Ameen Qudir

Published:
2019-01-02 20:20:23 BdST

জনস্বার্থনিজকে  একজন নির্লোভ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলুন


 

 

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমেদ
______________________________

 

#মূল্যবোধের_২০১৯

প্রচলিত অর্থে আমি জ্ঞানী নই।অতি সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত। একা থাকি ৩ বছর ২ মাস ময়মনসিংহ সেনানিবাসের মেসে পদ্মা নামক কক্ষে।পরিবারের সুরক্ষায় ৫৫ থেকে ৫৭ এ তিন বছর ইট পাথরের বন্দী দেয়ালের বা ছাদের সাথে একাই সময় কাটাই।অভ্যস্থ হয়ে গেছি। উপলব্ধি করি কোন কিছুই জীবনের জন্য অপরিহার্য নয়।মানুষ বা সমপর্ক বা সম্পদ।ধীরে ধীরে মৃত্যু নামক অমোঘ নিয়তির দিকে এগুচ্ছি।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আমার প্রিয় প্রাংগন।আমি এর পরিচালক। ১ লা নভেম্বর ২০১৫ থেকে আজ পর্যন্ত কঠিন পরিশ্রম আল্লাহ বৃথা যেতে দেয় নি।কিছুটা হলেও ময়মনসিংহের অসাধারণ গরীব মানুষ গুলোর ভালবাসা দোয়া পেয়েছি।বদলে গেছে সব কিছু যেমন টি একটি হাসপাতালের জন্য হওয়া উচিৎ। আরো ভাল করার অবকাশ আছে।

এখানে থাকা,হাসপাতাল নিয়ে নিত্য নুতন স্বপ্ন দেখেই আমার সময় চলে যায়।কেন এটা সম্ভব হয়েছে।আমি আমার কাজ টা দায়িত্ব নিয়ে সঠিকভাবে করেছি,অন্যদের দোষারোপ করে দায়িত্ব এড়াতে চাই নি।ঘন ঘন ঢাকা যাই নি।মন্ত্রনালয় ও ডিজি অফিসে শুধু যোগদানের দিন গিয়েছিলাম। অনেক বাধা,বিপত্তি,অসন্মান সহ্য করেছি।চুড়ান্ত ভাবে নাগরিক বৃন্দ এবং ময়মনসিংহ বিভাগ বাসী নির্দ্বিধায় সমর্থন দিয়েছেন।এটাই ছিল আমার কাজ করার শক্তি। এরাই অসাধারণ জনগণ। আমি জনগণের উপর বিশ্বাস রেখেছি।উনারা প্রতিদান দিয়েছেন রাস্তায় স্বতস্ফূর্ত ভাবে নেমে।

আমি কেন এমন হলাম।পারিবারিক মূল্যবোধ এর কারনে। আমার বাবার কাছ থেকেই শিখেছি ভদ্রতা, সুআচরণ,দম্ভ না করা।তিনি শিক্ষা দিয়েছেন আমি যদি জীবনে ভাল করতে চাই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।তিনি পেশায় ডাক্তার (MBBS) ছিলেন।তিনি নিজ এলাকায় অনেক কিছু করেছেন পৈএিক সম্পত্তি বিক্রি করে।তিনি ৭০ থেকে ৭৫ পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন।জাতির জনকের মৃত্যুর পর উনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না।উনি গাড়ি কিনতে পারেন নি।আমদের ঘরে খাট আসে ১৯৭৭ এ।সাদাকালো টিভি আসে ১৯৮২ সালে।উনি অধিকাংশ রোগী ফ্রি দেখতেন ২০ টাকা ভিজিট নিতেন।উনি কখনও আমাদের কে অপব্যায়ী হতে শিখান নি।তার জানাযায় লক্ষাদিক লোক হয়েছিল।আমি এখনও বাবার পরিচয়ে চলি।

আমার বাবা বলতেন কারো অনুকম্পা চাইবে না।যা চাইবে নিয়মের ভিতর থেকেই চাইবে।

আমি দীর্ঘ ৩০ বছর বাবার আদেশ মেনে চলছি।সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের আনুগত্য করেছি এবং করব এবং বৈধ আদেশ পালন করে যাব।

আমি বংগভবনে যাই নি,ঢাকা সি এম এইচ এর কমান্ডান্ট থাকাকালীন সময়ে।বসুন্ধরা সিটিতে আজো যাই নি, যমুনা ফিউচার পার্কে যাই নি।

আমি আগেই বলেছি জীবনে অপরিহার্য বলে কিছু নেই। আমি জীবনে একজন ভাল প্রাক্টিসিং মুসুলমান হতে পারি নি।বাবার মত সৎ হতে পারি নি।কিন্তু একটা জিনিস সারাটা জীবন করেছি তা হলো অসহায় মানুষদের ভালবেসেছি এবং তাদের বিপদে পাশে থাকার চেস্টা করেছি।প্রশাসন চালাতে গিয়ে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করেছি।তাদের কাছে আমি অপ্রিয়। আপনি কখনি সবার প্রিয় হতে পারেন না।হলে আপনার মধ্যে সমস্যা আছে।

আমি সবচেয়ে বেশি ভালবাসি বাংলাদেশ কে এবং এর পতাকাকে। শ্রদ্ধা করি তাদের কে যারা কোন প্রাপ্তির আশা ছাড়াই ১৯৭১ সালে আমাদের কে একটা স্বাধীন ভুখন্ড দিয়েছেন।

জীবনে সফলতা ও শান্তি তখনি পাবেন যখন সৃস্টিকর্তার উপর পূর্ন ভরসা করবেন এবং অসহায় মানুষদের জন্য কোন প্রাপ্তির আশা ছাড়াই আল্লাহর সন্তুস্টির জন্য কিছু করবেন।

শেষ কথা মানুষকে খারাপ ভাষায় গালি দিবেন না।পাপ কে ঘৃনা করুন।কারো ব্যক্তিজীবন নিয়ে রুচিহীন মন্তব্য করবেন না।এটা অনেক বড় পাপ।নিজকে বাংলাদেশের একজন নির্লোভ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলুন।বাংলাদেশের ইতিহাস জেনে বুঝে পড়ুন।
_________________________


ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমেদ
সুলেখক। পরিচালক, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়