Ameen Qudir

Published:
2016-12-11 19:20:34 BdST

প্রগতিশীলতা ও নারীবাদী ,কলার কাঁদি


ডা. মেহেদী হাসান অয়ন
__________________________



ফিরছিলাম শাহবাগ থেকে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে --,হঠাৎ করেই বাসে মেয়েলী কন্ঠের সাথে বাক-বিতান্ডা...
কৌতুহলী বাংগালী মন কে বাধ দিতে পারি নি,
দেখলাম একজন প্রগতীশীলা নবীনা,বাধিয়েছে নারী-শিশু-প্রতিবন্ধীর সংরক্ষিত আসনে বসা একজন পঞ্চাশোর্ধ দাদুর সাথে-
" জানেন না,এইটা মেয়েদের সিট? উঠুন বলছি,উঠুন,এই হেল্পার,কি করো,দেখোনা,একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে?"
হেল্পার তটস্থ,কয়েকজন তরুণ যুবক উৎসুক,সুন্দর চেহারার নবীনা ডাক্তারনী কে সিট দখলে,কিছু বসে মজা নিচ্ছে।
আশা করি,উপোরোক্ত চিত্রপট টা কারো কাছে নতুন নয়,প্রতিনিয়ত ই ঘটে চলেছে।


প্যাচাল টা আসলে সেখানে না,আসল কথায় আসি,আজ নারী ক্ষমতায়ন,কি শিক্ষা,কি চাকরী,কি রাজনীতি,পেটনীতি,ধান্ধানীতি,গলাবাজী,ফাপড়বাজী।

যত্র তত্র,সর্বত্র।নারী জাগরন,নারীদের সম অধিকার-স্বাধীকার আন্দোলন,প্রগতিশীলা,নবীনা আজ সম্পুর্ণা......
কতো টুকু?---চলুন দেখি______________


১)প্রথমেই যেটা দিয়ে ক্ষমতায়ন,মাননীয়া প্রধন মন্ত্রী এক বার না,এরশাদ সাহেব এর পর থেকে তো নারী দের ই জয় জয়কার...খালেদা,হাসিনা,খালেদা,হাসিনা,হাসিনা-আমার দেখার বোঝার সোভাগ্য হয়েছে ২০০১ সালের রাজনিতি দিয়ে,যেখানে ৩০০ আসনের বিপরীতে ৩০ টি নারী সংরক্ষিত আসন।
মেনে নিলাম,নারীর ক্ষমতায়নে সময় লাগবে,নারীরা উদবুদ্ধ হবে,সবাই ছেলে দের কাধে কাধে কাধ মিলিয়ে হাতে হাত রেখে কাজ করে দেশ কে এগিয়ে নিয়ে যাবে,
হায় রে,দেশ,সেই কবিতার কথাই বলতে হয়,-" সাত কোটি জনতার হে মুগ্ধ জননী,রেখেছো বাংগালি করে মানুষ করো নি"
আজ এক যুগ পার হয়েছে,বিদ্যুত সমস্যা,গ্যাস সমস্যা,নারী শিক্ষা সব ই হয়েছে,শুধু হয়নি,সুশিক্ষিতা,সুবিবেচক।
তারা এখোনো পছন্দ করে সুবিধা বুঝে নিজে কে অবোলা প্রমান করতে,যেখানে সংরক্ষিত আছেই,কি লাভ-হুদাই কষ্ট করে?
সেই নাইন টেনে "রচনার শিল্পগুন" প্রবন্ধে বলেছিলেন,অল্পকথায় কাজ হইলে বেশি কথার প্রয়োজন কি?
তেমন আই ওয়াশ দিতে যদি কয়েক টা প্রেস ক্লাব,শহীদ মিনার,শাহবাগ চত্বরে ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে নারীদের আন্দোলন বুঝিয়ে দেয়া যায়,আর এই সুবাদে যদি সংরক্ষিত আসন দিয়ে সিলেক্টিভ ক্ষমতায়ন করা যায়,কি লাভ?


কোনো এক সময় রাজনীতি করতে গেলে বলতে শুনেছি,দ্যাখ,তর এই বয়সে রাজনীতি নিয়ে ভাবতে হবে না,কলেজে হাজার হাজার ছেলে আছে,মিটিং ফিটিং করার,তুই জাবি না।কারন যতই ফালাফালি করুক,শেষ বেলা তে এম পি এর জন্য সংরক্ষিত আসন টি আমার আগ্রজের পর আমার ই।
ঠিক তেমন ই,নেপোই মারে দই,আমার ভাগ টুকু কোই?
যতদিন এই সংরক্ষিত পালা চল্বে,তত দিন নারী রা ওই কলার কাদী হয়েই ঝুলবে।নারীমুক্তি,সম-অধিকার আন্দোলনের শেষে বাসে ফিরতে দাদুর সাথে নাত্নীর সিট নিয়ে ঝামেলা চলতেই থাকবে।


২)শিক্ষা,না বলে পারছি না।দেশে নারী শিক্ষা এগিয়েছে অনেক,এর পরেও গার্লস কলেজ,মহিলা মেডিকেল কলেজ,মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়,আবার আরো সাধারনের মাঝে হাজার কোঠা।
লজ্জাস্কর।
কি লাভ,তাহলে এত ক্ষমতায়ন করে,এত সংরক্ষন করে?আলাদা মহিলা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় মানে-তারা সাধারন যে সব মেয়ে,সব ছেলে দের সাথে লড়াই করে বুয়েট,মেডিকেল,বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলো,তাদের চেয়ে নিম্ন প্রমান কারার উপপাদ্য!
আমি হতাশ।সত্যি হতাশ।


আজ রেজাল্টের দিকে তাকান,পাশের দিক থেকে ছেলেদের চেয়ে মেয়ে রা এগিয়ে,তারপর ও আমরা মেয়েদের কে যারা ক্ষমতায় আছে মহিলায় উপবিষ্ট,তারাই বলে দিচ্ছে,নারী-অবোলা,দুর্বল,তারা ছেলেদের সমতুল্য নয়,তাই তাদের ত্রাণরুপই মহিলা আসন,তারাই করে নারীজাগরন,নারী মুক্তি,নারী আন্দোলন।


৩)চাকরী তে নারী দের ম্যাটারনিটি লিভ,আমি নারীর যোগ্য সন্মান,মনে প্রানে সমর্থন করি,কারন কোনো পুরুষের সে ক্ষমতা নেই।নারীর আছে,নারী -মা,বোন,স্ত্রী,কন্যা।
কি সে পিছিয়ে?সে?
নাহ।পিছিয়ে না,বরঞ্চ এগিয়ে,তারপরেও কেন মাঠ পর্যায়ে নারীদের দিলে নিজেই বলে ম্যাম,বোঝেন তো,মেয়ে মানুষ,ও সব কাজ কি আমাদের দিয়ে হয়?অথচ এই সেই মহিলা,যিনি নারী সম-অধিকার আন্দোলনের পুজিতে চাকরী টা পেয়েছিলেন।
আর্মি তে যেখানে কমান্ডো,প্যারাকমান্ডো,আগে দেখেছি মেয়ে দের কে জিডিপি-এডমিন এ দেয়া হতো,এখন জিডিপি পাইলট ও হচ্ছে,কিন্তু যে আন্দোলনের দোহাই দিয়ে চাকরীর পর ফায়দা লুটে তাকে কি বলবেন?
আবারো তাদের দেখে বলবেন
সাত কোটি বাঙ্গালীর
হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাংগালী করে
মানুষ করো নি।

_______________________________


ডা. মেহেদী হাসান অয়ন
সুলেখক। চিকিৎসক, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল ।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়