Ameen Qudir

Published:
2018-09-04 18:37:51 BdST

কলকাতায় আবারও হামলার শিকার চিকিৎসক : বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক


 


ডা.রেজাউল করীম
_______________________________

আজকের মিছিল ও ডেপুটেশনে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা প্রমান করে যে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি চিকিৎসকদের প্রতি হিংসার বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে যে সদর্থক ব্যবস্থা গ্রহন করছিলেন, পুলিশ কর্তারা তা ভালভাবে নিচ্ছেন না। মুখ্যমন্ত্রীর সাথে যুক্ত মঞ্চের আলোচনায় স্থির হয়েছিল যে চিকিৎসক হামলায় পুলিশ মেডিকেয়ার ২০০৯ বহাল করবে, আক্রান্ত চিকিৎসক এফ আই আর দায়ের করবেন না, পুলিশ সর্বত্র চিকিৎসক হামলার বিরুদ্ধে প্রচার করবে। তার ফল মিলছিল ধীরে হলেও সদর্থক ভাবে। পুলিশের ভিডিও প্রশংসা কুড়িয়েছিল, তাদের ফ্লেক্স-ব্যানারের প্রচার ও সুন্দর তর তর করে এগোচ্ছিল। হামলার ঘটনায় আক্রমণকারী দুচারজনের হাজতবাস ও হয়েছে। সংঘাতের যদিও বিরাম ছিল না, কিন্তু অন্তত: পুলিশের প্রতি ভরসা ধীরে ধীরে তৈরী হচ্ছিল। এমন সময় ঘটল পুলক দত্তের হামলার ঘটনা যা মুখ্যমন্ত্রীর সব প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দিয়ে দিল।
পুলক শুধু শ্রীনিবাসকে মেরেছে বললে ঘটনাটা লঘু করে দেখা হয়। শোনা যায়, তার সঙ্গীসাথীরা শ্রীনিবাসকে অপহরণের হুমকি দেয়। পরের ঘটনা আরো রোমহর্ষক- পুলিশ প্রথমে ফেসবুকে আসামীর হয়ে সাফাই দেয়, তারপর একজন বেশ বড় দরের অফিসার তাকে সমর্থন করে বিবৃতি দেয় ও বার বার তাকে পুলিশ অফিসে ডেকে মিটমাটের জন্য চাপ দেওয়া হতে থাকে। এই ঘটনায় প্রমান হয় যে আসামীকে বাঁচানোর জন্য বাহীনির মতৈক্য হয়েছে। এই ঘটনায় চিকিৎসকদের মনোবল ভয়ানক ধাক্কা খায়। আমরা মনে করি এই ঘটনা কেবলমাত্র চিকিৎসকদের উপর আঘাত তাই নয়, তা মুখ্যমন্ত্রীর শুভ উদ্যোগেরও পরিপন্থী। একজন আক্রমণকারীকে বাঁচানোর এই উদ্যোগ নি:সন্দেহে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায় ও তার ফলে মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তির উপর ও আঘাত। থানার বড়বাবু সরকারের প্রতিভূ হয়ে আইনের শাসন বলবৎ করার কথা। তাহলে, আসামীকে গ্রেপ্তার করা কেন হল না, কেন বার বার আক্রান্তকে ডেকে পাঠানো হচ্ছে, কেন ঘটনার তদন্ত হল না, এসব প্রশ্নের উত্তর পুলিশকে দিতে হবে। আমরা পুলিশকে আরো ৪৮ ঘন্টা সময় দিতে চাই। যদি তার মধ্যেও আসামীকে মেডিকেয়ার ২০০৯ অনুসারে গ্রেপ্তার করে মযাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করা না হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন করতে বাধ্য হব।
সি এম আর আই কর্তৃপক্ষের আচরন ও মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত SOP র পরিপন্থী। হাসপাতালে হামলা হলে এফ আই আর কর্তৃপক্ষ করবে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষনাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে তারা যে অসংবেদনশীলতা দেখিয়েছে, অচিরেই তার ফল ভোগ করতে হবে। তারা একদিকে তাদের কনিষ্ঠ চিকিৎসককে বাঁচাতে পারেন নি, এফ আই আর করেন নি আর এখন এই ছেলেটিকে নানাভাবে উত্যক্ত করে পুলিশের কথা শোনার জন্য বাধ্য করছে।

এই অবস্থায়, আমরা বৃহত্তর আন্দোলন করতে বাধ্য হচ্ছি। সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালের রুটিন ওয়ার্ক, আউটডোর ও ব্যক্তিগত কনসালটেশন ক্লিনিকের কাজ ৫ই সেপ্টেম্বর দুপুর ১২ টা থেকে ১টা পর্যন্ত প্রতীকি বন্ধ রাখার আবেদন করতে বাধ্য হচ্ছি।কোন ইমারজেন্সি, অপারেশন ও অন্তর্বিভাগের কাজ বন্ধ হবে না। মুখ্যমন্ত্রী আশা করি কোন সদর্থক ব্যবস্থা গ্রহন করবেন ও প্রতিবাদী আউটডোর বয়কটের কোন দরকার হবে না। মানুষের প্রতি আমরা দায়বদ্ধ কিন্তু চিকিৎসা পরিষেবা দান করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরীর প্রাথমিক পদক্ষেপ হল সন্ত্রাসমুক্ত স্বাস্থ্য ক্ষেত্র।সরকারী আইন যেন সবার ওপর সমভাবে প্রযোজ্য হয়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও আইনরক্ষকদের। তা যতক্ষন করা না হবে চিকিৎসকরা তাদের প্রতিবাদ জারী রাখবেন, প্রয়োজনে পূর্ণ কর্মবিরতির করতেও পিছপা হবে না। সেই তিক্ততা তৈরী হওয়ার আগেই আশা করি রাজ্যের অভিভাবক হিসেবে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

____________________________

ডা.রেজাউল করীম । পশ্চিম বাংলার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক ও অগ্রগন্য বুদ্ধিজীবি।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়