Ameen Qudir

Published:
2018-12-20 04:21:41 BdST

স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের দৃষ্টিভঙ্গি চাণক্যের মতই প্রাচীন


 


ডা. রেজাউল করীম
_____________________________

স্বাস্থ্যের অধিকার নিয়ে বাজারি কাগজ দুদিন ধরে উত্তর সম্পাদকীয় লিখছেন। গবেষকরা নানা মত বিনিময় করছেন। এ সব সুলক্ষণের কথা আগে ভাবাও যেত না। এই সব ছিল সাধারণের নাগালের বাইরের আলোচনা। কেবল কিছু গবেষক, চিন্তাবিদ, স্বাস্থ্যের অধিকার আন্দোলনের কর্মীর বাইরে এ বিষয়ে চিন্তা ভাবনা তেমন হত না। আজ ভাবতে ভাল লাগছে যে, এই আলোচনা সাধারণ মানুষকে আকর্ষণ করছে।
এ দেশে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার, দুতরফেই স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবনা চিন্তায় বিস্তর গলদ আছে। বিধানসভা বা লোকসভায় স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা মোট সময়ের শতকরা দুভাগ ও হয় না। এই রাজ্যে তো বহুদিন এমনকি স্বাস্থ্য বাজেট ও আলোচনা হয় না। গত বছর (১৭-১৮) স্বাস্থ্য বাজেটে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল মোট গোটা দশেক শব্দ। বাজেট পাশ হয়েছে গিলোটিনে।
এই অনীহা আকস্মিক নয়। স্বাস্থ্য কোন এককেন্দ্রীক ব্যবস্থাপত্র নয়, জীবনধারণের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় সমস্ত কিছু এর সাথে জড়িত।স্বাস্থ্যের অধিকার থাকা মানে মানুষের বেঁচে সব উপাদানের প্রতি সাংবিধানিক অধিকার যা আমাদের রাষ্ট্র শক্তি হতে দিতে চায় না। স্বাধীনতা, মৈত্রী, গনতন্ত্র, সুস্থ অসাম্প্রদায়িক চেতনা, কথা বলার অধিকার, তথ্যের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, পুষ্টির অধিকার-এসবের সাথে আসে চিকিৎসার অধিকার। সরকার চিকিৎসার অধিকার নিয়ে একটু চিন্তিত, কারন তা সাময়িক উপশম করে মানুষের ক্ষোভের আগুন প্রশমিত করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা চলতে সাহায্য করে। তাছাড়া, তার একটি ব্যবসায়ীক মূল্য আছে যা রাষ্ট্রীয় শক্তির মদতদাতা পুঁজিপতিদের সাহায্য করে।
চিকিৎসক চাণক্যের সময় ও ছিলেন, এখন ও থাকবেন। তাঁরা সমাজের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অঙ্গ, প্রকৃত সমাজবন্ধু। বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে পাল্লা দিয়ে তাদের প্রয়োজনীয়তা বাড়বে। স্বাস্থ্যের অধিকার নিয়ে চিকিৎসকরা মাথা ঘামাবেন কেন বলে অনেকে মনে করেন। চিকিৎসকরা অতি অবশ্যই এই অধিকার নিয়ে মাথা ঘামাবেন, অন্যদের থেকে বেশি করেই ঘামাবেন। এই অধিকার থাকলে তাঁরা আরো উন্নত চিকিৎসা করতে যে পরিকাঠামো দরকার তার জন্য একদিকে যেমন সরকারকে বাধ্য করতে পারবেন, অন্যদিকে তেমনি অধীত বিদ্যাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারবেন। তাঁদের অর্থনৈতিকভাবে কোন ক্ষতি হওয়ার ও কোন আশঙ্কার কারণ নেই।

আমাদের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের যেমন প্রায়শই চাণক্যের সাথে তুলনা করা হয়, স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে ও তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি চাণক্যের মতই প্রাচীন। তাঁর মত পণ্ডিত ব্যক্তি বসন্তের জন্য শ্মশানে গাই-দোহনের পরামর্শ দিয়েছেন (বসন্ত হওয়ার আগে করলে ও যদি গাইয়ের সক্রিয় কাউপক্স থাকে আলাদা কথা) আর এখন আমরা গোমুত্র ও গোময় নিয়ে চিন্তা করছি। কেউ অবৈজ্ঞানিক কিছু চাপিয়ে দিলে তার জন্য সোচ্চার প্রতিবাদ করা দরকার। আমাদের জন্য তো বটেই ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ও তা দরকারি।

আজ উনিশ তারিখ প্রতি বছর এমনি নানা বিষয়ে আলোচনা হয় "স্বাস্থ্যের বৃত্তে" পত্রিকার বক্তৃতামালায়। এ বছর ও হবে। আলোচনা করবেন ডাঃ বিষান বাসু ও ডাঃ দয়াল বন্ধু মজুমদার। মহাবোধি সোসাইটি হলে বিকেল চারটেই। প্রবেশ অবাধ। স্বাস্থ্যের অধিকার নিয়ে সারা বছর ধরে কাজ করে চলেছেন স্বাস্থ্য আন্দোলনের অক্লান্ত সৈনিক ডাঃ পুণ্যব্রত গুন, ডাঃ সিদ্ধার্থ গুপ্ত, ডাঃ জয়ন্ত দাশ প্রমুখেরা। তাঁদের উদ্যোগে এই আলোচনা হয়।

এই আলোচনা ও জনসচেতনতা সারা রাজ্য ছড়িয়ে পড়ুক। আমরা চাই এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা যেন কোন শিশু অপুষ্ট না হয়, সবাই লেখাপড়া করতে পারে, দুবেলা দুমুঠো খেতে পায়। অসুস্থ হলে যেন হাসপাতালে শয্যা পান, চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত না হন।
____________________________

ডা. রেজাউল করীম । পশ্চিম বঙ্গের প্রখ্যাত চিকিৎসক নেতা, সংগঠক। কল্যাণচিন্তক।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়