Ameen Qudir
Published:2018-08-14 15:43:38 BdST
ডাক্তারদের লেখা গল্পএই বাড়ির কি কোন রহস্য আছে?
ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন
___________________________
১.
এই বাড়ির কি কোন রহস্য আছে?নাকি তার ঘুমের সমস্যা?নাকি দুটোই?প্রতি রাতেই অসময়ে ঘুম ভাঙে রফিকের।বালিশের পাশে থেকে মোবাইলটা হাতে নেয়।রাত তিনটা বেজে পাচ।গত এক সপ্তাহ রোজই তার রাত তিনটার আশেপাশে ঘুম ভাঙে।মোবাইলে ৭২ টা মিসকল উঠে আছে।সবগুলো কলই রাদিয়ার করা,একটা বাদে।একবার শুধু ফোন করেছিলো নাজিয়া,ওর স্ত্রী।কাল শরীরটা ভালো লাগছিলো না,তাই আগেই শুয়ে পড়েছিলো।কখন যে ঘুমিয়ে গেছে,টেরই পায়নি।
রাতের এই সময়টা খুব কষ্টকর কাটে রফিকের।বিছানায় এপাশ ওপাশ করা ছাড়া কিছু করার থাকে না।এ সময়টা খুব ভাবে সে।প্রায় দুই মাস হলো এই বাড়িটায় উঠেছে রফিক।বাড়ি না বলে রুম বলা ভালো।আগের বাসাটা ভালোই ছিলো সবদিক দিয়ে,কিন্তু নাজিয়া চলে যাবার পর থেকে সবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টির সামনে নিজেকে অসহায় মনে হতো,আর তাই এই নতুন বাসায় ওঠা।
আচ্ছা,নাজিয়া কেন চলে গেলো?সে কি খুব অসহ্য কেউ?আর দশটা আটপৌরে স্বামীর মতোই তো সে ছিলো।অফিস,বাসা,ছুটির দিন এখানে ওখানে ঘোরাঘুরি আর মাঝে মাঝে শপিং-এই করেই তো দিব্যি কেটে যাচ্ছিলো তাদের দিন।তবুও কিছু ঘাটতি ছিলো হয়তো,রফিকের জানার বাইরে।নইলে বিয়ের দুই বছর পর তো এভাবে চলে যাবার কথা না নাজিয়ার।
রাদিয়া।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বান্ধবী।এক সময় খুব পছন্দ করতো রাদিয়াকে রফিক,জানিয়েওছিল নিজের ভালোলাগার কথা।রাদিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে শুধু বলেছিলো,"দেখ দোস্ত,বন্ধুত্বটাকে নষ্ট করিস না প্লিজ।বন্ধু আছিস,তাই ই থাক,এর বাইরে অন্য কিছু ভাবতে যাস না।"
সে ই শেষ।আর আগাবার কথাও ভাবেনি রফিক।মাঝে মাঝে রাদিয়াকে দেখলে যে বুকের ভেতরটা মোচর দিতো না তা না,কিন্তু সম্পর্কটায় তিক্ততা আনতে চায়নি।
রাদিয়ার সাথে আবার দেখা হলো মাস খানেক আগে।যেদিন নাজিয়া বাসা ছেড়ে চলে যায়,তার দিন তিনেক পর।বাসার দিকে ফিরছিলো,ফাকা বাসায় ফেরার কোন তাড়া ছিলো না রফিকের।এলোমেলো ঘোরাফেরা করতে করতে একটা কফিশপে ঢুকে পড়ে।কফি খাবার চেয়েও বড় উদ্দেশ্য ছিলো সময় পার করা।
এক কাপ কফি নিয়ে বসে ছিলো,আনমনে হয়তো।নাজিয়ার কথাই ভাবছিলো সে।এমন সময় "এই তুই রফিক না?" ডাকে ঘাড় ঘুরিয়ে আবিষ্কার করে রাদিয়াকে।কতোদিন পর দেখা হলো?তিন বছর?
রাদিয়াই কথা বলে।
"কিরে বসতে বলবি না?আগের মতোই গাধা আছিস নাকি এখনো?কতোদিন পর দেখা বলতো?তুই কিন্তু একটুও বদলাস নাই।"
কথা চলতে থাকে রাদিয়ার।বিশ্ববিদ্যালয় সময়েও এভাবেই কথার ট্রেন ছুটাতো মেয়েটা।আর মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতো রফিক।আগেও রফিকের কাজ ছিলো শুধু রাদিয়ার কথায় তাল মেলানো,আজকেও একই কাজ করে চলেছে।আজকেও বকেই চলেছে মেয়েটা।আর কি বদলে গেছে ওর?চশমাটা যোগ হয়েছে,আর একটু মুটিয়েও গেছে সামান্য।
অন্য কথায় যায় রফিক।
"তোর বর কই?কতো রং ঢং করে না বিয়ে করলি,একবারের জন্যেও তার কথা বলছিস না যে?ঝগড়া বাধিয়েছিস নাকি?"
ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে রফিক।হঠাৎ রাদিয়া ফর্সা ঝলমলে মুখটা কালো হয়ে যায় রাদিয়ার।
"ও নাই।ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে কবে।"
মুখটা স্বাভাবিক রেখে বলে রাদিয়া।তবুও তার মুখের মাংসপেশির কেপে ওঠা ঠিকই ধরতে পারে রফিক।অনেক কষ্টে ভালোবাসার মৃত্যুর কথা স্বাভাবিক মুখে দেবার চেষ্টা করছে,পুরোটা আর পারলো কই?
"তোর কি খবর?বউ নিয়ে জমিয়ে সংসার করতেসিস?"
'বউ আছে,সংসারও করতেসি,কিন্তু জমতেসে কি না বুঝতেসি না।'
"মানে কি?কি হইসে বল তো?"
রফিকের আসলে বলার কিছু ছিলো না।কি বলবে?তিন দিন আগে তার বউ শুধু একটা ছোট্ট চিরকুট রেখে চলে গেছে।ঘরে ঢুকে দেখে ফ্রিজের সাথে চুম্বক দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে গেছে।
"রফিক,
কোন সম্বোধন করলাম না।আসলে সম্বোধন করার জন্য ন্যূনতম যে আত্মিক সম্পর্ক থাকতে হয়,তার একটুকুও আমাদের মাঝে নেই।তোমার আমার মাঝে আসলে কোন ভালোবাসা ছিলো না,এখনো নাই।বিয়ে নামক সুতায় আর কতোদিন বেধে রাখবে আমাকে?তুমি তো আর ছিড়বে না,তাই আমিই ছিড়ে দিলাম।
সময় মতো ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেব,আশা করি কোন ঝামেলা ছাড়াই আমাদের সেপারেশন হয়ে যাবে।অবশ্য তুমি ঝামেলা করার মানুষ নও সেটা আমি জানি,তবুও বলার জন্য বলা।ভালো থেকো।
নাজিয়া।"
এরপর কয়েকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলো রফিক,নাজিয়া এক লাইন কথাও আগাতে দেয়নি।এমনকি তার বাবা মা'ও কোন কথা বলতে চাননি।দুইদিন যেয়ে ওদের বাসার ড্রয়িংরুমে বসে ছিলো,কেউ আসেনি।এরপর আর চেষ্টা করেনি রফিক।আজীবন ঝামেলা এড়িয়ে চলা মানুষ সে,নাজিয়ার সাথেও আর ঝামেলা বাড়াতে চায় না।ছোট থেকেই একলা মানুষ,বাবা মা তো সেই কবেই মরে গেছেন ওর,সেই জন্যই বোধহয় একলা থাকতে খুব একটা কষ্ট হয় না ওর।
২.
নাজিয়ার সামান্য টেনশন হচ্ছে।তার এই এক সমস্যা,ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে টেনশন করতে করতে সে একেবারে বিশাল সমস্যা বানিয়ে ফেলে।তার হাতের তালু ঘামতে থাকে,নাকে ঘাম জমে,মাথার তালু দিয়ে আগুন বের হতে থাকে।
এই যেমন এখন,রফিক ফোন ধরেনি।কতোই বা রাত এখন,সাড়ে দশটা বাজে মাত্র।এতক্ষণ তো তার অবশ্যই বাসায় চলে আসার কথা।মোটামুটি সব্জী টাইপ মানুষ রফিক,কোন বদ অভ্যাস নাই।অফিস আর বাসা-এই হলো তার জগত।মনে হতেই বিরক্তিতে ঠোট উল্টায় নাজিয়া।
অথচ নাজিয়ার জীবন কি এমন ছিলো?মাত্র তিন বছর আগেও তার ছিলো প্রজাপতি জীবন।বন্ধু-আড্ডা-পড়ালেখা এই তিনের চক্করে ভালোই তো ছিলো সে।মাঝে থেকে ঝামেলা বাধালেন আব্বা।কোথা থেকে রফিককে ধরে আনলেন,তার বন্ধুর ছেলে,খুব ভালো,অমায়িক,ভালো চাকরি করে,মেয়ে সুখেই থাকবে-ব্যাস।তার প্রজাপতি জীবন আটকে গেলো একটা নয়টা পাচটা এলার্ম ঘড়িতে-যার কাজ কি না সময় মেনে মেনে ঘন্টা বাজানো।রোজ সেই একঘেয়ে জীবন,কোন উত্তেজনা নেই,নতুনত্ব নেই।তিনটা বছর যে কিভাবে কাটিয়েছে সে নাজিয়াই জানে।
অবশ্য রফিক স্বামী হিসেবে খারাপ ছিলো না একেবারে।যথেষ্ট ভালোবাসতো,যত্ন নিত,তার আবদার পূরণ করার চেষ্টা করতো সবসময়।কিন্তু ওই যে,নির্বিষ।কোন কিছুতেই তার কিছু আসে যায় না।নাজিয়া মাঝখানে কিছুদিন একেবারে কাছেই ঘেষতে দেয়নি ফালতু কিছু অজুহাতে।সাহেবের তাতেও কোন আপত্তি নেই।তার কতো শখ ছিলো তার বর হবে খুব ডমিন্যান্ট,সে না না করে কিছুতে আপত্তি করলে জোর করে আদায় করে নিবে।উল্টো কিসের কি?প্রথম প্রথম সে অবশ্য মানিয়ে নেবার চেষ্টা করেছিলো,কিন্তু তেলে জলে মিশ খেলো কই?
এইবার তাই একেবারে সব শেষ করে দেবার জন্যই বাবার বাসায় চলে এসেছে।বাবা চলে গেছেন আজ ছয় মাস,মা'র যে খুব আগ্রহ ছিলো রফিকের ব্যাপারে তা ও না।প্রথমে আপত্তি জানালেও পরে আর কিছু বলেননি মা।তাই এখন বন্ধনমুক্তি অনেকটা সহজ হয়ে গেছে তার জন্য।
কিন্তু রফিক ফোন ধরলো না কেন?আরেকবার দিয়ে দেখবে নাকি?ঘুমিয়ে পড়লো না তো আবার?দূর,বয়েই গেছে নাজিয়ার ফোন করে খবর নিতে।কাল একবার ফোন করে দেখবো।এই কয়দিনে উকিলকে দিয়ে সব কাগজপত্র তৈরি করা হয়ে গেছে।এখন শুধু রফিক স্বাক্ষর করে দিলেই হয়,সে মুক্ত।
৩.
রাদিয়া খুব কাদে।তবে সবার সামনে না,লুকিয়ে।যেমন তার এখন গলা ছেড়ে কাদতে ইচ্ছে করছে,কিন্তু পারছে না-এতো বড় মেয়ে কাদলে লোকে কি বলবে?তার কান্নার কারণ অবশ্য খুব বড় কিছু না,১১ বার ফোন করেও সে রফিককে পায়নি,তাই।হতেই পারে সে হয়তো ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দিয়েছে,কিংবা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে।আর রফিক তার ফোন না ধরলে কেন তার কান্না পাবে?রফিক কে তার?একসময় খুব পছন্দ করতো,কিন্তু রাদিয়াই তো তাকে পাত্তা দেয়নি।আর এখন গত মাসখানিক ধরে কথা হচ্ছে,মাঝে মাঝে দেখা।সেটাও খুব আহামরি কিছু না,দুইজন একা মানুষ পরষ্পরকে সঙ্গ দিচ্ছে,এই যা।এর মাঝে তো অন্য কোন হৃদয় বিষয়ক কিছু নাই।আর তাছাড়া আজকে রফিকের বউয়ের সাথে ঝামেলা হচ্ছে,কাল মিটে যাবে।তখন সে কোথায় যাবে?কারো সম্পর্কের মাঝে কাবাবে হাড্ডি হতে চায় না সে।
আচ্ছা সে কি রফিককে ভালোবেসে ফেলেছে?এতো অল্প সময়ে ভালোবাসা তৈরি হতে পারে?নাকি তার প্রতি রফিকের যে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা সে পেয়েও অবহেলা করেছে,আজ নিজের ভালোবাসাহীন অসহায় সময় সেই ভালোবাসা পাবার আকাঙ্খা বাড়িয়ে দিয়েছে নতুন করে?এটা ঠিক রফিক তাকে একসময় পাগলের মতো ভালোবাসতো,রাদিয়া বুঝতোও।কিন্তু সেই ভালোবাসা কি এখনো অবশিষ্ট আছে রফিকের মনের কোথাও?তা কি করে হয়,রফিক তো বিবাহিত।না হয় তার সাময়িক সমস্যা হচ্ছে,তাতে নিশ্চয়ই তার ভালোবাসা কমে যায়নি স্ত্রীর প্রতি।
হুট করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো রাদিয়া।ঠিক আছে,কাল কথা হোক,দেখা করতে চাইবে সে।শেষবারের মতো দেখা করে সব সুন্দর মতো শেষ করে ফেলবে।কোনভাবেই সে চাচ্ছে না নিজের দূর্বলতাকে আরো বাড়িয়ে তুলতে,কিংবা রফিকের মাঝে দূর্বলতা তৈরি করতে।একবার অনেক বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে রাদিয়া,আরেকবার নতুন করে কষ্ট পেতে চায় না সে।
এই ভেবেই কেদে ফেললো সে।বালিশে মুখ গুঁজে ফুপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না।কেন কাদছে সে?তার যখন ডিভোর্স হলো,তখনো তো সে এতোটা কাদেনি।তাহলে আজ কেন?তার মন এমন খারাপ লাগছে কেন?কেন সবসময় অদ্ভুত ব্যাপারগুলো তার সাথেই ঘটবে?
৪.
পরদিন।
রফিক একটা গানের সুর তোমার চেষ্টা করছে শিস দিয়ে।আসছে না,তার কোনকালে আসেও না।শিস দিচ্ছে বলেই কি না,টাইয়ের নট টা ঠিকমতো বাধা হচ্ছে না।নাজিয়া কি কখনো তার টাইয়ের নট বেধে দিয়েছে?হাতটা নটের মাথাতেই আটকে রইলো।নিজের দিকে খুব ভালো করে তাকালো রফিক।নিজেকে অনেকদিন খুব গভীরভাবে দেখেনি সে,আজ ঠিক করলো নিজেকে দেখবে।জিজ্ঞেস করবে আয়নার মানুষটাকে,কেমন আছে সে?সেই চেনা মুখ,তাতে চেনা চুলের ভাজ,সামান্য বাকানো নাক,ঠোট-সবই তো আগের মতোই।চুলের ভাজে সামান্য সাদার আভাস দেখা যাচ্ছে না কি?কৌতুহল শুরুতেই মাটিচাপা দিলো,এইসব সাদা কালোতে কবেই বা তার কিছু আসছে গেছে?
আয়নায় ঘড়ি দেখা যাচ্ছে,ঘড়ির কাটা উল্টো ভাবে ঘুরছে।তবুও সময় বোঝা যাচ্ছে,আটটা বেজে পঁচিশ।এই সময়টায় রফিকের অফিসের জন্য বেড়িয়ে যাবার কথা।আর সব বাদ দিয়ে সে আয়নায় নিজেকে দেখছিলো!অথচ কতো কিছু করবে বলে ভেবে রেখেছে।নাজিয়াকে ফোন করতে হবে,রাদিয়াকেও।রাদিয়ার অবশ্য স্বভাব এমনই ছিলো,কাউকে না পাওয়া পর্যন্ত ফোন দিয়ে যেতেই থাকে,তবুও,অন্য কোন সমস্যাও তো হতে পারে।আজ অফিসে জরুরী একটা মিটিং আছে,ঠিক দশটায়।তাদের এমডি স্যার খুব কড়া,একেবারে ঘড়ি ধরে চলেন।সন্ধ্যায় একবার ভেবেছিলো বসুন্ধরা সিটিতে ঢু মেরে আসবে,একটা মোবাইল কেনা দরকার।এই মোবাইলটা বড্ড ঝামেলা করছে।
আবার ঘড়ির দিকে তাকায় রফিক।ঘড়িটা সময় দিয়ে যাচ্ছে ঠিকই,কিন্তু আয়নায় সে উল্টো হয়ে আছে,ভুল দিকে ঘুরে চলেছে।রফিকের হঠাৎ নিজেকে সেই আয়নায় আটকে পড়া ঘড়ির মতো মনে হলো।সব কিছু ঠিক বোঝা যায়,কিন্তু আসলে সবটাই উল্টো,পুরোটাই বুঝি ভুল।
আসলে কি চায় রফিক?কাকে চায়?নাজিয়া নাকি রাদিয়া?নাকি কাউকেই না?এই জীবনটাই কি ছিলো তার পরম প্রার্থনীয়?নাকি ভুল জগতে তার বসবাস?ক্লান্ত লাগে খুব রফিকের,নিজেকেই নিজে জিজ্ঞাসা করে,আর কতো?
৫.
রফিক বসে আছে বাম দিকের সারিতে,সিট নাম্বার A 3,জানালার পাশে।বাস ছাড়বে ১০ টায়,রফিক সিটে এসে বসে আছে ৯:৩০ বাজতেই।জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখছে মানুষের চঞ্চলতা।কেউ খাবার কিনছে,কেউ পত্রিকা,কেউবা বাসে উঠিয়ে দিতে এসেছে আপনজনকে।রফিকের তো এর কিছুই দরকার নেই,তার জন্য তো আর কেউ বাস টার্মিনালে উপস্থিত হয়নি।তার বসে থাকতেই ভাল্লাগছে।
মনটা অনেক হাল্কা লাগছে।সাথে ছোট্ট একটা ব্যাগ,তাতে শুধু দুই সেট শার্ট প্যান্ট,আর কিছু নাই।আসার পথে দেখেছিলো এক রিক্সাওয়ালা ভেউ ভেউ করে কাদছে,এক যাত্রী প্রায় ২ ঘন্টা রিক্সায় ঘুরে তার ভাড়া তো দেয়ইনি,উলটো ৩ ঘন্টা রাস্তায় বসিয়ে রেখে উধাও হয়ে গেছে।তার হাতে মোবাইল আর মানিব্যাগটা দিয়ে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে এসেছে।নিজের জন্য মাত্র হাজার পাঁচেক টাকা রেখে বাকিটা মানিব্যাগেই রয়ে গিয়েছিলো।লোকটা কান্না ভুলে অবাক হয়ে তাকিয়েছিলো,কিছু বলার আগেই একরকম পালিয়ে এসেছে রফিক।
নিজেকে একেবারে মুক্ত মনে হচ্ছে।আশেপাশে কেউ তার চেনা নাই,যোগাযোগ করার সব রাস্তা বন্ধ করে রেখে দিয়ে এসেছে আগেই।
____________________________________
ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন
শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ
০২ ব্যাচ।
আপনার মতামত দিন: