Ameen Qudir

Published:
2018-09-04 19:31:56 BdST

নিরীহ প্রাণী ডাক্তার: লাল্লু পাল্লু পাড়ার বখাটে সবাই তাদের মেরে যায় : একই হাল কলকাতায়ও


ঘুসিবাজ ওসি পুলক দত্ত। ডাক্তার মেরে বিতর্কের ঝড় তাকে ঘিরে।

 

ইন্টারনেট ____________________


আপনি কি পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক? তা হলে পুলিশের হাতে চিকিত্‍সকের নিগ্রহ দেখে আপনি নিশ্চয়ই আশ্চর্য হননি। এ রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়ম ভাঙাকেই নিয়মে পর্যবসিত করছেন যাঁরা, পুলিশ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। অতএব চিকিত্‍সক নিগ্রহ রুখতে রাজ্য সরকার যখন তত্‍পর, তখন রাজ্য সরকারেরই 'সুশৃঙ্খল' বাহিনীর কোনও আধিকারিকের নামই ওই রকম কার্যকলাপে জড়ালে বিস্মিত হওয়া একেবারেই উচিত নয়।

হাসপাতালে রোগীর মৃত্যু হলে চিকিত্‍সকদের উপরে হামলার অভিযোগ বার বার উঠে আসছে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে বার বার। চিকিত্‍সায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেও হামলা হচ্ছে। রোগীর চিকিত্‍সায় বিন্দুমাত্র গাফিলতি না রাখা চিকিত্‍সকের কর্তব্য। চিকিত্‍সকের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বা কর্তব্যে অবহেলার কারণে রোগীর মৃত্যু হওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। সে রকম ঘটলে চিকিত্‍সকের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা উচিত। কিন্তু পদক্ষেপ তো করতে হবে আইনানুগ ভঙ্গিতেই। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার কোনও ছাড়পত্র তো নেই। আর ছাড়পত্রটা যে নেই, সে কথা জনসাধারণকে বোঝানোর ভার পুলিশকেই দিয়েছে সরকার। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, পুলিশই ঠিক মতো জানে না যে, চিকিত্‍সকের গায়ে যখন-তখন হাত তোলার ছাড়পত্রটা কাউকে দেওয়া হয়নি অথবা পুলিশ সম্ভবত ভেবেছে, পুলিশের জন্য সব কিছুরই ছাড়পত্র রয়েছে।

পুলিশ যে নিজেকে নানান ছাড়পত্রের অধিকারী ভাবে, তা নিশ্চয়ই দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকেই জেনে যান আপনি। পথে-ঘাটে, রাস্তার মোড়ে, ট্র্যাফিক সিগন্যালে, হাটে-বাজারে পুলিশের অনিয়মের ভূরি ভূরি উদাহরণের মুখোমুখি আপনাকে যে হতে হয় রোজ, সে কথা আপনার চেয়ে ভাল কে-ই বা জানে।

সিগন্যাল রেড। সব গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু দেখা গেল একটা পুলিশের গাড়িই সর্বাগ্রে নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে সিগন্যাল ভেঙে বেরিয়ে গেল। দেখে স্পষ্ট বোঝা যায়, কোনও আপত্‍কালীন কর্তব্যের ডাক ছিল না। শুধুমাত্র ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ ছিল এবং সে সুযোগ কাজে লাগানো হল।

একই ভাবে নো পার্কিং-এ গাড়ি রাখা, নো এন্ট্রি অগ্রাহ্য করে ঢুকে পড়া, কারও অভিযোগ সাগ্রহে নেওয়া, কারও অভিযোগ নিতে না চাওয়া, কারও ক্ষেত্রে কঠোর হওয়া, কারও ক্ষেত্রে গলে জল হয়ে যাওয়া- পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তর। এ বার চিকিত্‍সক নিগ্রহের অভিযোগটাও উঠে গেল।

এক দিকে রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশ, চিকিত্‍সক নিগ্রহের বিরুদ্ধে পুলিশকে সচেতনতা তৈরি করতে হবে, চিকিত্‍সকদের 'সমাজবন্ধু' ভাবমূর্তি তুলে ধরতে হবে। অন্য দিকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্‍সা করাতে গিয়ে থানার ওসি নিজেই চিকিত্‍সকের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়াচ্ছেন, তার পরে চিকিত্‍সককে মারছেন। অভিযোগ অন্তত তেমনই।

চিকিত্‍সক নিগ্রহের অভিযোগ অবশ্য কলকাতা পুলিশ অস্বীকার করছে। মারধর করা হয়নি, চিকিত্‍সককে শুধুমাত্র ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল, সে ক্ষেত্রে পুলিশের কাছে প্রশ্ন, কথা কাটাকাটি হলে সজোরে ধাক্কা দেওয়া কি পুলিশের অধিকারের মধ্যে পড়ে? পুলিশের তরফ থেকে এখন প্রায় সমঝোতার প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্ত আধিকারিকের বিরুদ্ধে যাতে লিখিত অভিযোগ দায়ের না হয়, প্রথমে তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি অভিযোগ না করেন, তা হলে নিগৃহীত চিকিত্‍সকের বিরুদ্ধে পুলিশের যে অভিযোগ আছে, তা দায়ের করা থেকে পুলিশ বিরত থাকবে এবং সমঝোতার পথে হাঁটবে- এমন ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে। তবে নিগৃহীত চিকিত্‍সক বা অন্য চিকিত্‍সকরা পুলিশের ছকে দেওয়া পথে হাঁটার আগ্রহই দেখাননি।

অভিযুক্ত ওসি গ্রেফতার না হলে লাগাতার কর্মবিরতির হুমকি ডাক্তারদের

চিকিত্‍সকদের একাধিক সংগঠন এই হেনস্থার তীব্র প্রতিবাদ শুরু করেছে। অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না হলে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও তাঁরা দিয়েছেন। পুলিশ তার পরেও অভিযুক্ত আধিকারিককে আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যে অভিযোগ ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে উঠেছে, বর্তমান শারীরিক অবস্থায় সে রকমটা করা ওই আধিকারিকের পক্ষে সম্ভব ছিল কি না, সোশ্যাল মিডিয়ায় পুলিশ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অর্থাত্‍ নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া পেজকে কাজে লাগিয়েও অভিযুক্ত আধিকারিকের নির্দোষ ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা পুলিশের তরফ থেকে হচ্ছে। এও কিন্তু আইনভঙ্গেরই সামিল। পুলিশ যদি আইন ভেঙে থাকে, তাহলে পুলিশেরও শাস্তি প্রাপ্য। চিকিত্‍সক আইন ভেঙে থাকলে, শাস্তি চিকিত্‍সকের প্রাপ্য। আপনি অভিযোগ করবেন না, কারণ করে খুব লাভ হবে না, আর আপনি অভিযোগ করলে, আমরাও পাল্টা করতে পারি- এরকম একটা বার্তা পুলিশের তরফে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। পুলিশ আধিকারিকদের কথাবার্তায় বা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তেমনটাই প্রতীত হয়। এই সমঝোতার পথে হাঁটার নির্দেশ পুলিশকে কে দিল? যদি অভিযোগকারী চিকিত্‍সকের তরফে কোনও ভুল বা অন্যায় থেকে থাকে, তাহলে ওই চিকিত্‍সকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা পুলিশের কর্তব্য। সেই কর্তব্য থেকে পুলিশ পিছিয়ে আসছে কেন? ওই চিকিত্‍সক যদি সত্যি কোনও অপরাধ করে থাকেন, তাহলে পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। ব্যবস্থা না নিয়ে সমঝোতা করতে চাওয়াও তো অনৈতিক। পুলিশ সেই অনৈতিক কাজটাই করছে না তো? প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে নানা মহলেই।

বিষয়টি শুধু পুলিশ আর চিকিত্‍সকদের টানাপড়েনে সীমাবদ্ধ নেই আর। রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসকদের নজরে এসেছে বিষয়টি নিশ্চয়ই। সেই মহল থেকেই এ বার জরুরি হস্তক্ষেপটা হওয়া উচিত। পুলিশ যে কোনও অনৈতিক কাজ করে পার পেয়ে যাবে, এমন বার্তা জনমানসে যেতে দেওয়া উচিত হবে না। সে কথা মাথায় রেখেই সর্বোচ্চ প্রশাসনিক মহল থেকে হস্তক্ষেপ হোক। বাংলার সাধারণ নাগরিকরাও কিন্তু এখন ঘটনাপ্রবাহের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। অতএব, পদক্ষেপটা আস্থাবর্ধক হওয়া জরুরি।

কলকাতার মিডিয়ার সৌজন্যে।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়