Ameen Qudir

Published:
2019-02-08 00:22:30 BdST

ডা.আকাশের আত্মহত্যা, ভালবাসা ও কাবিনের ৩৫ লাখটাকা: মনোচিকিৎসকরা যেমন দেখছেন



ডেস্ক
_______________________

চট্টগ্রামের ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় আলোচনা সারা দেশ। অভিযোগ , নানা সম্পর্কে আসক্ত ছিল স্ত্রী ডা. মিতু। আকাশের কথা: বিয়ের পর স্ত্রীর কথিত অবাধ মেলামেশা আকাশকে কুড়েকুড়ে খাচ্ছিল। তবু আকাশ মিতুকে ডিভোর্স দিতে পারছিল না। কাবিননামার ৩৫ লাখ ছিল প্রধানতম সমস্যা। সেই সঙ্কটের টানাপড়েনে ঝরে পড়ল প্রাণটি।

এ ব্যাপারে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. সরদার আতিক বলেন,
আকাশের ভালবাসা ম্যানিয়া টাইপের ছিলো। যেখানে তীব্র আবেগ বা প্যশন এবং প্রতিশ্রুতি কমিটমেন্ট (এক সাথে থাকতে চাওয়ার সিদ্ধান্ত) ছাড়া আর কিছুই ছিলো না তাদের সম্পর্কে । তাই সে অল্পতেই নিঃস্ব হয়ে যায়। নিঃস্ব একটা মানুষ কতক্ষণ বেঁচে থাকবে? তার ভালবাসার তীব্রতার কারনে মিতুকেও সুখী করতে পারে নি। মিতুর অস্থিরতার এটাও একটা কারন। সেটাকে চঞ্চলতা ভাবা ভুল। সে তার অস্থিরতার জন্যই যৌনতায় ডুবে গিয়েছিলো। আমি বলছি না মিতু নির্দোষ। নীতি নৈতিকতার শিক্ষা মিতুর পরিবারে নেই। প্রতারনার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের মতো ঘটনাও তার পরিবার ঘটিয়েছে। তবে মিতুকে পরিত্যাগ করতে না পারাটা ছিলো পাগলামি।

 

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও সুলেখক ডা. সাঈদ এনাম বলেন,মোস্তফা মোরশেদের প্রচণ্ড মানসিক চাপে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি ভুল করেছেন। আত্মহত্যা কোনো সমাধান হয়। এসব পরিস্থিতিতে সাধারণত পারিবারিকভাবে তিনি সমাধান করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তার কষ্টগুলোর অন্য কারো সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে পারতেন। তখন হয়তো এমটনটি হতো না।

তিনি বলেন, মোস্তফা মোরশেদের দাম্পত্য সমস্যাগুলো এক সময় ভারি বিষণ্ণতায় পরিণত হয়েছে। যা তিনি সহ্য করতে পারেননি। বিষণ্ণতা, একা থাকা। সারাক্ষণ মনমরা হয়ে থাকা, উৎসাহ উদ্যম হারিয়ে ফেলা, ঘুম কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া, রুচি কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া, কাজকর্মে শক্তি না পাওয়া, মনোযোগ হারিয়ে ফেলা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, নিজেকে নিঃস্ব অপাঙক্তেয় মনে করা, অযাচিত অপরাধবোধ ও আত্মহত্যার কথা বলা, ভাবা। এই লক্ষণগুলো টানা দুই সপ্তাহের বেশি থাকলে আমরা তাকে মেজর ডিপ্রেশনের রোগী বলি, এবং তিনি আত্মহত্যার ঝুঁকিতে আছেন বলা যায়।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জানান, যে কোনো সমস্যায় আত্নহত্যা নিয়ন্ত্রণের উপায় হলো কাছের কাউকে তার সমস্যার কথা খুলে বলা। খোলোমেলা আলোচনা করা। কখনোই কোনো সমস্যা নিজের মধ্যে পুষে রাখবেন না। সমস্যা পুষে রাখলে বিষণ্ণতায় পরিণত হবে। এক সময় আপনি আত্মহননের দিকে এগিয়ে যাবেন।

এক গবেষণা দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৩৯ দশমিক ৬ জন আত্মহত্যা করে। ছেলেদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি হলেও বাংলাদেশে এই হার নারীদের মধ্যে বেশি। সাধারণত কম বয়সী মেয়েদের মধ্যে এর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। স্বল্পশিক্ষা, দারিদ্র্য, দাম্পত্য কলহের জন্য অনেকে আত্মহত্যা করে। এ ছাড়াও প্রেম-সম্পর্কিত জটিলতা, আর্থিক অনটন, দীর্ঘস্থায়ী রোগ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব আত্মহত্যার পেছনের অন্যতম কারণ।

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়