Ameen Qudir

Published:
2018-09-03 19:31:46 BdST

অল্প লাভের লোভ দেখিয়ে বড় ক্ষতি করবার এক গল্প


 

 

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
______________________________

১।ধূমপানের ক্ষতির কথা কে না জানে? সিগারেটের গায়েই লেখা থাকে ' ধূমপানে বিষপান '। সম্প্রতি জাপান বাংলাদেশের বিড়ি শিল্পে বিপুল পরিমানের অর্থ বিনিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জাপানীরা জাত ব্যবসায়ী জাতি। তারা বিপননের সাইন্স এবং আর্ট দুইই খুব ভাল করে জানে। আমাদের দেশে গাড়িসহ বিভিন্ন খাতে জাপান দীর্ঘদিন ধরে প্রায় একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে।

২।বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের অন্যান্য সময়ের তুলনায় যথেষ্ট ভাল পরিবেশ বিরাজ করছে। হরতাল - অগ্নি সংযোগ, ভাংচুরের সংস্কৃতি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তাই নিত্য - নতুন বিদেশী বিনিয়োগ যোগ হচ্ছে। এতে দেশের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি,অর্থনীতির চাকারই শুধু অগ্রগতি হচ্ছে না সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের ইতিবাচক ইমেজকেও আরো উজ্জ্বল করছে।

৩।বিড়িতে জাপানের বিনিয়োগে তাদের লাভ কি? উত্তর একটিই --- মুনাফা অর্জন করা। দুষ্ট লোকেরা বলতে পারে, অসুবিধে কি, বাংলাদেশও তো এই লাভের অংশ পাবে। আসলে কি তাই? ব্যবসার স্বাভাবিক অংশ হিসেবে জাপানীরা বাংলাদেশে বিড়ি শিল্পের বাজার বড় থেকে আরো বড় করতে চাইবে। বিপননের বাহারী কলা - কৌশলের ছলনার মায়াজালে প্রলুব্ধ হয়ে অনেক অধূমপায়ী বিড়ি টানা শুরু করবে। যে দিনে দশটি শলাকা বিড়ি ফুঁকতো সে এখন অন্তত পনেরটি টানবে। নারী - কিশোর ধূমপায়ী বেড়ে যাবে। বিড়ি শিল্পের উপর নির্ভর পেশাজীবী বেড়ে যাবে,তাদের জীবনীশক্তি হ্রাস পাবে। যে জমিতে ধান- গম - সবজির মত খাদ্যপণ্য চাষ হত সেখানে বাড়তি মুনাফার লোভে তামাকের মত বিষাক্ত পণ্য চাষ হবে।

৫।উদ্ধত ধূমপায়ীরা তার শিশু সন্তান- গর্ভবতী স্ত্রী -পরিজনের সামনে অবলীলায় বিড়ি টানবে। ' প্যাসিভ স্মোকিং' এর শিকার হবে লাখো লাখো অধূমপায়ী।উচ্চরক্তচাপ,মানসিক উদ্বেগ, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ অসংখ্য মরণঘাতী রোগে আক্রান্ত হবে ধূমপায়ী এবং প্যাসিভ স্মোকিং এর শিকার লাখো লাখো নিরাপরাধ মানব সন্তান।যৌন অক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় সামাজিক অবক্ষয়ও বেড়ে যাওয়ার আশংকাকে উড়িয়ে দেয়া যাবে না।বিড়িখোরেরা বাড়তি খরচ জোটাতে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে । ধূমপানের ফলে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসা সেবায় স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদী যে অর্থ ব্যয় হবে সেটি বাড়তি বিক্রিলব্ধ বিড়ি শিল্পের কাছে নগদে নগদ পাওয়া আপাত বেশী ট্যাক্সের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী।

৬।যখন আমরা মাদকের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি তখন নেশাসৃষ্টি কারী আরেকটি উপাদানের ব্যবসার ' জবাইকরা খাসী' হিসেবে আমাদের আত্মহননের কফিনে আরেকটি পেরেক ঠোকা হবে।

৩।আমরা বিদেশী বিনিয়োগকে অনুৎসাহিত করি না। খাদ্য - শিক্ষা - স্বাস্থ্য - বাসস্থানের মত বিষয়গুলিতে দেশপ্রেমিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ - এ সেটি করা যেতে পারে।অন্তত উঁচুমানের মানসিক - শারীরিক -নৈতিকগুণ সম্পন্ন পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভেবে অল্প লাভের লোভে আরো বিড়ি ফুঁকাবার অপচেষ্টাকে বিবেকবান কোন মানুষই সমর্থন করতে পারে না।
___________________________

লেখক মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ;
উপ অধিনায়ক ,
আর্মড ফোর্সেস ফুড এন্ড ড্রাগস ল্যাবরটরী ।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়