Ameen Qudir

Published:
2019-03-07 08:03:04 BdST

শাহজালালের নিরাপত্তাহীনতা তুলে ধরায় কাঞ্চনকে ধন্যবাদ এবং কিছু নীতিগত প্রশ্ন


 


ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ
___________________________

বাংলাদেশের সবেধন নীলমনি আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর শাহজালালের নিরাপত্তাহীনতা তুলে ধরায় চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনকে ধন্যবাদ জানাই।বিমানবন্দরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢুকে তিনি তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন , শাহজালাল কতটাই নিরাপত্তাহীন। তার আগ্নেয়াস্ত্র স্ক্যানিং মেশিনে নাকি ধরাই পড়ে নি। কাঞ্চন নিজেও বলেন নি, তার আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথা। পরে ভেতরে অস্ত্র থাকার সত্যতা তুলে ধরেন। তিনি এখানে ফিল্মী সিআইডির আন্ডার কভার এজেন্টের কাজ করেছেন।
অনেকের প্রশ্ন ছিল , নিহত বিমান ছিনতাইকারী পলাশ কিভাবে টাইট সিকিউরিটি ভেদ করে ঢুকেছিল।
ইলয়াস কঞ্চনের ঘটনায় প্রমাণ হল,
সেখানে কি ভিআইপি , কি সেলিব্রেটি চিত্রাভিনেতা , কি বিমান ছিনতাই কারী সহজেই বন্দরের স্ক্যানারকে পাত্তা না দিয়ে ঢুকে যেতে পারে।
ধারনা করা যায়, এই ভাবেই নিরাপত্তাহীনতার সুযোগ নিয়েই বিমান ছিনতাইকারী পলাশ সেদিন বিমানবন্দরের নিরাপত্তা চেকিংগুলো পার হয়েছিল। ইলিয়াস প্রকৃতই ফিল্ম হিরো। সম্ভবত একুশে পদক পাওয়া।
ওই পলাশও একজন ভন্ড সেলিব্রেটি বা প্রতারক। ফিল্মের সঙ্গে তারও যোগ ছিল। অভিনয় টভিনয় করত। শিমলা নামের ঢাকাই ফিল্মের একজন নায়িকার সঙ্গে তার স্বামী স্ত্রী জাতীয় সম্পর্কও ছিল বলে পড়েছি।
তার প্রতিভার চুড়ান্ত সাঙ্গ হয়েছে গুলিতে মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে। তার ঘটনাতেও প্রশান হয়েছিল বিমানবন্দর অরক্ষিত। এবার এক নায়কের পিস্তল নিয়ে ঢোকার ঘটনায় আবারও প্রমাণ মজবুত হল।
সরকারের উচিত সুরক্ষা সিকিউরিটি জোরদার করা। এ নিয়ে হেলাফেলা না করা।
আরও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। অভিনেতা হয়ে কাঞ্চন সাহেব এভাবে ঘোষণা না দিয়ে ঢুকে ঠিক করলেন। এটা কি দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয়। অন্য কোন নাগরিক কিংবা ধরা যাক অন্য কোন পেশার সিনিয়রদেশ সেরা লোক এ কাজ করলে কি হেনস্থারই শিকার হতেন । ভাবুন তো ! ডাক্তার হলে তো পলাশের মত পরিনতি চাইতো দেশের নিন্দুকেরা।
আমরা যদি ধরে নিই, কাঞ্চন হিরোগিরি করতে এ কাজ করেছেন। তবেও তার উচিত ছিল, সরকারের দায়িত্বশীল কোন কর্মকর্তা বা সংস্থাকে গোপণে জানিয়ে কাজটি করা। এটা রাষ্ট্রাচার। হেলাফেলার বিষয় নয়।
আর যদি অবহেলার বশে করেন , না জানার কারণে করেন , বা নিজে সেলিব্রেটি নায়ক , সিকিউরিটিরা এমনিতেই ছেড়ে দেবে ভেবে করেন , তবে বাংলাদেশের আইন মান্যকারী একজন গর্বিত নাগরিক হিসেবে বলব , তিনি ঠিক করেন নি। এটা দায়িত্বশীল নয়। রাষ্ট্রাচার নিয়ে হিরোগিরি হয় না। রাষ্ট্রাচার সস্তা ঢাকাই ফিল্ম নয়।

বিমানবন্দরে ইলিয়াস কাঞ্চনের ঢোকার বিবরণ
____________________________

 

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পিস্তল নিয়ে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রথম ধাপের নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে যাওয়ার ঘটনায় একজনকে বরখাস্ত করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচক।

ফজলার রহমান নামের ওই ব্যক্তি মঙ্গলবার দুপুরে ওই ঘটনার সময় সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন বলে বেবিচকের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম রেজাউল করিম জানিয়েছেন।
চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য মঙ্গলবার দুপুরে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে আসেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তখন তার সঙ্গে অস্ত্র ছিল।

শাহজাল বিমানবন্দরে ফ্লাইটে ওঠার আগে অন্তত দুই দফায় নিরাপত্তা তল্লাশি পার হতে হয়। বিমানবন্দরে ঢুকতেই দেহ তল্লাশির পাশাপাশি সঙ্গের ব্যাগ-লাগেজ স্ক্যানারে পরীক্ষা করার নিয়ম।

সন্দেহজনক কিছু ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেন নিরাপত্তা কর্মীরা। সেখান থেকে ওই যাত্রীর ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সুযোগ থাকে না।

কিন্তু ইলিয়াস কাঞ্চন মঙ্গলবার তার লাইসেন্স করা ৯ এমএম পিস্তল ও ১০ রাউন্ড গুলি ব্যাগে নিয়েই বিমানবন্দরের প্রথম নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে যান। সেখানে স্ক্যানে তার অস্ত্র ধরা পড়েনি। দ্বিতীয় ধাপের তল্লাশির সময় তিনি সঙ্গে অস্ত্র থাকার কথা নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জানান।

এ বিষয়ে কথা বলতে ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে মিডিয়ার তরফে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততার কথা বলে পরে যোগাযোগ করতে বলেন।

তবে তাকে উদ্ধৃত করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, প্রথম স্ক্যানার পার হওয়ার সময় সঙ্গে পিস্তল থাকার কথা জানানোর বিষয়টি তার মনে ছিল না। পরের ধাপে তিনি দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী একটি ফ্লাইটে ‘অস্ত্রের’ মুখে পাইলট-ক্রুদেরকে জিম্মি করে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন এক যুবক। ওই ফ্লাইট চট্টগ্রামে অবতরণের পর ইমার্জেন্সি গেট নিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন তিনি। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, সেটি ছিল ‘খেলনা পিস্তল’।

ঢাকা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ফাঁকি দিয়ে পলাশ নামের ওই যুবক কীভাবে বিমানে উঠলেন, তা নিয়ে আলোচনার মধ্যে ইলিয়াস কাঞ্চনের এই ঘটনা নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ইলিয়াস কাঞ্চনের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তাবলেন, “উনি (ইলিয়াস কাঞ্চন) একজন দায়িত্বশীল মানুষ। একজন সেলিব্রেটি। তাই হয়ত তাকে তল্লাশিই করা হয়নি।

তবে বেবিচকের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলছেন, “বিমানবন্দরের স্ক্যানারেই ইলিয়াস কাঞ্চনের অস্ত্র থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে। সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো ধরনের সমস্যা থাকার প্রশ্নই আসে না।”

এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়