Ameen Qudir

Published:
2018-08-12 17:41:20 BdST

নষ্ট জীবন


 

ডা.মিথিলা ফেরদৌস
________________________________

কার্জন হলের সামনে এসেই মিমের হঠাৎ ১৮ বছর আগের স্মৃতি মনে হয়ে গেলো।যেইটা সে এতদিন ভুলে থাকার চেষ্টা করেছে।কিন্তু কিছু জায়গা কিছু ঘটনার এমন সাক্ষী হয়ে থাকে,যে চাইলেও ভোলা যায় না।

ঠিক এই জায়গায় অমির সাথে রিক্সা ভাড়া করা হচ্ছিলো নিউমার্কেটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
:মামা নিউ মার্কেট কত?
:২০ টাকা।
:টাকা নাই যে মামা,আচ্ছা দুই টাকা দিবো চা খেয়ে নিয়েন,তার সাথে দুই টাকার বিস্কিট?চলবে?

রিক্সাওয়ালা অবাক তাকায় থাকে।
:আচ্ছা ঠিক আছে মামা আরও দুই টাকা একটা বিড়ি,আচ্ছা ঠিক আছে আরও দুই টাকার একটা চকলেট চলবে মামা?
এইবার রিক্সাওয়ালা হেসে বলে,
: উঠেন মামা ট্যাকা লাগবোনা।
:তাহলে কিন্তু ট্যাকা দিমু না কইলাম মামা ঠিক আছে?

নেমে অমি রিক্সাওয়ালার হাতে ৩০ টাকা ধরায় নিউমার্কেটের রাস্তা মিমকে নিয়ে পার হতে থাকে।

স্মৃতি কেমন জানি এখনও একই আছে।মিমি গাড়ির মধ্যে চোখ বন্ধ করে।কোনমতে রাস্তা পার হতে চায়।কলা ভবনের রাস্তার পাশে আসলে চোখ খুলে।কতদিন হেটেছে।প্রচন্ড শীতে অমি পকেট থেকে হাত বের করে বলতো,আমি বেশিক্ষন বাইরে হাত রাখবোনা।মিমি ভ্রু কুচকায় তাকায়,
:মানে?
:তুমি চাইলে আমার হাত ধরতে পারো।তোমার তো পকেট নাই।ঠান্ডা লাগার কথা।হাত ধরে হাটার সমস্যা কি?
:দরকার নাই।
আবার মিম চোখ বন্ধ করে।ওহ!!অতীতের উপরে হোয়াইট ফ্লুইড ঢেলে দিতে পারলে ভাল ছিল।
কলা ভবনের ভিতরে ফাকা মাঠে ল্যাম্প পোস্টের নীচে চোখ চলে যায়।মাঠে বসে বাদাম খাওয়ার স্মৃতি।বাদামওয়ালা ছোট ছেলেটা বাদাম আনলেই,অমি বলতো,
:দুই টাকার বাদাম দাওতো মামা।
:দুই টাকার তো বাদাম নাই মামা।
:বেটা দুই টাকার দুইটা বাদাম হইলেও দিয়ে যা।
ছেলেটা অসহায় ভাবে তিন চারটা বাদাম দেয়,
:আচ্ছা আরও দুই টাকার দে।
এই করে দশটাকার বাদাম কেনা হয়।
বাদাম অমি নিজের কাছেই রাখে একটা একটা করে ছুলে মিমের হাতে দেয়।
মিমের কাছে সময়টা ছিলো স্বপ্নের মতো।
কখনও হল থেকে বের হলে,অমি বলতো
:বাদাম খাবে?বুক পকেটে ছিলে রেখেছি,এখান থেকে নিতে হবে।
:পারবোনা।
:থাক তাহলে।
বাদাম,আইস্ক্রিম,টংয়ের চা,ফ্লাস্কের চা ওয়ালার চা সব কথা মিমের স্মৃতিতে ভাসতে থাকে।
মিম,অমি দুইজনেই স্টুডেন্ট তখন, খুব পরিমিত খরচ করে চলতে হয় তাদের,এর মধ্যেই ভাল থাকার চেষ্টা। সম্পর্কটা ঠিক প্রেমের ছিলোনা।অমি বহুবার মিমকে বলার চেষ্টা করেছে,মিম ছাড়া তার জীবনে আর কোন অপ্সান নাই।মিম নীরব।হোস্টেলের একাকিত্বের সাথী অমিকে সে ভালবাসে কিন্তু জীবনে বড় ডিসিশন নিতে ভয় হয় তার।

তুমুল বৃষ্টিতে একই ছাতার নীচে পাশাপাশি বসে ভিজেছে, জনমানব শুন্য লেকের পাশে,পিছনে সারি সারি পাম গাছগুলি এখনও সাক্ষি,অমি কখনও কোন সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেনি।লেকের পানিতে বৃষ্টির পানি পরা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটা কথাই বলেছে,

:জীবনে অনেক শখ ছিলো,কোন শখ কখনও পুরন হয় নাই,শুধু একটাই স্বপ্ন তার,মিমের দিকে গভীর দৃষ্টি তে তাকায়,মিম মুখ ফিরায় দুরের ফাকা দৃষ্টি তে তাকায় থাকে।
অমি পলিটিক্সের সাথে জড়িত,সরকার বিরোধী।সময়টা তখন খুব খারাপ যাচ্ছিলো তার,তবুও অন্যায় করেনি,অন্যায়কে সহ্যও করেনি এইটাই মিমের অমির প্রতি মোহাবিষ্ট করে রাখতো।অনার্স ফাইনালের সময় অমিদের দল সরকার গঠন করলো।

এরপর থেকেই একটু একটু করে অমির পরিবর্তনের শুরু।মিমের অবাক হওয়ার পালা,যে ছেলে যে অন্যায় গুলোকে কখনওই সহ্য করতে পারতো না,সেই ছেলেই কেন জানি মনে হয় এখন সেইসব অন্যায়ের সাথে জড়িত।
একদিন বাদামওয়ালা ছেলের সাথে দেখা,সে ই ভয়ে ভয়ে মিমকে জানায়,অমির বন্ধুরা এখন তার কাছে চাদা নেয়,সে যদি বলে দিতো তাহলে তার উপকার হতো।
অমি ইদানিং সময়ও কম পায়,ক্যাম্পাসে তাদের বিভিন্ন প্রগ্রাম থাকে।মিম অমির মেসেজের জন্যে মোবাইলের দিকে তাকায় অপেক্ষা করে।হটাৎ কখনও মেসেজ আসে,"তাড়াতাড়ি নেমে আসো"।

অমির গায়ে ইদানিং সিগারেটের তীব্র গন্ধ থাকে।তবে অমির চোখ দেখে মিম বোঝে মিমের জায়গায় এখনও কেউ আসতে পারেনি।রিক্সা ঘোরা মিমের পছন্দ।রিক্সায় যখন অমি মিমকে নামায় দিতো,কি মনে করে অমি রিক্সাওয়ালাকে বলতো,

: মামা একটা জিনিস ফেলে আসছি,আবার ঘুরতে হবে।এই করে দুই তিন পাক দিয়েও যখন মিমকে ছেড়ে যেতো, ওর চোখে মুখে বিষন্নতা থেকেই যেতো।
মাস্টার্সের আগে মিম পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত,অমির ব্যস্ততাও বেড়েছে।তার সাথে নৈতিকতার বিসর্জন।

ফাইনাল পরিক্ষা শেষের ফাইনাল গুছগাছ,অমির সময় হয় না মিমের খোজ নেয়ার।ইগোতে লাগে মিমের।নিজে থেকে জানাতেও ইচ্ছে হয়না।ফেরার পথেই ডিসিশন ফাইনাল করে ফেলে।

চলবে....

#নষ্টজীবন২

♣♣
হোস্টেল থেকে ফেরার একদিন পর,সকালে অমির অসংখ্য মেসেজ পায় মিম।সারারাত জেগে একটা কথাই ঘুরায় ফিরায় লিখেছে অমি,তার জীবনের একটাই স্বপ্ন,স্বপ্ন পুরনের জন্যে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে অমি।কেন জানি আর কথা বলতে ইচ্ছে হয় নাই মিমের।

বিয়ে হয়ে যায়,বাবার বন্ধুর ছেলে আনানের সাথে।আনান সিভিল ইঞ্জিনিয়ার,কানাডায় সেটেল্ড।বিয়ের কিছুদিন পর মিমকে নিয়ে যায় আনান।বিয়ের পর শেষ অমির সাথে মিমের কথা হয় ঢাকা আসার পথে গাড়িতে,পাশেই আনান।নাম্বারটা বহু আগেই কেটে দেয়া,কিন্তু নাম্বার টা স্মৃতি থেকে মুছে ফেলা যায় নাই।নাম্বার দেখেই শক্ত হয়ে যায় মিম।একটু অপেক্ষা করে ফোনটা ধরে।অমির কন্ঠ,যে কন্ঠের জন্যে একসময় অধীর হয়ে অপেক্ষা করতো,
:কেমন আছো?
:ভাল।
:কংগ্রাচুলেশনস।
:থ্যাংকস।
:ভাল থেকো।আমি অপেক্ষা করবো জীবনের...

ফোন কেটে দেয় মিম।শক্ত হাতে ফোন ভেংগে ফেলতে ইচ্ছে হয় তার।একটা ব্রিজের কাছে গাড়ি আসতেই পানির মধ্যে যত জোরে সম্ভব ছুড়ে মারে মোবাইল।পাশেই অবাক আনান।মুখে শুকনা হাসি মিমের,
:মোবাইলটা খুব ডিস্টার্ব করছিলো,তাছাড়া এই সিম রেখেও তো লাভ নাই।

আনানের পরিমিতি বোধ,আর কৌতূহল দেখায় না।
পানিতে ভেসে যায় অমির লেখা প্রথম থেকে শেষ সব মেসেজ।অমির চেয়েও অমির মেসেজগুলি ছিলো,মিমের প্রিয়।

♣♣
বিবাহিত জীবনে মিম কতটা সুখী কখনওই ভেবে দেখেনি।ইচ্ছাও হয় নাই।আনান টিপিকেল বাঙালী মুসলিম,পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার প্রতিক।তাই মিমের গবেষণা বা জবের কোনওটাই করতে দেয়নাই।ফার্মেসী থেকে পাশ করা মিম তাই এখন পুরাপুরি সংসারী,দুই ছেলের মা।মাঝে মাঝে কোন অলস সময়ে আনানকে নিয়ে অনেক ভেবেছে মিম।কেন এই মানুষটাকে সে বিয়ের এতদিনেও একটুও ভালবাসতে পারলোনা!!অথচ আনান স্বামী বা বাবা হিসেবে দায়িত্বশীল।সে তার সাধ্যের কোন কমতি করেনা কখনওই।

♣♣
মিমের জীবনের সবচেয়ে সুখের স্মৃতিগুলি অমির সাথে জড়িত।সেইগুলি অনেক কষ্টে এতদিন চাপা দিয়ে রেখেছিলো মিম।১৮ বছর পর ক্যাম্পাসে এসে হুট করে সব একে একে ভেসে উঠেছে।দিশেহারা মিমের ইচ্ছা হয়,একবার অমির সাথে দেখা করতে।নাম্বার ম্যানেজ করা খুব একটা কষ্টের হয় নাই।তখনই জেনেছে,অমি কোন এক মন্ত্রীর মেয়েকে বিয়ে করছে,পলিটিকেলি খুব ভাল পজিশনে আছে,বিশাল বিজনেসম্যান।

ইতস্ততভাবে কয়েকবার ডায়াল করে কেটে দিয়ে শেষে ফোনটা করেই ফেলে,ওপাশ মেয়েলী মিষ্টি কণ্ঠস্বর ভেসে আসে,
:গুড আফটারনুন। কে বলছেন প্লিজ?
:জ্বী অমি কে পাওয়া যাবে?অমি হাসান।
:আপনার পরিচয় প্লিজ!
:আমি মিম,ওকে বললেই হবে।
:ওকে,একটু অপেক্ষা করুন ম্যাম!
নিজের পুরো নাম বলতে ইচ্ছে করেনা মিমের।টুংটাং শব্দ হচ্ছে,একবার ফোনটা কেটে দিতে ইচ্ছে হয় মিমের।সেই মুহুর্তে ওপাশ থেকে অমির কন্ঠ ভেসে আসে।
:কেমন আছো?
:ভাল!কেমন করে বুঝলাম আমি সেই মিম!
:দেশে এসছো জানি।এনিওয়ে কতদিন থাকবে?দেখা হতে পারে কি?
কিছুক্ষন অপেক্ষা করে মিম বলে,
:পারে।
:হা হা!একটুও বদলাওনি।যাইহোক তুমি ফ্রি হলে জানিও,আমি যেখানে বলবে চলে আসবো।
:আচ্ছা।

♣♣
অমির সাথে দেখা করাটা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারেনা মিম।অমিই ফোন করে সময় চেয়ে নেয়।শহীদ মিনারের কাছে গাড়ি ছেড়ে, ফুলার রোডে হেটে আসতে দূর থেকে লম্বা অমিকে চোখে পরে মিমের।কালো শার্টের সাথে গ্রে প্যান্টে এখনও দুর্দান্ত অমি।হাতে সিগারেট মিম কে দেখার সাথে ফেলে,জুতা দিয়ে নিভিয়ে দেয়।অমির পাশেই একজন লোক সম্ভবত তার সিকিউরিটির গার্ড।লোকটিও আজ অবাক,একজন মহিলার জন্যে তার স্যার গাড়ি থেকে বের হয়ে অপেক্ষা করছে দেখে।

মিম কে দেখে অমি,
: অবশেষে ১৮ বছর ৪ মাস ২০ দিন...
মিমের মন ভাল হয়ে যায়, হেসে ফেলে
:থাক থাক।
গাড়ি দরজার কাছে সিকিউরিটি এসে দাঁড়ালে তাকে অমি ইশারায় সামনে বসতে বলে,মিম উঠে গেলে নিজেই ওপাশের গিয়ে সিটে বসে।বদ্ধ গাড়িতে মিমের নাকে গন্ধটা স্বাভাবিক মনে হয় না,অমিকেও স্বাভাবিক মনে হয় না।অমি,মিমের দিকে তাকায় পুর্ন দৃষ্টিতে,

:বাহ!অনেক হট হয়েছো আগের চেয়ে।
বিরক্ত মিম
:হট!!
:না মানে ম্যাচিউর বিউটি।
মিমের মনটা হটাৎ খারাপ হয়ে যায়,অমির ভাষা তাছাড়া ওর চোখের নীচে অতিরিক্ত মদ্যপানে কলোস্টেরল জমে ফুলে আছে।অথচ আনান কখনও কোন হার্ড ড্রিংকস তো দুরের কথা,কোন হারাম খাবার বাড়িতে ঢুকতে দেয় না।

:তোমার বউ বাচ্চা কেমন আছে?
:দেখা হয় না বহুদিন।
:মানে?
:বউ ব্যস্ত থাকে মিটিং সিটিং,দেশ বিদেশ নিয়ে,আর ছেলে মেয়েদের মিস্ট্রেস আছে ওরাই দেখে।

মিমের হটাৎ,আনানের কথা মনে হয়,অফিস শেষে সারাক্ষন বাচ্চাদের সাথে লেগেই থাকে,স্কুলের বিভিন্ন প্রযেক্ট নিয়ে আলোচনা,ইতিহাস, বিজ্ঞান সব ব্যাপারে বাচ্চাদের গল্পের মতো করে শিখানো,উইক ইন্ডে বিভিন্ন জানায় ঘোরাঘুরি।মিম বাসায় না থাকলে আনান অস্থির হয়ে যায়,বাবা একবার অসুস্থ ছিলো,মিম দেশে আসবে,আনানের সে কি মন খারাপ।দেশের বাইরে থেকেও তারা এ দেশীয় কালচারেই চলে,অথচ এদেশে থেকেও এদের একি অবস্থা!মা ছাড়া,বাচ্চা আসলেই অসহায়,ছন্ন ছাড়া সংসার।এই প্রথম আনানের চাকরীতে বাধা দেয়ার জন্যে মন খারাপ হয় না মিমের।

সামনে সিকিউরিটির লোকটার ফোন বেজে উঠাতে সম্বিৎ ফিরে আসে মিমের।কি জানি কথা হয়,লোকটা পিছন ফিরে অমিকে বলে,
:স্যার,রতন নামের ছেলেটা ঝামেলা করছে,দোকান ছাড়বেনা।
অমি বিরক্ত হয়ে,
: মোবাইল বন্ধ করো,পরে এ ব্যাপারে কথা হবে।
মিম সবই বোঝে।
:একসময় যখন ক্ষমতা ছিলোনা,অন্যায়ের বিপক্ষে বলেছো,অধিকারের জন্যে বলেছো আজ সেই অন্যায় নিজেই করছো,কি অদ্ভুত তাই না?
অমি হো হো করে হেসে চোখ বন্ধ সিটে হেলান দেয়,
:মিম,ক্ষমতা এমন এক জিনিস যা না থাকলেই মানুষ নীতিবান হয়ে যায়,যখনই ক্ষমতা হাতে আসে,তা টিকায় রাখার জন্যেই মানুষ মরিয়া হয়ে যায়।মানুষ কে ঠকাতে বা মেরে ফেলতেও দ্বিধা করেনা।না হলে যে, নিজেই মরতে হবে।তুমি ভাবছো শুধু আমাদের দেশেই এমন!তা কিন্তু না,বিশ্বের অনেক বড় বড় নেতা আছেন,যাদের তুমি সম্মান করো, সবার হাতেই রক্তের দাগ আছে।তবে ক্ষমতাটা না আসলে হয়তো তোমাকে হারাতে হতো না,আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে এই ক্ষমতা।
মিম চুপ করে শুনতে থাকে অমির কথা।

:অর্থবিত্ত ক্ষমতা কোন কিছুর কমতি নেই আমার,কিন্তু কারো কাছে একটু শান্তি খুঁজি আমি।তুমি যাওয়ার পর জীবনে অসংখ্য মেয়ে এসেছে,গিয়েছে সব লোভী,ওয়াস্

অমি হো হো করে হেসে চোখ বন্ধ সিটে হেলান দেয়,
:মিম,ক্ষমতা এমন এক জিনিস যা না থাকলেই মানুষ নীতিবান হয়ে যায়,যখনই ক্ষমতা হাতে আসে,তা টিকায় রাখার জন্যেই মানুষ মরিয়া হয়ে যায়।মানুষ কে ঠকাতে বা মেরে ফেলতেও দ্বিধা করেনা।না হলে যে, নিজেই মরতে হবে।তুমি ভাবছো শুধু আমাদের দেশেই এমন!তা কিন্তু না,বিশ্বের অনেক বড় বড় নেতা আছেন,যাদের তুমি সম্মান করো, সবার হা

:অর্থবিত্ত ক্ষমতা কোন কিছুর কমতি নেই আমার,কিন্তু কারো কাছে একটু শান্তি খুঁজি আমি।তুমি যাওয়ার পর জীবনে অসংখ্য মেয়ে এসেছে,গিয়েছে সব লোভী,ওয়াস্ট প্রডাক্ট,ইউজ করে বিনে ফেলে দিয়েছি।একটা মুখ খুঁজেছি...
:গাড়িটা থামাবে,আমি নামবো।
ঘৃনায় কুচকায় যায় মিম,আবার আনানের চেহারা চোখে ভাসে,আনান কখনওই অমির মত স্মার্ট না,কিন্তু ওর মুখটা এখন অমির চেয়ে অনেক নিষ্পাপ লাগে।

গাড়িটা গুলশানের দিকে যাচ্ছে,অমি বলে
:নামবে মানে?লাঞ্চ করবো একসাথে।গুলশানে এদের ছেড়ে তোমার সাথে একা কিছুক্ষন ঘুরতে চাই।
:না,আনান আর আমার ছেলেরা আমার জন্যে অপেক্ষা করছে,আমি না গেলে ওরা না খেয়েই থাকবে,প্লিজ গাড়ি এক সাইড করে আমাকে নামিয়ে দাও।
:তুমি গাড়ি নিয়ে যাও তাহলে।
:না আমি সি এন জি বা ক্যাবে যেতে পারবো।তুমি নামায় দাও।
অমি মিমের জীদ জানে কিছুই না বলে ড্রাইভারকে গাড়ি সাইড কিরে থামাতে বলে।গাড়ি থামার পর নিজের দরজা খুলে নেমে মিমের দরজা খুলতে আসার আগেই মিম নেমে আসে।
:মিম,আমি অপেক্ষায় থাকবো।আমি জানি একদিন আমার স্বপ্ন পুরন হবেই।২০/৩০ বছর পর হলেও,একজনের সাথে একসাথে বসে কফি খাবো পৃথিবীর কোন এক নির্জন দেশে।

♣♣
মিম কোন কথা না বলে হন হন করে হেটে চলে যায়,পিছে আর কখনও ফিরবে না সে,কখনওই না।ফেরার পথে মনে হয়,অমির সাথে দেখা হওয়াটা ভীষণ জরুরী ছিলো।না হলে কখনওই আনানকে সে চিনতেই পারতো না।১৮ বছরের ভালবাসা সে কেমনে পোষায় দিবে আনানকে?আনানের ফোনটা বেজে উঠে,
:কখন আসবে?বাচ্চারা না খেয়ে আছে।
:হ্যা,দ্রুত ফিরছি,একটু অপেক্ষা করো,আমি সারাজীবনের জীবনের জন্যেই ফিরছি।
আনান অবাক হয়।
ফোন কেটে দিয়ে,অনেকদিন পর মিমের কেমন জানি নিজেকে সুখী সুখী মনে হয়।

সমাপ্ত।
________________________

© ডা.মিথিলা ফেরদৌস । সুলেখক।

দ্র: ডাক্তার প্রতিদিনে প্রতিটি লেখা সংশ্লিষ্ট লেখকের সম্মতিক্রমে প্রকাশ করা হয়।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়