Ameen Qudir

Published:
2018-07-05 16:14:48 BdST

ভাষা সৈনিক হালিমা খাতুন,আপনাকে আজ বড় প্রয়োজন


 

 

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
_____________________________


অসীমের পানে রহস্যের দেশে চলে গেলেন ভাষা সৈনিক হালিমা খাতুন।মহান মুক্তিযুদ্ধকে যদি পত্র- পল্লবে বিকশিত মহীরুহ ধরা হয়,তবে ভাষা আন্দোলন তার বীজপত্র। ভাষার জন্য পৃথিবীর কিছু ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর আন্দোলনের ইতিহাস থাকলেও সুসংগঠিত, লড়াকু সংগ্রাম, সর্বোপরি রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয়ার অমর গৌরব গাঁথা শুধু বাঙালিদেরই অর্জন। সেই অকুতোভয় ভাষা আন্দোলনের পরাভব না জানা এক বীর সেনানী হালিমা খাতুন।

২।কখনও একটি ' ছবি' সহস্র বেয়নেটের চেয়েও ক্ষুরধার হয়ে উঠে । বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের নাম না জানা এক মানুষের মাথার মগজ রাজপথে ছিটিয়ে পড়া এক ছবি ভাষার লড়াইকে বেগবান করেছিল। সেই ছবিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হলের বন্ধ এক রুমে রাখা ছিল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশের চোখ এড়িয়ে বুকের ভিতরে লুকিয়ে নিয়ে আসেন হালিমা খাতুন।পরে পত্রপত্রিকায় এই ছবিটি ছাপার মাধ্যমে সারা বিশ্ববাসীর কাছে ভাষার জন্য বাঙালির জীবন বলিদানের মত মহান ঘটনার প্রামাণিক দলিল উপস্থাপিত হয়।

৩।প্রায় ছয় দশক আগে ধর্মীয় রক্ষণশীলতা উপেক্ষা করে হাতে গোনা যে কয়জন নারী আলোর পথযাত্রী প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে শিক্ষা গ্রহণ করতেন তিনি তাঁদেরই অন্যতম। বায়ান্নোতে তিনি ইংরেজী বিভাগের মেধাবী ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও বাংলা ভাষার জন্য রাজপথে নামেন।তাঁর দায়িত্ব ছিল মুসলিম গার্লস স্কুল,বাংলাবাজার গার্লস স্কুলের মেয়েদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় নিয়ে আসা। ২১ শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা প্রথম ভংগ করে হালিমা খাতুনসহ তেজোদৃপ্ত ৪ সদস্যের মেয়েদের একটি দল। তারপরের গল্প আমাদের অনেকেরই জানা।

৪।আলোর পথযাত্রী এই মহীয়সী নারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স করা সত্ত্বেও রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে নিজ মাতৃভাষায় আবার মাস্টার্স ডিগ্রীলাভ করেন।আলোর তৃষ্ণায় তিনি ১৯৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রীলাভ করেন।পরবর্তী জীবনের অধিকাংশ সময়ই কাটে শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে। ১৯৯৭ সালে অবসরের পর জাতিসংঘের উপদেষ্টা হিসেবে দুইবছর কাজ করেন এই শিক্ষাবিদ।

৫।আজ অনেক বিভ্রান্ত তারুণ্য আমাদের চেতনা ও মননের উল্টোপথের বিজাতীয় সংস্কৃতিতে বুঁদ হয়ে ভিনদেশী আবক্ষা নায়িকাদেরকে যখন ' ড্রিমগার্ল' বানায় তখন একজন ভাষা সৈনিক হালিমা খাতুনকে নতুন করে দরকার হয়ে পড়ে।

__________________________________

লেখক
মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ।
আর্মড ফোরসেস ফুড এন্ড ড্রাগ ল্যাবরেটরির উপ অধিনায়কের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছেন।

এর আগে ছিলেন আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজএ ।
ওয়েস্টার্ন সাহারায় শান্তিরক্ষী হিসেবে সফলভাবে এক বছরের কাজ শেষে আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়