Ameen Qudir

Published:
2018-06-30 17:05:32 BdST

স্মৃতি শ্রদ্ধার্ঘ্য বাংলাদেশের অর্থপেডিক সার্জারীর পথিকৃৎ অধ্যাপক ডা.রুহুল আমিনের মহাপ্রয়াণ


 


ডা. শরীফুল আলম রুবেল
___________________________


সে অনেককাল আগের কথা। ২০১৩ সাল। সার্জারী পেশাগত পরীক্ষা। একইদিনে শর্ট কেস,লং কেস আর তারপর ভাইভা। প্রথম দিকের পরীক্ষা ভালোয় ভালোয় উৎরিয়ে গেলেও ; ভাইভা পরীক্ষায় হোঁচট খাব নিশ্চিত ছিলাম। এমনিতেই সার্জারী আমার ঠিক হজম হয় না,তাঁর উপর ভাইভা বোর্ডে বসেছেন দুই নামকরা সার্জন। একজন জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেলের প্রয়াত প্রিন্সিপাল নাজমুল ইসলাম স্যার, যাঁর ভয়ে বাঘে-মহিষে এক ঘাটে পানি খায়। আর আরেকজন নর্থ-ইষ্ট মেডিকেলের সর্বজনশ্রদ্ধেয় অধ্যাপক রুহুল আমিন স্যার।

অধ্যাপক রুহুল আমিন স্যার সম্পর্কে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্লাসমেটদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ছিল এরকম, “স্যার নর্থ-ইষ্টের বিভাগীয় প্রধান ও অর্থপেডিক সার্জন। জেনারেল সার্জারীতে FCPS করেছেন বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার আগে।স্যারের ছাত্ররা এখন বড় বড় ডাক্তার। ভীষণ একাডেমিক মাইন্ডেড। সুতরাং,ভুল বললে বা উল্টা-পাল্টা বললে খবর আছে।”

পরীক্ষার হলে অধ্যাপক নাজমুল স্যার জিজ্ঞেস করলেন, ‘উন্ডের (আঘাত) ম্যানেজমেন্ট কী ?’
আমি চিঁ চিঁ করে, উন্ডের সংজ্ঞা বলা শুরু করলাম।
স্যার মাথা নেড়ে বিরক্তি নিয়ে বললেন, ‘ছাগলের মতোন আওয়াজে কথা বললে হবে ? জোরে বল।’
আমি ভয় পেয়ে,বেখেয়ালে ‘ফ্র্যাকচারের’ সংজ্ঞা বলা শুরু করে দিছি।
স্যার তখন আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘তোমারে কী জিজ্ঞেস করলাম,আর বলতেছ কী, এ.......?’
তখন ‘থট-ব্লক’ হওয়া এই পরীক্ষার্থীকে সহায়তা করতে এগিয়ে এলেন রুহুল আমিন স্যার। তিঁনি মুচকি হেসে বললেন, ‘ও তো ভুল বলে নাই,অন্য টপিকের সংজ্ঞা বলতেছে, হচ্ছে তো। ফ্র্যাকচারের টাইপ টা ও বলে ফেল ?’

(স্যার ঐদিন সহায়তা না করলে,আমার ইতিহাস হয়তো অন্যরকম হতো)

পাশ করার পরে অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন স্যার সম্পর্কে আরও অনেক খবর কানে আসত। যেমন- আমার পাশের বাসার ভদ্রলোক দীর্ঘদিনের পা-ব্যথা নিয়ে স্যারের ‘স্টেডিয়াম মার্কেটের চেম্বারে’ গেছেন। স্যার ব্যথানাশক ইন্জেকশন গোঁড়ালীতে দিলেন এবং ১৫ দিন পরে আসতে বললেন। পরদিন সেই ভদ্রলোক হাসিমুখে উপদেশসহ বললেন,’ব্যথা তো আর নাই, স্যার বাড়তি টেস্ট দেন নাই। ভিজিট এবং ওষুধের টাকা ও রাখেন নাই।আর গিযে স্যারকে কষ্ট দেয়া ঠিক হবে না। আপনাদেরকে ও এমন হতে হবে ডাক্তার সাব।’ এভাবে স্যার অনেককেই সাধ্যমতো সাহায্য-সহযোগীতা করেছেন বলে প্রায়ই শুনতাম।

সেই সাদা পান্জাবী-টুপি পড়া,সফেদ শ্মশ্রুমন্ডিত স্মীত হাস্যের জ্ঞানী মানুষ, যাকে ‘বাংলাদেশের অর্থপেডিক সার্জারীর পিতা’ ও বলা হয়; আমাদেরকে ছেড়ে গতরাত্রে চলে গেছেন মহান আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার সান্নিধ্যে। প্রিন্সিপাল নাজমুল ইসলাম স্যারের মারা যাওয়ার তো কয়েক বছর হয়ে গেল। মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের পিতৃতুল্য শিক্ষকদের মৃত্যু-পরবর্তী জীবন সহজ করে দিন এবং সেইরকম সস্নেহ ব্যবহার করুন যেমন উনারা সন্তান ভেবে আমাদের সাথে করতেন। আমরা দুয়া করি ঊনারা বেহেশতের সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্টিত হোন,যেমনটা ঊনারা আমাদের সাফল্যের জন্য দুয়া করতেন।

___________________________

ডা. শরীফুল আলম রুবেল। সুলেখক। আলোকচিত্রী।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়