Ameen Qudir

Published:
2018-07-08 18:50:38 BdST

রোগী কথন ফার্স্ট মেটিং :শারীরিক এবং মানসিক প্রস্তুতি ছাড়াই জবরদস্তি যৌন সম্পর্ক : অত:পর






ডা. ছাবিকুন নাহার
_______________________

#ফার্স্ট_মেটিং

পাঁচ বছর পড়াশোনা করে সদ্য সার্টিফিকেট পেয়েছি।ডাক্তার পদবী নামের আগে বসছে। সব কিছু কেমন বড় বড় চোখ করে দেখি। রোগী দেখে, হিস্টোরী শুনে ডায়াগোনসিস করতে পারলে কেমন যেন সুখ সুখ অনুভূতি হয়। বুকের ভেতরটা তিরতির করে কাঁপে। এটা মনেহয় সব নব্য ডাক্তারদেরই হয়।

এমনি এক সব ভালোলাগা দিনে ইভনিং ডিউটি করছি।রক্তে ভাসতে ভাসতো এক রোগী এল। জানলাম সদ্য বিয়ে হয়েছে। এখনো তুলে নেয়নি। অথচ বিবাহ বৈধ করার কী আগ্রাসী চেষ্টা!

সেলাই করতে হয়েছে অনেকটা। রক্ত লেগেছিল প্রায় ৪ ব্যাগ। ধমক দিতে গিয়েছিলাম স্বামী পালোয়ানটিকে। বকা দিব কী! এ তো দেখি লজ্জায়, অনুতপ্তে আধমরা হয়ে আছে। বেচারা!

এই মেয়েটির কপাল খুব একটা খারাপ না। ওর সাথে স্বামীটি সব সময় ছিল। নতমুখে বউকে সেবা করত ।অন্তত হাসপাতালে যে কটা দিন ছিল। সব সময় একটা অনুতপ্তর ছায়া লেগে থাকত বেচারা স্বামীটির কপালে।

আরেকটি মেয়ে। নাম মনেহয় দয়িতা কিংবা এমন কিছু। ইন্টারে পড়ে। দেখতে মাশাল্লাহ্। মনে করেন হৈমন্তির মতো। আশ্চর্য়! রবীন্দ্রনাথের হৈমন্তিকে না চিনলে অবাক হবো না?

তো সেই হরিণীর বিয়ে হলো ঢাকা ভার্সিটির এক খুবই যোগ্য বরের সাথে। তো যোগ্য তার যোগ্যতা ফলাতে মরিয়া। ফলাফল রক্তের বন্যা।

এবার সেই শিক্ষিত যোগ্য তার মাকে অর্থাৎ হৈমন্তির শাশুড়িকে জানালো। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া বাদ দিয়ে মা ছেলে মিলে হিসাব কষতে বসল। এত্ত রক্ত, রক্তের চাকা! নিশ্চয় এই মেয়ের অন্য কোন কাহিনী আছে।

অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে যে তা চাকার আকার ধারন করে এটা ওই যোগ্য ছেলে এবং তার ততোধিক যোগ্য মা কেউই বুঝে নাই। উল্টা অপবাদ দিয়ে পাঠিয়ে দেয় বাপের বাড়ি।

আহারে হৈম। বিয়ে কি, তা বুঝে উঠার আগে এ কী
নরক যন্ত্রনা!

আমি যখন ঘটনাটা হৈমর ননদের কাছে শুনলাম, খুব রিয়েক্ট করেছিলাম। একটু বেশি মাত্রায়ই।

বললাম, 'এ কেমন অনাচার! দোষ করলা তোমরা অথচ শারিরীক কষ্ট সাথে অপবাদ সব হৈমর! '

ননদর মুখে রাজ্যের অন্ধকার। অস্ফুট স্বরে বলল, 'আমার শিক্ষিত ভাই...বুঝল না...।'

আমি বল্লাম, 'প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় কে কবে শিক্ষিত হয়েছে বলো? শিক্ষিত হতে হলে পরিশিলীত মন চাই।সেটা কজনের হয়?'

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত যোগ্য তার ভুল বুঝতে পেরে মাফ চেয়েছে। তার মা ও অনেক অনুনয় বিনয় করেছে হৈম কে ফিরিয়ে নিতে। কিন্তু হৈম তার সিদ্ধান্তে অটল।
জীবনর শুরুতে যে শিক্ষা তার হয়েছে তাতে সে এখন ভালোই পরিপক্ক। অন্তত না বলা শিখেছে।

স্যালুট হৈম। বেঁচে থাক বোন।

পৃথিবীর সব হৈমরা ভালো থাক আর সব শিক্ষিতরা পরিশীলিত হয়ে ওঠুক।

বিঃদ্রঃ- অনেকেই একটু ডিটেইলস জানতে চাচ্ছিলেন, তাদের জন্য এক্সপ্লানেশন যোগ করলাম। আশা করি এখন ক্লিয়ার হবে ব্যাপারটা।

আসুন জানি,

কেনো এত ব্লিডিং হলো?
জননাঙ্গ ছিড়ে যাওয়ায়।

জননাঙ্গ কেনো ছিড়ল?
জোর করে মেটিং করা। ফোর্সফুল কয়টাস। কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়া। ফোর প্লে নামক একটা ব্যাপার আছে এটা না জানা। যেটা রেইপের ক্ষেত্রে হয়। কোন রকম শারীরিক এবং মানসিক প্রস্তুতি ছাড়াই জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করা।

আরেহ বাবা, ভাত খেতে মন চাইল, গপাগপ চাল খেয়ে ফেললে তো হলো না।

চাল কিনে আনবেন। তারপর চাল ধোবেন। উনুনু চাপাবেন। জ্বাল হবে আস্তে আস্তে। বেশি আচ বাড়িয়ে দিলে বলক এসে মাড় গড়িয়ে পড়বে। চুলা নিবে যাব। তারপর একটা দুটা ভাত দুই আঙ্গুলে কায়দা করে টিপে দেখবেন ফুটেছে কিনা। আরেকটু বাকি... অপেক্ষা করবেন। এখানে চুলার আচ আরো কমাতে হবে। তারপর মাড় ঝরাবেন। এই ফাঁকে আপনি ভাত কী দিয়ে খাবেন তার ব্যবস্থা করবেন। বেশি তাড়া থাকলে শুধু ডিম ভাঁজা চলতে পারে। তার জন্যও আপনাকে পিঁয়াজ মরিচ কাটতে হবে, লবন দিয়ে একটু চটকাতে হবে। ফ্রাইপেনে তেল গরম করতে হবে। তারপর ডিমের মিশ্রন আস্তে করে ছাড়তে হবে, না হয় গরম তেলের ছিটায় চোখ মুখের বারোটা বাজলেও বাজতে পারে। হয়ে গেলো ডিম ভাঁজা। ভাত ও রেডি। এখন প্লেটে ভাত নিন, ডিম ভাঁজা নিন। আরেকটু পেলেটেবল করতে চাইলে এক টুকরো কাগজী লেবু নিন। দু একটা তেলে ভাঁজা টানটান মরিচ ও নিতে পারেন। তারপর এক দুই লোকমা করে মুখে পুড়েন। আহ, অমৃত!

বাবারে, সামান্য ডিম ভাত খেতেই তোমার এত প্রস্তুতি।পোলাও কোর্মার কথা তো বাদই দিলাম। ভূরিভোজে যদি তুমি এত্ত সময় ব্যায় করতে পারো, মন ভোজনে আরেকটু ধৈর্য্য আশা তো করাই যায়, কী বলো? যত আয়োজন, সময়, মায়া... ততই মজা। তৃপ্তিকর খাবারের সাথে রুচির, ধৈর্য্যর পরিমাপ সমানুপাতিক। এটা সব জায়গায়ই প্রযোজ্য রে বাপ।

আফসোস আমরা খাবার দেখলেই হামলে পড়ি। এক কামড়েই সব শেষ করে ফেলতে চাই। কী গরম কী ঠান্ডা। কী নরম কী শক্ত হাড্ডি। সব। আহারে মানুষ। একটু ধৈর্য্য, সহনশীলতা, রুচিশীলতা তোমাকে পরিপূর্ণ করতে পারে, সে পথে কেনো তোমরা হাটো না? সারাজীবনের খাবার একবেলায় খেয়ে ফেলবে এটা ক্যামনে হয় ম্যান? ক্যামনে?
_________________________

ডা. ছাবিকুন নাহার
মেডিকেল অফিসার
ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়