Ameen Qudir

Published:
2019-01-04 22:52:59 BdST

এসিআরএসিআর:বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন-এর মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রসঙ্গে


 

ডা. আজাদ হাসান
____________________________

এটা সর্বজন বিদিত যে, প্রতি বছর বছরের শুরুতে গেলো বছরের কার্যক্রম-এর মূল্যায়ন হিসেবে সকল গ্যাজেটেড কর্মকর্তাদেরকে রুটিনলি এসিআর (ACR) ফর্ম বা "বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন" ফর্ম পূরণ করতে হয়। যদিও উক্ত ফর্ম সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে স্ব-উদ্যোগে সংগ্রহ করতে হয় এবং সংশ্লিষ্ট মহল হলে পূরণ করাতে হয়। তাই শেষ পর্যন্ত এটা যে আর "গোপনীয় প্রতিবেদন"(!) থাকে না, তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট।

আর এই এসিআর ফর্ম --এ মূলতঃ দুটি অংশ থাকে। একটি অংশ:
১) সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা কর্তৃক পূরণ করতে হয় আর অন্য অংশটি:
২) মেডিক্যাল ফিটনেস সংক্রান্ত।

কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ জনগনের ন্যায় অধিকাংশ অফিসারগণও "স্বাস্থ্য সচেতন" নয় বিধায়, এমন কি আমরা যারা "মেডিক্যাল ফিটনেস" সম্পর্কে প্রত্যায়ন করি, তারাও অতীতে বিষয়টির গুরত্ব সম্বন্ধে জনমনে সচেতনতা গড়ে তুলতে পারি নাই বিধায় চর্চার অভাবে বিষয়টা অনেকটা গুরুত্ব হীন হয়ে পড়েছে। কিন্তু এমনটি হওয়া যেমন উচিত নয়, তেমনি তা কাম্যও নয়।

তাই বছরের শুরুতে এসিআর-এর মেডিক্যাল রিপোর্ট সম্পর্কে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করছি।

১) বছরের শুরুতেই প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করতে হবে।
উক্ত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা হবেন যথাক্রমেঃ
ক) মেডিসিন স্পেশালিস্ট - ১ জন।
খ) চক্ষু বিশেষজ্ঞ - ১ জন।
গ) নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ - ১ জন।
ঘ) মেডিক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যান (হাসপাতালের একজন এসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্ট কিংবা ডেপুটি ডাইরেক্ট পদ মর্যাদার কর্মকর্তা) - ১ জন।

যে সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে, তা হলোঃ
ক) CBC.
খ) FBS & 2Hr. Post parandial Bl. Sugar.
গ) Lipid Profile.
ঘ) Liver function test.
ঙ) Kidney function test.
চ) Blood Group.
ছ) ECG
জ) CXR
উল্লেখ্য উল্লেখিত টেষ্ট গুলো যাতে হাসপাতালে হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

২) সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে এবং নির্দিষ্ট সময়ে যাতে মেডিক্যাল বোর্ড-এর সদস্যরা নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত থাকেন তা নিশ্চিত করতে হবে।

৩) এসিআর এর ২য় পৃষ্ঠার স্বাস্থ্য পরীক্ষা সংক্রান্ত পৃষ্ঠাটির আমুল পরিবর্তন করতে হবে। উপরে উল্লেখিত টেস্টের রেজাল্ট সমূহ পূরণ করার জন্য নির্দিষ্ট ছক থাকতে হবে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ভাইটাল সাইন ( পাল্স, ব্লাড প্রেসার ইত্যাদি) রেকর্ড করার জন্য নির্দিষ্ট ছক থাকতে হবে এবং উপরন্তু মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের স্বাক্ষর করার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকতে হবে।

৪) কখন এবং কোথায় কর্মকর্তাগণ মেডিক্যাল ফিসনেস-এর জন্য উপস্থিত হতে হবে, তা বছরের শুরুতেই বিভিন্ন সরকারী অফিসে 'অফিস সার্কুলারে'র মাধ্যমে অবহিত করতে হবে।

৫) প্রসংগত উল্লেখ্য, মেডিক্যাল ফিসনেস এর ক্ষেত্রে ক্যাটাগরী "এ", " বি", "সি"- এই ভাবে ক্লাসিফাই করা হয় কিন্তু এই টার্ম গুলো আমার বিবেচনায় " ভেগ", তাই এই "ক্যাটাগরীক্যাল ক্লাসিফিকেশন" আরো স্পেসিফিক হওয়া আবশ্যক। উদাহরণ স্বরূপ ধরুন কারো "ক্রনিক ডিজিজ" যেমনঃ 'হাইপারটেনশন' কিংবা 'ডায়বেটিস' কিংবা 'এজমা' অথবা "হাইপোথাইরয়ডিজম" আছে এ ক্ষেত্রে উনি কোন ক্যাটাগরী ভুক্ত হবেন। কিংবা কেউ "ক্রনিক ডিজিজ উইথ কম্প্লিকেশন" যেমন "হাইপার টেনশন উইথ ক্রনিক কিডনী ডিজিজ"-এ ভুগছেন, কিংবা "ডায়বেটিস উইথ রেটিনোপ্যাথি" নিয়ে ভুগছেন, তখন ওনার ক্যাগরী কি হবে? এগুলো ক্যাটাগরীক্যালী নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত হওয়া আবশ্যক। কেননা, যিনি সারা বছর ঔষধের উপর নির্ভরশীল হবেন তার বার্ষিক মেডিক্যাল রিপোর্ট আর যিনি ঔষধ ব্যতিরেকে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন তার বার্ষিক মেডিক্যাল রিপোর্ট কখনো এক হতে পারে না, এবং সেটা কাম্যও নয়। যে কোনো প্রমোশনের পূর্ব শর্ত অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে মেডিক্যাল গ্রাউন্ডেও ফিট হতে হবে। মেডিল্যাক ফিটনেস ব্যতীত কারো প্রমোশন দেওয়া উচিত নয়। কেননা, শারীরিক সুস্থতা ব্যতীত দেশ ও জাতি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা হতে প্রত্যাশিত সেবা লাভে বঞ্চিত হবে।

প্রসংগত উল্লেখ্য, এসিআর এর মেডিক্যাল চেক আপ্ -এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে উপযুক্ত মেডিক্যাল অফিসার/বিশেষজ্ঞের/বোর্ডের সম্মুখে স্ব-শরীরে হাজির হতে হবে, এটাই নিয়ম। পিয়ন দিয়ে এসিআর পাঠানো যেমন "অসৌজন্য" মূলক আচরণ তেমনি সরকারী চাকুরীর বিধি মোতাবেক "শিষ্টাচার" বহির্ভূত।

পক্ষান্তরে কোনো কর্মকর্তার স্বশরীরে উপস্থিতি ব্যতিরেকে বাৎসরিক মেডিক্যাল ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়া "প্রফেশনাল ম্যালপ্রাকটিস"।

বাৎসরিক মেডিক্যাল ফিটনেস সার্টিফিকেট বা প্রত্যায়ন পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে "মেডিক্যাল বোর্ড" কর্তৃক প্রত্যায়িত "মেডিক্যাল রিপোর্ট" চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। আর আলোচ্য বিষয়ে প্রস্তাবিত সংস্কার মূলক পদক্ষেপ সমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুবা প্রতি বছরই আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হতে হবে।

সুতরাং সম্মানিত চিকিৎসকদের প্রতি আহবান করবো, নিজেদের আত্মসম্মান বজায় রাখার স্বার্থে যে কোনো ধরনের অনিয়ম হতে নিজেকে বিরত রাখুন, পেশার সম্মান সমুন্নত রাখতে সবাই সম্মিলিতভাবে সচেষ্ট হোন।



ডাঃ আজাদ হাসান।
সিওমেক
২১তম ব্যাচ।

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়