঁকে সন্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর পটাসিয়াম আশংকাজনক মাত্রায় থাকায় ডায়ালাইসিসের দরকার পরে। কিন্তু, দূর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন। লাইফ সাপোর্টের দরকার হল। ৭২ ঘন্টা পেরিয়ে গেল। প্রত্যাশিত আরোগ্যসাধন হল না। সময় থাকতে সদাশয় কত্রপক্ষ তাঁকে সিংগাপুরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।এয়ার এম্বুলেন্স যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উড়তে দেরী করে ফেললো।
সিংগাপুরে চিকিৎসার এক পর্যায়ে চোখ মেলে কন্যা মৌকে দেখে কেঁদে ফেললেন।কিন্তু, তাঁর আবার হার্ট অ্যাটাক হল। মৃত্যু নামক অমোঘ সত্য অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাকে হারিয়ে সুবীর নন্দীকে অন্যভূবনে পাঠিয়ে দিল।

৭।সুবীরদা', দিন চলে গেলো ।কিন্তু বলা না বলা অনেক কথাই থেকে গেলো। অমৃতের দেশে, মংগলালোকে আপনার যাত্রা শুভ হোক।

___________________________


লেখক মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ;
উপ অধিনায়ক ,
আর্মড ফোর্সেস ফুড এন্ড ড্রাগস ল্যাবরটরী ।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়