Ameen Qudir

Published:
2018-09-10 15:47:20 BdST

অভাবের দিনগুলি শেষ পর্ব।দুই কাকার টাকায় আমি ও ভাইবোন চলতাম: টিউশনির আয় মায়ের জন্য পাঠাতাম


লেখকের ছবি

 

 

ডা. জোবায়ের আহমেদ
____________________________

একটা মন খারাপের স্মৃতি থেকে লেখাটি লিখেছিলাম।
আমাদের জীবনের বিষাদময় নিষ্ঠুরতার কিছু খন্ড চিত্র দেখে আপ্নারা অনেকেই অশ্রুজল এ সিক্ত হয়েছেন,আপনাদের আবেগ ও হৃদয় এর হাহাকার জানিয়ে আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন যা আগামীর পথ চলায় সাহস যোগাবে।।

প্রাদোষে প্রাকৃতজন বই টা যারা পড়েছেন সেখানে একটা প্রশ্ন করা হয় ' এটা কি মানুষ এর জীবন??সুখ নেই, স্বস্থি নেই।এই জীবন কি যাপন করা যায়??
আমাদের জীবন টা তেমন ই ছিল।।
এত করুণ ও নিষ্ঠুর যা কল্পনার অতীত।
আমার নানী মা কে সাহস দিতেন,ধৈর্য্য রাখো, একদিন সুখ আসবে।।
নানী একবার উনার বাবার বাড়ি শ্রীরামপুর গেলে আম্মার মামী রা বল্ল, এই যে আপনার ছোট মেয়ে এত কষ্টে আছে,আপনার বড়লোক মেয়েকে অনুরোধ করতে পারেন না ওকে সাহায্য করতে?
নানী উত্তর দিয়েছিলেন,যতক্ষন বান্দার ঠ্যাং এ ধরব,ততক্ষন আল্লাহ এর কাছে বলব।
একদিন আল্লাহ কে আমার কথা শুনতে হবে।
আল্লাহ রেস্পন্স করেছেন নানীর দোয়ায়।।
নানী কে ১৯৯৪ থেকে ২০১৭ আমাদের কাছেই ছিলেন।
মাঝে কিছুদিন ঢাকায় মামা ও খালার বাসায়।
নানী ছিল মায়ের সাহস এর বাতিঘর।।

সব অবস্থায় আমার বাবা মা শুধু আল্লাহ এর উপর ভরসা করেছিলেন।
আল্লাহ এমন দুইজন লোক কে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পাঠিয়েছেন যা আমরা কল্পনাও করিনি।

#একজন আমার প্রিয় বুয়েট এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. দেলোয়ার হোসেন কাকা।
উনি আমার মা এর সংগ্রাম কে সম্মান দিয়ে বোন বলে ডেকেছেন।মায়া ও ভালবাসায় আমাদের জীবন উনি ভরিয়ে দিয়েছেন।।
উনি আমার এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।।

উনি আমাদের রক্তের কেহ না।কিন্ত আমাদের হৃদয় মাঝখানেই উনি বসবাস করেন।
উনি যখন হাসি দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরতেন পিঠ চাপড়ে সাহস দিতেন তখন সব ভুলে যেতাম সব কষ্ট।
এত ব্যস্ততার মাঝেও মেডিকেল এ পড়াকালীন উনি প্রতি মাসে আমার কাছে চিঠি লিখতেন।
আজো সেই চিঠি গুলো যত্নে রেখে দিয়েছি।
এখনো মন খারাপ এর রাতে এগুলো পড়ি।।

# ২০০৪ সাল।
মেডিকাল ভর্তি পরীক্ষার পর প্রথম কল টা আম্মাকে দেই।আমাদের মোবাইল ছিল না।
ছোট চাচীর মোবাইল এ কল দিয়ে আম্মাকে জানাই।
আমি ঢাকায় বসে বুঝতে পেরেছি মা এর অশ্রুঝরা।
দ্বিতীয় কল দিয়েছিলাম ড. দেলোয়ার কাকা কে।
উনি আমাকে উনার বুয়েট এর অফিস এ ডাকলেন।
তারপর আমার শিক্ষার সব দায়িত্ব উনি নিয়ে নিলেন
পাশাপাশি আমার পরিবারে জন্য উনি সহযোগিতার
হাত বাড়ালেন।আমাদের সব চাওয়া পাওয়ার কেন্দ্র হয়ে উঠলেন কাকা।।

#২০০৫আম্মার পিত্তথলি তে পাথর। প্রায়শই ব্যাথা হয়,সাথে Dysfunctional Uterine Bleeding.
একসাথে দুইটা অপারেশন দরকার।
আম্মা অপারেশন এর কথা শুনার পর থেকেই মানুষিক ভাবে ভেঙে পড়লেন।আমি তখন মেডিকেল এর সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি।
আমি গেলাম দেলোয়ার কাকার বাসায়।
উনি আমাকে দেখে হাসি দিলেন,তারপর সব শুনে বুয়েট এর Teachers Associations থেকে ১ লক্ষ টাকা লোন তুলে আমাকে দিলেন।
সেই অবদান ভুলার নয়।
আমাদের পরিবারের সারা বছর এর চাঊল উনি কিনে দিয়েছেন।

ড. দেলোয়ার কাকার একদিন আমাকে বললেন
জীবনে সুখী হতে চাও,কারো কাছে কিচ্ছু প্রত্যাশা করবেনা।
এটা জীবনে সুখী হওয়ার সুত্র।।
প্রতিদান প্রত্যাশা না করেই উনি আমাদের জীবন মায়ায় ভরিয়ে দিয়েছেন।

অফুরন্ত ভালবাসা ও সম্মান প্রিয় ড. দেলোয়ার কাকার জন্য।।

#শামীম কাকার কথাঃ
২০০১ সালঃ
এস এস সি পাশ করেছি।কলেজ এ কিভাবে ভর্তি হব এই চিন্তায় মগ্ন। একরাশ হতাশা ঘিরে ছিল।
একদিন পড়ন্ত বিকেল বেলা আব্বা আমাকে নিয়ে গেলেন শামীম কাকার কাছে।তখন কাকা গ্রামে এসেছেন।উনি আব্বার চাচাত ভাই।
SQ GROUP এর চেয়ারম্যান কাকা আব্বার সব কথা শুনলেন।
সাথে দাদী বসা ছিলেন।সব শুনে হতবিহ্বল হয়ে গেলেন উনারা।আমরা কেন কষ্টে থাকব এটা উনারা কুল কিনারা করতে পারলেন না?
দাদী তদন্ত করলেন।মরহুম হাবিব উল্লাহ দাদাভাই ও আমাদের ইউনিয়ন এর সাবেক চেয়ারম্যান আব্বার চাচা মরহুম খালেক দাদাভাই উনাদের বিস্তারিত জানালেন।।

একদিন দাদি ঢাকা থেকে খবর পাঠালেন, আব্বা যেন শামীম কাকার সাথে দেখা করে।
আব্বা গেলেন।কাকা আমাকে আড্ডা কলেজ এ ভর্তি হতে বল্লেন,২০ হাজার টাকা পরিবারে দিলেন।
আমি আড্ডা কলেজ এ পড়েছি,দুই বছর হোস্টেল এ থাকা ও খাওয়া, প্রাইভেট পড়ার স্যারদের সম্মানি, কলেজ এর বেতন, ফরম ফিলাপের জন্য আমার ১ টাকাও লাগেনি।সব কাকার অবদান।
আব্বা ২০০৪ এ আবার কুয়েত গেলেন,প্লেন এর টিকেট ভাড়ার জন্য কাকা ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।

ড. দেলোয়ার কাকার পাশাপাশি শামীম কাকাও আমাকে মেডিকেল এর ৫ বছর ফিন্যান্সিয়াল সাপোর্ট দিয়েছেন।

আমি এক কাকার টাকায় নিজে চলতাম,আরেকজন এর টাকায় ভাইবোন কে সাপোর্ট দিতাম।
নিজে কোচিং ও টিউশন এর টাকা মা এর জন্য পাঠাতাম।।
এই দুইজন মানুষ এর কাছে আমরা চির ঋনী।।

#ডাক্তার হওয়ার পর ২০১০ সাল থেকে পুরো পরিবারের দায়িত্ব আমি নিজ কাঁধে নিয়ে নেই।
ভাইবোন গুলো লেখাপড়া করে অনেক দূর আগালো।
আমার মায়ের দুই মেয়ে মাস্টার্স এ পড়ে।
সোহাগ PhD প্রোগ্রাম এর প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত।
গোল্ডেন সিস্টার আফসানা কলেজ এ।
আমার বড় বোনের টুইন বাচ্চা ইরফান কুমিল্লা জিলা স্কুল এ ক্লাস সেভেন এ, আর ইন্তিহা মর্ডান স্কুলে।
বাবা কে হজ্জ করিয়ে আনলাম গতবছর।

২০১১ সাল থেকে আমরা কুমিল্লা শহরে থাকি।

#আমি একজন সেল্ফ এম্পলয়েড ডাক্তার।
নিজের প্রজেক্ট ডাঃ জোবায়ের মেডিকেয়ার সেন্টার এ কাজ করছি।।
অনেক ভাল আছি।বিসিএস আমাকে আকর্ষন করতে পারেনি।।

#যেতে হবে বহু দূর।।

Everyone wants happiness
No one wants pain
But You can't make a rainbow
Without a little rain

আমাকে যদি প্রশ্ন করেন " সুখ কি??
আমার উত্তর মা-বাবার মুখের হাসি।।

____________________________________

ডা. জোবায়ের আহমেদ ।সুলেখক। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ৪২ ব্যাচ।
এবং
Executive Director at Dr.Jobayer Medicare Center
former Resident Medical officer at ড.এম এ রহমান হসপিটাল
Former Intern Doctor at Sylhet MAG Osmani Medical College Hospital
Studied MBBS at Sylhet MAG Osmani Medical College

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়