Ameen Qudir

Published:
2018-10-19 22:44:50 BdST

বাংলাদেশের ব্যান্ডসঙ্গীতের মহারাজ আইয়ুব বাচ্চুর মহাপ্রয়ানে ডাক্তার লেখকদের স্মৃতিশ্রদ্ধার্ঘ্য -৪ মারা যাওয়ার আগের রংপুরের কনসার্ট : ভিডিও ক্লিপ দেখলে বুক ধ্বক করে উঠবেই


একটি কনসার্টের ফাইল ছবি


ডা. মোশাররফ হোসেন পলাশ
_____________________________

আইয়ুব বাচ্চু মারা যাওয়ার জাস্ট একদিন আগেই রংপুরে কনসার্ট করে এসেছেন। সেই কনসার্টের লাইভ ভিডিও দেখলে যে কারো বুকে ধ্বক্ করে উঠবে। প্রচন্ড কষ্ট ও ব্যথা নিয়ে কথা বলছেন। নিচে কমেন্টে সে প্রোগ্রামের ভিডিও লিংক আছে। যেখানে এরকম কষ্ট নিয়ে ঠিকমতো কথা বলাটাই দুষ্কর, সেখানে বেশ কয়েকটা গানও গেয়েছেন ভঙ্গা ভাঙ্গা দমে।

আমরা জানতাম প্রায় দশ বছর আগে ২০০৯ সালে উনার হার্টে ব্লক ধরা পরেছিল। সেসময় উনাকে সিঙ্গাপুরে পর্যন্ত নিতে হয়েছিল।হার্টে তিনটা রিং পরানো হয়েছিল। গতকাল স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকের বিবৃতিতে বলা হলো উনি কিছুদিন পরপরই এ হাসপাতালে নিয়মিত হার্টের চিকিৎসা নিতেন। উনার হার্টের ফাংশন ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ (Ejection Fraction 30%)!!!!.যেখানে একজন সুস্থ মানুষের হার্টের ফাংশন মিনিমাম 70% থাকা দরকার। এ ধরনের অত্যন্ত সিভিয়ার গ্রেডের হার্টের রুগীদের দৈনন্দিন কাজেই হাজারটা নিষেধাজ্ঞা থাকে। তাদের হার্ট ফেইল করে বিধায় ফুসফুসে পানি জমে যায়। তাই তারা মিনিমাম শারীরিক প্ররিশ্রমের কোন কাজ করতে পারেন না, এক নিঃশ্বাসে কোন সেনটেন্ছ শেষ করতে পারেন না।

তবু তাকে কনসার্ট করে যেতে হয়েছে মৃত্যুর আগেরদিন পর্যন্ত। তার সৃষ্টিকর্মকে আমরা অন্ধের মতো ভালোবেসেছি ঠিকই,কিন্তু সেই সৃষ্টিকর্মের রয়্যালটির কথা কখোনো চিন্তা করিনি। বাচ্চু ভাই যে দিনের পর দিন মঞ্চে উঠে গান করে গেলেন, "তা কি শিল্পের জন্য না জীবিকার প্রয়োজনে?"

শিল্প চর্চার জন্য, শিল্পের প্রসারের জন্য কতটুকু কি করেছে এ সমাজ? তাই হয়ত এ ঘুনে ধরা সমাজের প্রতি প্রচন্ড জিদ ও কষ্ট নিয়ে চলে গেলেন তিনি। সে জিদ থেকেই কিছুটা অনিয়ন্ত্রিত লাইফ লিড করে গেছেন মনে হয়। পাইরেসির অত্যাচারে নব্বইয়ের দশকের সেই লিজেন্ডরা কেউই পরে আর কোন এলবামই বের করেননি।এই সমাজে লেখক, কবি, গায়ক, শিল্পীরা কি করে বেঁচে থাকবেন তাহলে!

কবি বলেছিলেন ‘অভাব যখন দরজা দিয়ে আসে,ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়।’ কিন্তু তবুও তিনি পালাননি। কারন তিনি শুধু কষ্ট পেতেই যে ভালোবাসেন, তাইতো বারেবারে ছুটে এসেছেন। শুধুমাত্র গতকালই যতবার তাঁর গান বেজেছে, তার রয়্যালটি ও যদি পেতেন, তাহলেও হয়ত হারাতাম না তাকে। তাঁর গানের ভাষাই তাঁকে তাড়া করে ফিরেছে বার বার…

“হাসতে দেখ গাইতে দেখ
অনেক কথায় মুখর আমায় দেখ
দেখো না কেউ হাসির শেষে নীরবতা।।
বোঝে না কেউ তো চিনলো না
বোঝে না আমার কি ব্যাথা
চেনার মত কেউ চিনলো না
এই আমাকে…….

আমার সুরের বুকে কান্না লুকিয়ে থাকে
আমার চোখের কোনে নোনা ছবি আকে
আমার গল্প শুনে হয় আলোকিত উৎসব
গল্প শেষে আমি আঁধারের মতো নীরব
নিজেকে ঢেলে আমি কত সুখ দিলাম…..

ওপারে ভালো থাকুন মহানায়ক।

শেষ করছি আমার কাছের বড়ভাই আব্দুল্যাহ আল মাসুম এর কথা দিয়ে,
“সৃজনশীল মানুষদের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।সৃষ্টি করতে মগ্ন থাকবে নাকি পেট চালাবে? গতকালই কিংবদন্তি এবি'র সৃষ্টি - যত বেজেছে- সে টাকা সে বা তার উত্তরাধিকার কি পাবেন?
অথচ কোটি কোটি শ্রোতা কিন্তু ঠিকই টাকা খরচ করেই শুনেছেন। এ টাকা কোথাও না কোথাও তো যায় নাকি?
সৃজনশীলতা কে বাঁচান -”

ভিডিও লিংক :https://www.facebook.com/100002188442219/posts/1905480949534835/

 

__________________

 

ডা. মোশাররফ হোসেন পলাশ

Life Member , Swadhinata Chikitsak Parishad-Swachip
Publications and Public Relations Secretary, Bangladesh Medical Association,Naogaon branch.
MD resident anaesthesiology , Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University-BSMMU

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়