Ameen Qudir

Published:
2019-04-03 08:39:53 BdST

মোৎসার্ট, আইনস্টাইন থেকে বিল গেটস —অটিজম নিয়েও সেরা



সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
______________________

নিজের জগতে বিভোর। অন্য কোনও সমস্যা না থাকলেও লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে গেলেই সমস্যা। অনেকে আবার মানসিক ভাবে অস্থির, কেউ কেউ ঠিক ভাবে কথাই বলতে পারে না। অনেক বাচ্চা আবার ভয়ানক অমনোযোগী, অস্থির। এসবই হল অটিজম নামক মনের এক সমস্যার লক্ষণ। ২ এপ্রিল পৃথিবী জুড়ে পালন করা হচ্ছে বিশ্ব অটিজম দিবস। সেই অর্থে অটিজিম কোনও একটি নির্দিষ্ট অসুখ নয়। বিভিন্ন আচরণগত সমস্যাকে একসঙ্গে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার, বলছিলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। অটিজিম নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পৃথিবী জুড়ে পালন করা হচ্ছে ওয়ার্ল্ড অটিজম ডে।

অটিজম ব্যাপারটা নিয়ে অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই। আর এই কারণেই অনেক বাবা মা তাঁদের শিশু অটিস্টিক জানলে মনের দুঃখে ভেঙ্গে পড়েন, বলছিলেন অনুত্তমা। কিন্তু অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার শুরুতে ধরা পড়লে এবং দ্রুত বাচ্চাটিকে যথাযথ চিকিৎসা দিলে তার পক্ষে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা মোটেও অসম্ভব নয়। বরং দেখা গিয়েছে, এদের বুদ্ধি অনেক বেশি। প্রচলিত পড়াশোনার পাশাপাশি এদের কিছু বিশেষ দক্ষতা থাকে। অটিস্টিক শিশুদের বাবা মায়েরা জেনে রাখুন অ্যালিস ইন দ্য ওয়ান্ডারল্যান্ড খ্যাত ল্যুই ক্যারল, চার্লস ডারউইন, শিশু সাহিত্যিক হ্যান্স অ্যান্ডারসন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, মোৎসার্ট, আর হাল আমলের বিল গেটস, স্টিভ জোবস সহ অনেক সফল মানুষই অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার নিয়েও খ্যাতির শিখরে পৌঁছেছেন। এমনকি আমাদের আশেপাশেই অনেকে আছেন যারা এই ডিসঅর্ডার নিয়েও দিব্য স্বাভাবিক।

অটিজম মোটেই একটি বংশগত রোগ নয়। সম্পূর্ণ সুস্থ বাবা মায়েরও অটিস্টিক শিশু হতে পারে। অনেক শিশু জন্ম ও স্বভাবগতভাবেই একটু বেশি অস্থির, চঞ্চল, রাগী অথবা জেদি প্রকৃতির হতে পারে। এতেই কিন্তু বোঝা যায় না যে শিশুটি অটিস্টিক। সাধারণত ১৮ মাস থেকে ৩ বছর সময়ের মধ্যেই এই রোগের লক্ষণগুলো দেখা যায়। অটিজম থাকলে একটি শিশুর কিছু আচরণগত সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। সে সামাজিকভাবে মেলামেশা করতে পারে না। শুধু কথা না বলা অটিজমের মধ্যে পড়ে না। তার সাথে তার অন্যান্য আচরণ, সামাজিকতা, অন্য একটি শিশুর সাথে অথবা অসম বয়সী মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারে না। অটিজমে আক্রান্ত অনেক শিশু দেখা, শোনা, গন্ধ, স্বাদ অথবা স্পর্শের প্রতি অতি সংবেদনশীল অথবা প্রতিক্রিয়াহীন থাকতে পারে।

সাধারণত অটিস্টিক শিশুদের প্রতি চারজনে একজনের খিঁচুনি সমস্যা হতে পারে। এদের অনেকেই বার বার একই শব্দ বা বাক্য বলে, অনেকে একই কাজ বার বার করতে থাকা। অটিজমে আক্রান্ত শিশু কথা বলতেও পারে আবার একদম নাও বলতে পারে। আবার কথা বললেও হয়তো ঠিকমতো গুছিয়ে বলতে পারে না। দেখা গেছে যে এই অসুবিধে থাকলে বাচ্চারা নিজেদের চাহিদা বা আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে না, এদের ভাষা, গলার স্বর বা কথার মানে বুঝতে সমস্যা হতে পারে, কারও চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে অসুবিধে হয়। দেখা গেছে যে অটিস্টিক শিশুদের অনেকেরই উন্নত স্মৃতি ও প্রখর দৃষ্টিশক্তি, নিয়মমাফিক এবং গুছিয়ে কাজকর্ম করার অভ্যাস, খুব সহজেই কঠিন জিনিস বুঝতে পারা এবং পছন্দের বিষয়ে সেরা হয়ে ওঠা ও ভাষা শেখার আগ্রহ (যেসব শিশু ঠিকমত কথা বলতে পারে) খুব বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী প্রতি ১৬০ জন শিশুর মধ্যে ১ জনের অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার আছে। জেনে রাখুন ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধকের সাথে অটিজমের কোনও সম্পর্ক নেই।
সাবাধনতা মেনে চলা প্রয়োজন হবু মায়েদেরও।


অটিজিমের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও জানা যায়নি, তবে হবু মায়ের কিছু সাবধানতা মেনে চলা দরকার বলে মনে করেন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়। পরিবারে কারো অটিজম বা মানসিক এবং আচরণগত সমস্যা থাকলে, পরবর্তী সন্তানের ক্ষেত্রে অটিজমের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে পরিকল্পিত গর্ভধারণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় অধিক দুশ্চিন্তা না করা, পর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-

• ৩০ বছরের মধ্যে মা হতে পারলে ভাল হয়।

• সন্তান গর্ভে আসার আগে মাকে রুবেলার ভ্যাকসিন দিতে হবে।

• গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না। বিশেষ করে মাকে যদি নিয়মিত কোনও ওষুধ খেতে হয় তবে তা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞকে জানাতে হবে।

• এপিলেপসি থাকলে বা অন্য কোনও ক্রনিক অসুখ থাকলে তার সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত চেক আপ করাতে ভুলবেন না।

• মায়ের ধূমপান, মদ্যপানের মত কোন অভ্যাস থাকলে অন্তঃসত্ত্বা হবার আগে অবশ্যই তা ছেড়ে দিতে হবে। মন ভাল রাখতে হবে এবং সঠিক পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সুস্থ থাকুন, নীরোগ হোক ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।

সৌজন্য আনন্দ বাজার পত্রিকা

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়