Ameen Qudir

Published:
2018-07-19 19:06:32 BdST

জি পি এ তে ৫ পাওয়া সন্তানের অভিভাবকের কাছে অভাজনের খোলা চিঠি


 


মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
________________________________

প্রিয় অভিভাবক ,
সালাম ।
সদ্য প্রকাশিত এইচ এস এস সি পরীক্ষায় আপনার সন্তান জিপিএ ৫ পেয়েছে ।দীর্ঘ দুই বছর নিরলস শ্রম সাধনায় এই সাফল্য নিঃসন্দেহে অনেক বড় অর্জন ।আমি গভীর আনন্দে আমাদের সন্তানদের অভিনন্দন জানাই ।প্রিয় অভিভাবক,আপনারা যারা সন্তানকে এই পর্যন্ত আনতে সঠিক পথ দেখিয়েছেন ,অনুপ্রাণিত করেছেন তাঁদেরকেও জানাই মোবারকবাদ ।জানি ,কত বিনিদ্র রজনী কেটেছে ।সমুদ্র সমান শারীরিক –মানসিক কষ্ট করেছেন ।নিজে খেয়ে না খেয়ে সন্তানকে ভালমন্দ খাইয়েছেন ।নিজেদের অনেক সুখ-সুবিধা থেকে থেকে বঞ্চিত করে শিক্ষার বিপুল ব্যায়ভার বহন করেছেন ।সৃষ্টিকর্তার কাছে হাত তুলে গোপনে অবিরল অশ্রুপাত করেছেন ।
২।সামনের অল্প কদিন পরই শুরু হবে ভর্তি পরীক্ষা ।তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষার মাধ্যমে কোমলমতি আমাদের সন্তানেরা ঠাই করে নেবে মেডিকেল /,ইঞ্জিনিয়ারিং/ বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ।সেই নির্বাচনী পরীক্ষায় এই রেজাল্টটি অবশ্যই কাজে দিবে পাশাপাশি তাদেরকে আরো বেশী আত্মপ্রত্যয়ী করবে ।
৩। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল ।তাই ভর্তি পরীক্ষার পর্যন্ত তাদের সবাস্থ্য ঠিক রাখা বিশেষ দরকার ।যেটুকু চাপ তারা বহন করতে পারে তার চেয়ে বেশি দিলে শারীরিক বা মানসিক স্বাস্থ্যহানির বিরাট আশংকা থাকে ।আমাদের সন্তান কতটুকু ভার বহন করতে পারে অভিভাবক হিসেবে আমরাই সবচেয়ে ভাল জানি ।তাই অন্য কারো সাথে অসম প্রতিযোগিতায় সন্তানকে না নামিয়ে ‘সুষম’ ভার দেয়াটাই দূরদর্শিতার পরিচয় হবে ।
৪।মেধা সবার সমান থাকে না ।তাই’অমুকের সন্তান পেরেছে ,তুই পারবি না কেন”?এই চাপাচাপি হিতে বিপরীত হতে পারে ।মনে রাখতে হবে উচ্চ শিক্ষায় সীট সংখ্যা সামান্য ।তাই,ব্যপক সংখ্যক জিপিএ ৫ পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে অল্প সংখ্যকই প্রত্যাশিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে ।তাই ,ভর্তি পরীক্ষায় প্রত্যাশিত সাফল্য না আসলে ‘জীবনের সকল স্বপ্নের মৃত্যু ‘এই ভয়াল উপলব্ধি কখনই যেন তাদের মধ্যে ঢুকে না যায় ।প্রত্যাশিত সাফল্য না পেয়ে অভিভাবকের তিরস্কারে সন্তানের আত্মহননের হৃদয় বিদারক গল্প আমাদের অনেকেরই জানা ।
৫।মেধা ও পছন্দের বিষয় ভিন্নমুখী ।কেঊ সাহিত্য পছন্দ করে ,কেউ বা ছবি আঁকতে ,কেউ বা অন্য কোন বিষয় ।অনিচ্ছুক হয়ে অভিভাবকের চাপে মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যেয়ে ড্রপ আউটের সংখ্যা অনেক আগেই আশংকাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে ।
৬।সম্প্রতি ‘প্রাইভেট’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে।অনেক প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণগত মান নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন ।তাই এইগুলির যথেষ্ট তথ্য –উপাত্ত সংগ্রহ করেই সিধান্ত নেয়া উচিৎ ।
৭।বিদেশে পড়াশুনা করানোর কথাও বিবেচনায় আনা হয় ।সেখানেও ভুঁই ফোঁড় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ।আছে ,মোটা টাকা খরচের ধাক্কা ।সেটি সামলে নেয়ার ক্ষমতা বিবেচণা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ।আন্ডার গ্রাজুয়েট স্তরে সদ্য কৈশোর পেরুনো বয়েসে ভিনদেশী সভ্যতার খোলামেলা পরিবেশে কেঊ যেন পথভ্রষ্ট না হয় সেটিও প্রজ্ঞার সাথে যাচাই বাছাই করা প্রয়োজন ।
৮। সর্বোপরি ,চিত্তের সাথে মানবিক ঐশ্বর্যয়ের সমন্বয় ঘটুক ।পাঠগ্রহণ কুইনিন গেলার মত তেতো না হয়ে হোক ভালোবাসার বিষয় ।যুক্তি এবং নীতিবোধে সিক্ত হোক হৃদয় কুসুম ।সুশিক্ষিত মাত্রই স্বশিক্ষিত ।তাই, আমরা পথ দেখিয়ে দিতে পারি মাত্র ।গন্তব্যে তাদেরই পৌঁছুতে হবে ।মনন হোক আলোকিত ,অনুপ্রাণিত হোক উন্নত নৈতিক চরিত্রের দীপশিখায় ।শুধু টেনে নেয়া জীবনই নয় , বরং সৃষ্টিশীল ,আনন্দমুখর ,সমাজ- দেশের প্রতি দায়বদ্ধ হোক তাদের জীবন ।
‘আমাদের সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে ‘ !
ইতি,
মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ ,
উপ অধিনায়ক ,
আর্মড ফোর্সেস ফুড এন্ড ড্রাগস ল্যাবরটরী ,
সন্তানের এক অভিভাবক
___________________

লেখক মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়