Ameen Qudir

Published:
2018-12-04 21:14:04 BdST

অপ্রমানিত অভিযোগে শিক্ষকদের বুলিং, অপমান : লজ্জা থেকে বাঁচতে চেয়েছে অরিত্রী


 

 

সুব্রত নন্দী
_____________________________

ছোটবেলায় যাঁদের শিক্ষাগুরু হিসেবে পেয়েছি তারা পিতৃস্নেহে আমাদের বুকে টেনে নিতেন, আবার কড়া শাসনে নিয়মের মধ্যেও রাখতেন। তাঁদের সেই যোগ্যতা ছিল আমাদের মনোজগতের খবর রাখার যে আমরা কি চাই, কি ভাবছি ইত্যাদি । কিন্তু এমন শিক্ষকদের সংখ্যা খুবই কম। হাইস্কুলে প্রিয় সারওয়ার স্যার আমাকে লাইব্রেরি থেকে ব্যাগ ভরে বই বের করে দিতেন তাতে আমার জ্ঞানের চোখ প্রসস্ত হয়েছে, আবার এমন কিছু শিক্ষক ছিলেন যাদের সাক্ষাৎ যম বলে মনে হতো। তারা ক্লাশে পড়ানোর চাইতে বরং বেতে তেল দিয়ে রাখতেন কি করে আচ্ছা মতো পিটিয়ে ছাত্রদের পিঠ লাল করে দেওয়া যায়। আমি একবার দেখেছিলাম আমার এক বন্ধুর দুর্ঘটনায় পিতৃ বিয়োগ হয়েছে কিছুদিন পর সে ক্লাসে পড়া মুখস্থ বলতে পারেনি বিধায় কিছু জিজ্ঞেস না করেই গরুপেটা শুরু করে দিলেন! আমরা লেখা পড়ার পাশাপাশি হিংস্রতার শিক্ষা টাও কিছু শিক্ষকের কাছেই শিখে নেই। শুধু শুধু মারের ভয়ে ক্লাশ থেকে কত ছেলে যে অকালে ঝরে যায় এর হিসেব কেউ কি রাখেন। অথচ স্কুল পালিয়ে হারিয়ে যাওয়া ছেলেটিও লেখা পড়া শিখে অনেক বড় কিছু হতে পারত। দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষক মানেই তার হাতে থাকবে একটা তেল মাখানো চকচকে বেত।
অথচ পাশ্চাত্যের স্কুলগুলোর দিকে তাকান দেখবেন এখানে এক একজন শিক্ষককে হতে হবে ছাত্র ছাত্রীদের এক একজন কেয়ার গিভার। তারা হাতে কলমে শ্রেণীকক্ষে তাদের লেসন যেমন দেন পাশাপাশি লক্ষ্য রাখেন আলাদা আলাদা প্রত্যেকটি শিশু কিশোরদের মনস্তত্ত্বের দিকে। অনেক ছাত্রছাত্রীদের পরিবারে বাবা মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ আছে বিবাদ কলহ আছে।

সুতরাং ক্লাশে এসে ছাত্রটি বিমর্ষ থাকে প্রতিদিন। সেখানে ঐ শিক্ষকটি মুহূর্তে হয়ে যান একজন মমতাময়ী মা কিংবা বাবা। ক্লাশে এখানেও ছাত্র ছাত্রীদের আচরণগত বিকৃতি থাকে, অপরাধ প্রবনতা থাকে। তখন শিক্ষক অবশ্যই অভিভাবকদের স্কুলে ডেকে পাঠান একটা নোট দিয়ে । সবাই একসাথে বসে চলে কাউন্সিলিং সেখানে কোনমতেই কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা থাকা তো দুরের কথা অভিযুক্তই করা হয় না। আমার বাচ্চাদের চোখে সমস্যা আছে সেটা নোট দিয়ে জানিয়েছেন তাদের শ্রেণী শিক্ষক । এটাও তাদের দায়িত্ব । কোন ছাত্রদের ব্যক্তিগত ব্যাপার কখনোই অন্য ছাত্রদের কাছে প্রকাশ করা হয় না এমনকি সে কত নম্বর পেয়েছে এটাও। প্রত্যেকটি মানুষ তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য আলাদা সুতরাং অমুকে এত ভাল ছাত্র তুমি কেন না এসব তুলনা করে কথা বলা এখানে চড়মভাবে ঘৃনা করা হয়। সবাইকে ডাক্তার ইন্জিনিয়ার হবার জন্য গাঁদা গাঁদা বই হজম করার বঙ্গ পাক ভারতীয় লড়াই দেখলে এরা হাসেন। এখিনে ডাক্তারের ছেলে প্লাম্বার হলে সমস্যা কি? যার যার তার তার । এখানে বাপের পরিচয়ে ছেলে মেয়ে বড় নয় আবার আমার ছেলে অমুক তমুক এসবের কোন গুরুত্ব বা পাত্তাই এরা দেয় না ।


অরিত্রীর দুর্ভাগ্য সে দক্ষিণ এশীয় একটি দেশে জন্ম গ্রহণ করেছিল যেখানে পণ্য নকল হয়, নকল মানুষ আছে নকল ,ডাক্তার আছে, নকল রাজনীতি আছে, নকল কাগজ পত্রে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট হলেও কোন শাস্তির ব্যবস্থা নাই। কিন্তু পরীক্ষায় নকলের অপ্রমানিত অজুহাতে শিক্ষার্থীকে বুলিং করা যায়, তাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া যায়, শিক্ষার্থীর বাবা মাকে তার সামনেই অপমান অপদস্থ করা যায়। অরিত্রী এসবের প্রতিবাদ করতে পারত কিন্তু সে আত্মহত্যার পথ ধরে জীবন থেকে পালিয়ে লজ্জার হাত থেকে বাঁচতে চেয়েছে। এটা পলায়নপরতা, ভীরুতা । অন্ধকারের অচলায়তনে বাঁচতে হলে রুখে দাঁড়াতে হয়। অরিত্রী বন্ধুদের সেটা বুঝতে হবে।
____________________________

সুব্রত নন্দী । সুলেখক।
প্রবাসী সাংবাদিক।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়