Ameen Qudir

Published:
2018-07-17 19:13:00 BdST

"আমার নানী হজ্বে গেছিলেন ১৯৬৮ সালে "


 

অধ্যাপক ডা. রেজাউল করীম
_________________________________

আমার নানী হজ্বে গেছিলেন ১৯৬৮ সালে (যতদূর মনে পড়ে)। হজ্ব থেকে আসার সময় খেজুর, জমজম এসবের সাথে একগাদা কলম আর একটা ফিলিপস রেডিও নিয়ে এসেছিলেন। তখন গ্রামে রেডিও ক্বচিৎ দেখা যেত। বুধবারের যাত্রা, শনিবার ও রবিবারের নাটকের জন্য হা পিত্যেশ করে বসে থাকতাম। বাবা সকাল-সন্ধ্যায় খবর শুনতেন। সকালের খবরের পর রবীন্দ্রসঙ্গীত শেষ হলে রেডিও বন্ধ। দাদার বন্ধুরা বিবিধ-ভারতী শুনতে আসতো বিকেলে। নানী বলতেন-তোদের এই প্রেমিক-প্রেমিকার গান আমার ভাল লাগে না। তা যা হোক, রেডিওটা খুব কাজের হয়েছিল। আমার আবার অজয়দা, কমলদার ধারা বিবরণী ভাল লাগত।
আমার বাবার খুব হজ্বে যাবার ইচ্ছা ছিল, যদিও প্রকাশ্যে কখনো বলেননি। এখন বাবার পুরনো চিঠি গুলো মন দিয়ে পড়লে তাঁর অভিমানের কথা মনে হয়- ছেলেমেয়েরা তাঁকে হজ্বে পাঠালো না! মা বাবা আর নেই। ওদের একসাথে বেড়াতে পাঠাতে পারলে কত ভাল হত, এখন ভাবি। না, হজ্বে পাঠানোর আমার কোন ইচ্ছা ছিল না। আমার দাদা-বৌদি হজ্বে গেছিলেন আমাদের আপত্তি স্বত্বেও। আমার নিজের মনে হয়েছিল: টাকাটা এভাবে খরচ না করে বরং কোন গঠনমূলক কাজে খরচ করা যায়। কিন্তু ওরা যখন বললেন- আর কিছু না হোক বেড়ানো তো হবে, তখন আর কিছু বলার থাকে না।
কিছুদিন আগে পীর সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি সরাসরি বললেন- হজ্বে গিয়ে ওয়াহাবিদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি করার কোন ইচ্ছা তাঁর নেই। আমি ওঁর সাথে পুরোপুরি একমত।
হজ্ব হল আরব পর্যটন শিল্পের ইসলামীকরণ। বস্তুতঃ হজ্ব প্রাক-ইসলামিক প্রথা, যা নবী মান্যতা দিয়েছিলেন। ঠিক যেমন, কাবার ঐতিহ্য প্রাক-ইসলামিক, বা ইসলামের চাঁদ-তারা পতাকা প্রাক-ইসলামিক। মুসলমানদের দাড়ি রাখা, খাতনা করা, বাবরি চুল রাখা এসব মুসার উত্তারাধিকার। মুসলমানরা নিজেদের বলে দাবী করেন মাত্র। যদিও ধর্মের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
যাক, ধান ভানতে শিবের গীত গাইলাম। হজ্বে সরকারী খরচ না করে সেই অর্থ স্কুল-কলেজ বানাতে সরকার খরচ করুক।
আরেকটা কথা বলতে চাই, জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিক্ষা ছাড়া আল্লাহ-ভগবান-গড কাউকে চেনা সম্ভব নয়। জীবনের প্রথম 18টা বছর জ্ঞান শিক্ষায় অতিবাহিত করতে পারলে বিরাট-হিন্দু বা বিরাট মুসলিম দুটোই কাজে লাগবে। ফেসবুকে যেমন দড়কচা হিন্দু-মুসলিম দেখি সেরকম নয়। ঈশ্বরকে কে চেনার জন্য শুধু কোরান, শুধু বাইবেল, শুধু গীতা, শুধু গুরুবাণী, শুধু আবেস্তা পড়লে হবে না-অন্ধের হস্তিদর্শন হবে। সবকটাকে রান্না করে নরম করতে পারলে দড়কচা ভাবটা কমবে।
ধর্ম ধর্ম করে দেশটার বারোটা বাজছে। একবার মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি। তারপর নয় ধর্মকর্ম করা যাবে।
__________________________
অধ্যাপক ডা. রেজাউল করীম । কলকাতার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক। চিকৎসক নেতা। শুভচিন্তক। সর্বগ্রহনীয় ব্যাক্তিত্ব।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়