Ameen Qudir
Published:2018-08-30 15:49:19 BdST
মহেশ, গফুর, আমিনা, শরৎচন্দ্র
মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
___________________________
অমর কথা শিল্পী শরৎচন্দ্র পালিত গরুর প্রতি অসাধারণ মমত্ব ফুটিয়ে তুলেছিলেন।দরিদ্র গফুর, তার মেয়ে আমিনার প্রায় একমাত্র সম্বল গরু' মহেশ'।একমুঠো ঘাস জোগাতেই গফুরকেও অভুক্ত থাকতে হত।
২।আমরা মাংস কিনে খাই। গোটা পশু বছরে একবারই কিনি। সীমিত সাধ্যের কারণে ব্যাপক দামদর করে অল্প মূল্যে পশু কেনার চেষ্টা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।বিক্রেতাকে দাম ধরিয়ে দিয়ে পশু বাসায় আনবার পর ঠকলাম না সস্তা হল তার যোগ - বিয়োগে ব্যস্ত হয়ে পরি ।
৩।প্রত্যেক বছর দাম বাড়ছে বলে গরীব বিক্রেতার শাপ- শাপান্ত করি।কয়েক বছর আগেও কোরবানির গরুর বিশাল যোগান আসতো প্রতিবেশী দেশ থেকে। গত কয়েক বছর গো- হত্যা নিয়ে ব্যাপক হৈ - চৈ এর পর গরু সেখান থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ায় সাপ্লাই -ডিমান্ড রেশিও টালমাটাল হয়ে ডিমান্ড আকাশে উঠে। ফলে হুট করেই গরুর দাম বেড়ে যায়। এই ধাক্কার উপজাত হিসেবে খাসির দামও বাড়ে।
৪।এই বাড়তি মূল্য কি গরীব চাষীর পকেটে যায়? মহাজনী চক্রবৃদ্ধি সুদের বন্ধকী প্যাচে অনেক সময় সদ্য জন্ম নেয়া পশুও বাঁধা পরে। মহাজন লোভী চোখে পশুটি বড় হওয়ার দিন গুনতে থাকে। গরীব চাষী মায়া -মমতায়, নিজে খেয়ে না খেয়ে পশুকে খাওয়ায়।রোদে পুড়ে,বৃষ্টিতে ভিজে খড়-বিচালী জোগাড় করে। ঝড় বাদলায় নিজের ঘর ছেড়ে দিয়েও পশুকে সেবাযত্ন করে। দীর্ঘদিনে ঘরের পশু যখন প্রায় সন্তানের মত হয়ে যায় তখন মহাজন বিজয়ীর বেশে পশুটিকে রশিতে টানতে টানতে হাটে নিয়ে যায়।
৫।গফুরদের কাছে যদিওবা দুএকটি পশু থেকেও যায় সে সরাসরি ক্রেতার কাছে বিক্রি করতে পারে না। টাউট - বাটপাড়, মধ্যসত্ত্ব ভোগী,গডফাদার এদের তুষ্ট করতে আবার ধার- কর্জের মধ্যে পরে যায়।প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে রাজধানীর হাটে আনতে ঘাটে ঘাটে ঠকবাজরা নানা উসিলায় তাদের প্রায় সর্বস্বান্ত করে। ভালবাসার গরুটি লাখটাকায় বিক্রি হলে তার কাছে লাভের সামান্যই অংশই আসে।কাগজের কটি টাকা পকেটে আসবার আগেই গফুরের সন্তান অপত্য স্নেহের অশ্রুজলে মহেষ ততক্ষণে ভিজে গেছে।
________________________________
লেখক মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ;
উপ অধিনায়ক ,
আর্মড ফোর্সেস ফুড এন্ড ড্রাগস ল্যাবরটরী ।
আপনার মতামত দিন: