Ameen Qudir

Published:
2019-01-05 21:32:15 BdST

শোক এপিটাফএ ক্ষয় নিরাময়ের নয়!এ ক্ষতি পূরণের নয়!



ছবি বিডিনিউজ. ২৪ এর সৌজন্যে

 

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ
___________________________

কোন মুভি দেখলে কখনোই আমি তার আদ্যোপান্ত মনে রাখতে পারিনা।
এটার যেমন সুবিধা আছে তেমনি অসুবিধার বিড়ম্বনাও কম নয়।

অসুবিধাটা হলো আমার দেখা কোন মুভির কোন অঙ্ক বা দৃশ্য বা কাহিনীর কিয়দংশ যখন কেউ জানতে চায় তখন আমি প্রায়ই কিছুই মনে করতে পারিনা, এমন পরিস্থিতিতে বহুবার আমাকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে!

আর সুবিধাটা হলো কোন মুভি একবার দেখার পর যখন দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার দেখি তখনো আমার কাছে মুভিটি একেবারে নতুন মনে হয়!

বছর ছয়/সাত আগে একটা মুভি দেখেছিলাম। মুভিটির নাম খেয়াল নেই, খুব সম্ভবতঃ 'গ্রাভিটি' বা এমনকিছু একটা হতে পারে!
মুভিটির কিছুই এখন আর মনে নেই শুধু একটা দৃশ্যই মনে আছে।
মনে আছে মানে একেবারে চোখে আটকে আছে আমার। এখনো চোখ বন্ধ করলে দৃশ্যটি দেখতে পাই আমি।

কয়েকজন মহাকাশচারী মহাকাশে গিয়েছেন সম্ভবতঃ মহাকাশ সংক্রান্ত বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার জন্য। মহাকাশে তাদের অস্থানকালে তারা দূর্ঘটনার কবলে পতিত হলেন।

এর পরেই সেই দৃশ্যটি যেটি আমার চোখে আজও আটকে আছে।
কয়েকজন মহাকাশচারী অনেকটা হাত ধরাধরি করে একসাথে ছিলেন। একজন মহাকাশচারীর হাতটি হঠাৎ ছুটে গেলো। মহাকাশযানের সাথে সংযুক্ত তার টেইলকর্ডটিও ছিড়ে গেলো।
তিনি একটু একটু করে দূরে সরতে সরতে দূরে বহুদূরে আরো দূরে হারিয়ে গেলেন এক অসীম শূন্যতায়। অসহায় সহযাত্রী মহাকাশচারীরা শতচেষ্টা করেও তাকে আগলে রাখতে পারলেন না!

যিনি হাতছুটে হারিয়ে গেলেন তিনি দিগন্তহীন ও সীমাহীন ঐ মহাকাশে যে কয়েক সেকেণ্ড বেঁচে ছিলেন সেই কয়েক সেকেণ্ডে তার অনুভূতিটা কেমন হয়েছিলো কল্পনা করতে পারেন একবার ?

বিশাল শূন্যতা। আশেপাশে কেউই নেই। একেবারেই নিঃসঙ্গ। এমন কি চিরচেনা পৃথিবীর আলো বাতাশটুকুও সাথে নেই।

পৃথিবীর মাটিতে শত্রুর আঘাতে বা অপঘাতে মৃত্যূ হলেও মৃত্যূর আগে যে কয়েক সেকেণ্ড সময় মানুষ ভাবার জন্য হাতে পায় সেই কয়েক সেকেণ্ডে মৃত্যূপথযাত্রী মানুষটি হয়তো নিজেকে এতোটা নিঃসঙ্গ আর অসহায় ভাবে না যতটা ভেবেছিলো হাতছুটে যাওয়া ঐ নিঃসঙ্গ মহাকাশচারী মানুষটি!

একইরকমভাবে যেকয়েকজন মহাকাশচারীর হাত ছুটে ঐ মহাকাশচারীটি হারিয়ে গিয়েছিলো তাদের অবস্থাটাও একবার কল্পনা করুন।
তারা নিশ্চিৎ জানে পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার আর কোন সুযোগই তাদের নেই, আর কোন রসদই তাদের হাতে নেই! তারা নিজেরাই একেকজন একেজনের রসদ!

যতটুকু সময় তারা বাঁচবেন ততটুকু সময়ই নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রেখে এবং একসাথে থেকেই তাদেরকে সামনের ক্ষণস্থায়ী জীবনটুকুর সার্থকতা খুঁজে নিতে হবে! সেখান থেকে একজন সাথী হারিয়ে যাওয়া মানেই তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রামের একটা বিশাল রসদ হারিয়ে যাওয়া! অসীম নিঃসঙ্গতা আর অসহায়ত্বের দিকে এগিয়ে যাওয়া!

আশরাফ ভাইয়ের মৃত্যূসংবাদটা শোনার পর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সর্বশেষ কাউন্সিলে আশরাফ ভাইয়ের হাত ধরে তোলা জননেত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি বারবার চোখের সামনে ভাসছে আর আমার দেখা ঐ মুভির সেই দৃশ্যটি বারবার আমাকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে!

প্রিয়নেত্রীর হাত ছুটে প্রিয় আশরাফ ভাই হারিয়ে গেলেন অসীম শূন্যতায় যেখান থেকে কেউই আর কখনোই ফিরে আসেননা।
আর
নেত্রী হারালেন তার শেষ ভাইটিকে!
নেত্রী হারালেন তার সর্বশেষ বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে!

এ ক্ষয় নিরাময়ের নয়!
এ ক্ষতি পূরণের নয়!
_____________________________

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ।
সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ,স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক পরিষদ, বিএসএমএমইউ।
Doctor ,t Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University
Former Secretary General বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ শাখা ,দিনাজপুর।
Studied MBBS. at Dinajpur Medical College, Dinajpur

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়