Ameen Qudir

Published:
2016-12-12 01:57:14 BdST

মানব রহস্য : সৃষ্টিও করে, ধ্বংসও করে


 

 
 

 

ডা. আশীষ দেবনাথ
_______________________________

পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের পর ধাপে ধাপে সে নিজের শ্রেষ্টত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রথমে মানুষ প্রাণীজগতের উপর নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্টা করেছে। তারপর প্রকৃতির উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় সদা অব্যহত। প্রাণীজগতে মানুষই একমাত্র জীব- যে সৃষ্টি করে, আবার ধ্বংসও করে। মানুষ নিজের প্রয়োজনে সমাজবদ্ধ হয়ে যেমন সভ্যতা সৃষ্টি করেছে, তেমনি নিজেদের মাঝে গোষ্টি, ধর্ম, বর্নভেদে বিভাজিত হয়ে ক্ষয়িষ্ণুতার পথও ধরছে। অদ্ভুত বৈপরিত্যে ভরা এহেন মানব চরিত্রের জন্য দায়ী আদতে তার উন্নত মস্তিষ্কই (extraordinary brain)। নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে প্রতিষ্টা করলেও জগতে মানুষ আদতে অন্যদের মত একটি প্রাণী মাত্র। আর তাই অন্য সব প্রাণের মত মৃত্যুই তার জীবনের সমাপ্তি। মৃত্যুর পর পড়ে থাকা হাঁড়গোড়ই যার সবচেয়ে বড় প্রমান।

মানুষের যে সব বৈশিষ্ট্য তাকে অন্যসব প্রাণী থেকে অালাদা করেছে--

১)বক্তৃতা-- কথা বলতে পারা তথা যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা
কথা বলার ক্ষেত্রে বিবর্তনের ফলে তৈরী হওয়া আধুনিক মানুষের (Homo sapiens) বিশেষায়িত স্বরযন্ত্রই (descendent larynx) তাকে অন্যদের (শিম্পানজী, আদিমানব) থেকে এগিয়ে দিয়েছে। মানুষের জিহ্বার নিচের একটি স্বতন্ত্র হাড় (hyiod bone) কথা বলতে শব্দ বুননে সহায়ক।

২)খাড়া মানব-- দুপায়ে সোজা হয়ে হাঁটাচলা তার সার্বিক সক্ষমতার নিয়ামক
সোজা হতে মানুষকে সহায়তা করেছে মেরুদন্ডের বিশেষ বাঁক। দুপায়ে সোজা হয়ে হাঁটতে গিয়ে বেশী মূল্য দিতে হয়েছে নারী জাতিকে। কোমর বন্ধনী তথা পেলভিসে (pelvis) পায়ের হাঁড়ের জায়গা দিতে গিয়ে সংকুচিত হয়েছে বাচ্চা জন্মদানের প্যাসেজ। বিবর্তন বলছে এটা দিনকে দিন আরো কমছে। মানে নবজাতকের মাথা-পেলভিসের সাইজের আনুপাতিক হার বৈষম্য (CPD) বাড়ছে। সিজারিয়ান আপাত সমস্যার সমাধান করছে বটে। তবে এটিও মানব বিবর্তনে প্রভাব ফেলছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।

৩)শরীরে স্বল্প লোম

৪)উন্নত মস্তিষ্ক-- এটিই মানুষের স্পেশাল। এটি দেহ অনুপাতে অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় বড়ও। পরিনত ব্রেইন মানব দেহের ২.৫ ভাগ। কিন্তু মানুষের শরীরে মোট যে শক্তি উৎপন্ন হয় তার ২০% খরচ করে এই ব্রেইন।
মোটা দাগে মানুষের ব্রেইনের বিশেষত্ত্ব-
~আত্মজ্ঞান (self consciousness)
~ভাষা (language)
~সমস্যা সমাধান করতে পারা (cognitive functions)

৫)হাত-- সোজা হয়ে চলতে পারার কারনে মানুষের হাত দুটি ফ্রি থাকে, যা সে বিবিধ কাজে ব্যবহার করতে পারে। অতি সংবেদনশীল এই হাতের তালু। মানুষের হাতের শক্ত গ্রিপ (grip) পাঁচ আঙ্গুল ওয়ালা অন্যান্য প্রাণী থেকে তাকে এগিয়ে দিয়েছে।

৬)আগুন-- আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে পারাটা মানব বিকাশের পথে গুরুত্বপূর্ন মাইলফলক। এর মাধ্যমে মানুষ অন্ধকারকে জয় করেছে। ঠান্ডাতে বাস করতে শিখেছে।
মূলত আগুন দিয়েই মানুষের পূর্বপুরুষ তাদের জঙ্গল জীবনে অন্য প্রাণীকূলের উপর আধিপত্য প্রতিষ্টা করেছে।
আগুন দিয়ে রান্না করা শিখাটা মানব বিবর্তনে রেখেছে গুরুত্বপূর্ন প্রভাব। একদা তাকে অন্যদের মত কাঁচা খাদ্যদ্রব্য অনেক সময়কাল ধরে চিবোতে হতো। রান্নায় খাদ্যদ্রব্য সহজপাচ্য হওয়ায় মানুষের মুখ/ দাঁত ছোট হয়েছে এবং আঁতের (intestine) দৈর্ঘ্য কমেছে।

৭)লজ্জা-- মানুষের একটি ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য। এর মূলে আবেগ (emotion)। যা মানব ব্রেইনের (lymbic system) এক অদ্ভুত খেল। এটি সততা নির্দেশক।

৮)লম্বা শৈশব-- স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে মানব সন্তানই অপরিনত (immature) অবস্থায় জন্মগ্রহন করে। অন্যান্য অনেক প্রাণীর বাচ্চাই জন্মের কিছুক্ষন পর হাঁটতে শুরু করে। এরপর মায়ের সাথে তারা খাদ্যের খোঁজেও বের হয়।
মানব সন্তান পরিনত হতে অনেক সময় নেয়। ধারনা করা হয় ধাপে ধাপে পরিপক্ক হতে সময় নেয়ার কারনেই মানুষের ব্রেইন তুলনামূলক বড় হয়। শিশুকালে দীর্ঘ সময় ধরে মাতা-পিতার কাছে লালিত হবার ফলে মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয় মায়া-মহব্বত।

৯)কাপড় পরিধান

১০)পরিবার তথা সমাজবদ্ধতা--
অনেক প্রাণীরই আমৃত্যু প্রজনন ক্ষমতা থাকে। মানুষ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। নারীদের প্রজননকাল নির্দিষ্ট। প্রজননকাল পরবর্তী জীবনের নিশ্চয়তা, মানব শিশুর লালন-পালন, এসবের নিমিত্তেই মানুষ সৃষ্টি করেছে পরিবার প্রথা। এটাই সভ্য হবার পথে আধুনিক মানুষের (Homo sapiens) প্রথম ধাপ।।
____________________________


লেখক ডা. অাশীষ দেবনাথ
বিশেষজ্ঞ এনেসথেসিওলজিষ্ট, নোয়াখালী।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়