Ameen Qudir

Published:
2018-11-27 23:09:17 BdST

আমেরিকায় এক টুকরো কবরের মাটি পেতে যত লড়াই :কবরের আজাব ও অন্যান্য




ডা. সাহাবদ্দিন খান সুজন
______________________________

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলাম সেই আশির দশকে। চোখে ছিল বিশ্ব মোড়ল আমেরিকায় থাকার স্বপ্ন। সারা পৃথিবীর জান্নাত স্বর্গ এই দেশ। প্রথমে লড়াই করেছি এখানে মেডিকেল প্রাকটিশনার হতে। সে কঠিন লড়াই। এর চেয়ে পুল সিরাত পার হওয়া সহজ। তারপর অনেক পানি গড়াল। পেশার পুল সিরাত পার হয়ে ডাক্তারি জীবনে সফল হয়েছি। টাকা পয়সা থুড়ি ডলার কামাই করেছি অনেক। বাড়ি গাড়ি করেছি কষ্ট করে , পরিশ্রম করে। জীবনের প্রথম ভাগে এসেছিলাম বলে লাভবান হয়েছি। যারা মধ্যবয়েসে আসেন , তাদের কষ্ট দেখে খুবই খারাপ লাগে।
ডাক্তারির পুল সিরাত পার হওয়ার পর এখন আরেক পুল সিরাত পার হওয়ার অপেক্ষায়। এখন আমাদের বয়সী কম্যুনিটির বেশীর ভাগই ধর্মে কর্মে ঝুঁকে পড়েছি। যৌবনে ধর্মকর্মের মধ্যে ছিলাম না। কেউ কেউ মদ্যপান করত নিয়মিত। তারাও এখন লম্বা দাঁড়ি রেখে মুসল্লি হয়েছি। এটাই জীবনের বৈচিত্র। এখন কমবেশী সবাই কবরের কথা চিন্তা করি। ভাবি কোতায় কবর হবে। কেমন কবর আজাব হবে।
এই ইহিুদি নাসারার দেশে কবর আজাব বেশী হবে কিনা, সে দুশ্চিন্তায় অস্থির অনেকে। আমাদের কবরে কেউ জিয়ারত করতে যাবে কিনা, সেও মহা চিন্তা। ছেলে মেয়ে বেশীর ভাগই মার্কিন জনস্রোতে মিশে গেছে। আমরা না ঘরকা না ঘাটকা। বন্ধুদের অনেকে দেশে জমি জমা কিনেছে। অনেকে দেশেই কবরের বন্দোবস্ত করেছে।
আমি বা আমার স্ত্রী তেমন কিছু করি নাই। আমাদের কি হবে। কবরের ভয়ে অস্থির থাকি। আজাব দেশে থাকলে কম হত কিনা, সে প্রশ্নও করে অনেক বন্ধু।
কোথায় কবর হবে , তা নিয়ে দুশ্চন্তা কম নয়। কবরস্থান পাওয়া তত সহজ নয়। যদি মার্কিন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় নিজের পরকাল ছেড়ে দিই , তাদের সুব্যবস্থা আছে। তারা তাদের মত ব্যবস্থা করবে। কিন্তু সেই ব্যবস্থাপনা আমাদের অনেকেরই মনের মত পছন্দ নয়।
এ নিয়ে খুব সুন্দর একটি লেখা লিখেছেন মার্কিন নাগরিক বাংলাদেশী প্রকৌশলী নেছার আহম্মেদ।

·
“আমেরিকার কবর”/ প্রকৌশলী নেছার আহম্মেদ

আমেরিকাতে আমি কিছুদিন আমাদের কবরেরস্থানের দায়িত্বে ছিলাম যখন আমি মসজিদের সাধারণ সম্পাদক (General Secretary) ছিলাম। কবরগুলো মুসলমানদের দানের পয়সায় কিনা, তাই গরীবদের জন্য Free আর বিত্তবানদের জন্য মসজিদ কমিটি একটা টাকা নির্ধারণ করেছেন। খৃষ্টানদের কবরের স্থানের এক কোনায় ৪০ টা কবর কিনে ছিলো অনেক আগে, পরে আরও ৪০ টা নুতন কবরেরস্থান কিনার সময় দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা আগের ৪০টার অব্যাবহারিত কবরগুলো বিক্রি করি। আমিও দুইটা কবরেরস্থান কিনলাম (C-5 and C-6), একটা আমার জন্য আর একটা আমার বেগমসাহেবার জন্য আর এখানেই আমার ঘটনা শুরু।

আমি জানিনা কোথায় আল্লাহ্ আমার মৃত্যু ঠিক করে রেখেছেন আর কোথায় আমার কবর হবে, তবে কবর-দুটো কিনার পরে আমার মধ্যে এক আমুল পরিবর্তন। যখনই ওখানে কবর জেয়ারাত করতে যাই, সাধারনত ফজরের নামাযের পরে, ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে যায়। আমার মরনের পর আমার ছেলেরা তারপরে হয়ত আমার নাতিরা এসে দোয়া পড়বে তারপর হয়ত আর কেউ আমাকে মনে রাখবে না। এখানে হাজার হাজার বছর থাকতে হবে হাসরের মাঠের ডাক আসা পর্যন্ত, যদি আল্লাহ্‌ মাফ না করেন, তাহলে কি হবে?

কবরের আজাব যে ভয়াবহ। আমার মরনের পর আমার ডক্টরেট ডিগ্রী, ধনসম্পদ, বৌ, ছেলে-মায়ে কোন কাজে আসবে না। দুনিয়াতে অনেক কিছু করার স্বপ্ন দেখতাম, এখন সব বাদ। নিয়ত করেছিলাম, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে পড়ব বাকী সব পরে। কিন্তু বিভিন্ন কারনে সবসময় তাও পারিনা, তবে নিজেকে চেষ্টা করছি দুনিয়ার সব অপকর্ম থেকে সরিয়ে রাখতে সেখানেও অনেক বাধা। সুদ থেকে শুরু করে Internet, movie, সমাজের অনেক কিছু এখন norm হয়ে গিয়েছে, এর থেকে কিভাবে উত্তরন পাব, জানিনা।

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন “হে ঈমান্দারগন! আল্লাহ্‌কে যেমন ভাবে ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় কর। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ কর না।“ – সুরাহ আল-ই-ইমরান, আয়াত ১০২।

“ … Do not die except in a state of Muslim” আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তায়ালা warning দিচ্ছেন, আমি কিভাবে এটা full-fill করব? মৃত্যুর সময় আমার state of mind-তো আমার control-এ নাও থাকতে পারে। কি হবে জানি না !!!! আসলে আল্লাহ্‌ মাফ না করলে আমাদের কোন উপায় নাই।

আমাদের এক বাংলাদেশী কাজিভাই মারা গেলেন আমাদের (Huntsville, AL) শহর থেকে ৫০ মাইল দূরে, Florence, AL. ওই শহরে ওনারাই একমাত্র বাংলাদেশী পরিবার, আর ছিল ভারতীয় এক মুসলমান ডাক্তার, ডাঃ আহমেদ, অত্যন্ত অমায়িক মানুষ। আমাকে খবর দিলেন, ভাবী অনেক কান্নাকাটি করছেন, উনি ভাইকে খৃষ্টানদের কবরের স্থানে কবর দিতে চান না, উনি আমাদের শহরের কবরের স্থানে কবর দিতে চান। আমরা দলে বলে গিয়ে লাশ নিয়ে আসলাম। উনি আমাদের জাতীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর আত্মীয়।

আমি কোনোদিন লাশ ধোয়াইনি, ডাঃ আহমেদও তাই, আমরা দুজন যোগালির কাজ নিলাম. ডঃ মোস্তফা আবুশাগুর (Libya’s First Elected Prime Minister) এবং Br. আল-হাদী (Libya’s run away Minister from Coln. Gaddafi’s cabinet) আসলেন, আর ওনাকে ধোয়ালেন, আর ওনারা দুজন একসাথে সোভহানাল্লাহ বলে উঠলেন। ওনাকে এত সুন্দর লাগছিলো, শুধু তাই নয়, আমরা একটা দারুন খুসবু পাচ্ছিলাম, এটা আমার জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা।

পরে ডঃ মোস্তফা আবুশাগুরকে জিজ্ঞাস করলাম, উনি বললেন আল্লাহ্‌ ই একমাত্র বিচারক, তবে মানুষ মোমেন বান্দার অনেক symptom দেখতে পায়।

আল্লাহার কাছে দোয়া করছি, আল্লাহ্‌ যেন আমার মৃত্যুর সময় আমার মুখে কালেমা তুলে দেন, আর সৌভাগ্যবানদের দলভুক্ত করেন। - আমিন।

__________________________

ডা. সাহাবদ্দিন খান সুজন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চিকিৎসক।
দ্র: নিবন্ধের লেখকগন ছবি প্রকাশে অনিচ্ছুক বিধায় প্রকাশ হল না।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়