Ameen Qudir

Published:
2018-07-24 16:38:23 BdST

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ফরমান: ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি চিকিৎসাও দিতে হবে মেডিকেল কলেজ শিক্ষকদের


 


ডেস্ক
________________________

বিচিত্র এক ফরমান জারি করেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি চিকিৎসাও দিতে হবে মেডিকেল কলেজ শিক্ষকদের । এ নিয়ে সারা দেশের মেডিকেল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসক শিক্ষক মহলে হাসাহাসির ঢল নেমেছে। অনেকের প্রশ্ন : স্বাস্থ্য মন্ত্রক চালায় কারা। দেশের মেডিকেল কলেজ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ন্যুনতম ধারনাও কি তাদের নেই!
মেডিকেল শিক্ষা হাতে কলমের শিক্ষা। মেডিকেল শিক্ষকরা তো সবসময় রোগী সেবা কার্যক্রম চালিয়েই যাচ্ছেন । এ নিয়ে নতুন করে উটকো ফরমান জারি করে লোক হাসানোর কি দরকার ছিল।
এ সংক্রান্ত খবরটি প্রকাশ করেছে চট্টগ্রামের শীর্ষ দৈনিক আজাদী। দৈনিক আজাদীর সৌজন্যে পাঠকদের জন্য রিপোর্ট প্রকাশ করা হল।
হাসান আকবর লিখিত রিপোর্টটি ছাপা হয়

সোমবার , ২৩ জুলাই, ২০১৮ ।
রিপোর্টে বলা হয়,
সরকারি মেডিকেল কলেজে কর্মরত শিক্ষকদেরকে ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি চিকিৎসাও দিতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান বরাবরে প্রেরিত পত্রে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ওয়ার্ড বণ্টন করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে নয়া এই নির্দেশনা জারির আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চিকিৎসকদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালানোর ব্যাপারে আটটি বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নেয়া এসব পদক্ষেপ যথাযথভাবে কার্যকর করা গেলে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্যসেবায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, দেশে স্বাস্থ্য সেবার অবস্থা বেহাল। সরকারি বেসরকারি কোন পর্যায়েই মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য সেবা নেই। সরকারি মেডিকেল কলেজ ও ইনস্টিটিউটে কর্মরত চিকিৎসকরা শিক্ষাদানে ব্যস্ত থাকেন। হাসপাতালে রোগী দেখে চিকিৎসা সেবা প্রদান নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখান না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না দেয়ায় সাধারণ মানুষ মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দেশে বহু বিশেষজ্ঞ ও ভালো মানের চিকিৎসক থাকলেও তাদের চিকিৎসা সেবা থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত। এসব চিকিৎসকরা দিনে সরকারি চাকরিতে শিক্ষাদান করেই কাটান। বিকেল ও রাতে প্রাইভেট চেম্বার, ক্লিনিকে রোগী দেখেন। সেখানেও সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নেই বললেই চলে। বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে যারা যেতে পারেন সেখানেও লম্বা সিরিয়াল, সময়মতো এপয়েন্টমেন্ট না পাওয়াসহ নানা ঝক্কি রয়েছে। এক মাসেও একজন ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়া যায় না এমন বহু চিকিৎসক দেশে রয়েছেন। অথচ তারা হাসপাতালে শিক্ষাদানের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা প্রদান করলে দেশের স্বাস্থ্যখাত উপকৃত হবে। দেশের চিকিৎসা শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলে ১০৫ মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এসব কলেজে বর্তমানে প্রায় সাড়ে নয় হাজার শিক্ষক রয়েছেন। অথচ শিক্ষকের প্রয়োজন কমপক্ষে ২৫ হাজার জন।

বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে মানসম্পন্ন মেডিকেল শিক্ষার ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এতে মেডিকেল শিক্ষার কোন বিষয়ে কতজন শিক্ষক (অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক) থাকতে হবে তার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিএমডিসি কোন মেডিকেল কলেজে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যানুপাতে এ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ফার্মাকোলজি, প্যাথলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, কমিউনিটি মেডিসিন, মেডিসিন, সার্জারি, মাইক্রোবায়োলজি ও গাইনিতে কতজন শিক্ষক থাকবেন তা উল্লেখ করে। কোনো কলেজে প্রতিবছর যদি ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হলে সেখানে অন্তত ১৯৮জন শিক্ষক, ১০০ জন হলে ২৯৩ জন শিক্ষক এবং ২০০ জন হলে ৪০০ জন শিক্ষক থাকতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

বিএমডিসির মানদন্ড অনুযায়ী, ৩১ সরকারি মেডিকেল কলেজে কমপক্ষে ৮ হাজার ৩০০ শিক্ষক প্রয়োজন। অথচ সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষক রয়েছেন ৩ হাজার ৪৬ শিক্ষক। মানদন্ড রক্ষা করতে যে সংখ্যক শিক্ষক থাকার কথা তার থেকে ৬৩ শতাংশ শিক্ষক কম রয়েছেন। বেসরকারি ৬২ কলেজে শিক্ষক আছেন ৬ হাজার ৩৫৭ জন। আর বিএমডিসি’র মানদন্ড অনুযায়ী এসব কলেজে শিক্ষক থাকার কথা অন্ত্তত ১৭ হাজার ৫০০ জন। ৫টি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেলেও কমবেশি শিক্ষক সংকট রয়েছে।

কম শিক্ষক থাকায় শিক্ষাসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের একটু চাপে থাকতে হচ্ছে। আর এই সুযোগে চিকিৎসকদের অনেকেই স্বাস্থ্যসেবা বা হাসপাতালে রোগী দেখা থেকে পুরোপুরি বিরত থাকেন। যা স্বাস্থ্যখাতে মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা প্রদানে বড় ধরনের অন্তরায় হয়ে উঠছে। জরুরি সময়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা না থাকায় জুনিয়র চিকিৎসকরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। ভুল করেন। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এঅবস্থার অবসানে একটি মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দেশের ৩১টি সরকারি মেডিকেল কলেজ এবং ইনস্টিটিউটে কর্মরত সকল চিকিৎসককে শিক্ষাদানের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা প্রদানের নির্দেশ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ক্লিনিক্যাল বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকগণের নামে বিশেষায়িত ওয়ার্ড বন্টন করে মন্ত্রনালয়ে রিপোর্ট প্রদান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব রেহানা ইয়াছমিন স্বাক্ষরিত স্মারক নম্বর–৪৫.১৫৫.১১৪.০০,০০,০১৪,২০১১–৭৯৫মুলে এ নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের একাধিক শিক্ষক বলেছেন, সরকারি কলেজের চিকিৎসকরা শিক্ষা সেবার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবাও দিয়ে থাকেন। তারা শিক্ষা দানের ব্যাপারে এত ব্যস্ত থাকেন যে হাসপাতালে রোগী দেখার ক্ষেত্রে সবসময় সময় করে উঠতে পারেন না। তবে অধিকাংশ চিকিৎসকই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে রোগী দেখেন। রাউন্ড দেন। সরকারের এই নির্দেশনায় চিকিৎসা সেবায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলেও সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।

____________

খবরের লিঙ্ক :https://dainikazadi.net/%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A6%BF-%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%95/

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়