Ameen Qudir

Published:
2018-06-26 16:21:33 BdST

এর চেয়ে অনেক ভালো সেই দ্বিতীয় জ্যোতিষ হওয়া:জীবনটাও বাঁচে,ভালো কিছুও মেলে


 

 

ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন
___________________________________

জানা গল্প,তবুও আবার শুনাই।

এক রাজা তার ভাগ্য গণনার জন্য জ্যোতিষ ডাকলেন।দেশের সেরা দুই জ্যোতিষ এসে হাজির।রাশি রাশি কাগজ নিয়ে তারা বসলেন,এই সেই কত আঁকিবুঁকি করলেন,নানা রকম যজ্ঞ টজ্ঞ শেষ করে বসলেন রাজা মশাইয়ের কুষ্ঠি নিয়ে।
প্রথমজন খুব মাথা নেড়ে আফসোস করে টরে বললো,
"মহারাজ,আপনার ভাগ্যই খারাপ।আপনার সব আত্মীয়পরিজন আপনার চোখের সামনে একে একে মরে যাবে।আপনি কিচ্ছুটি করতে পারবেন না।যমরাজ আপনার বাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করছে,কিন্তু অদৃষ্ট খন্ডাবেন কি করে বলুন?"

রাজা এহেন ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা শুনে রেজেমেগে একেবারে আগুন।
'এই কে আছিস,এই বেয়াদবকে এখুনি আমার সামনে থেকে নিয়ে যা,কয়েদখানায় বন্দী করে রাখ।আর কাল সকালে একে সবার সামনে শূলে চড়াবি।কত্তো বড় সাহস,বলে কি না আমার সব প্রিয়জনেরা আমার চোখের সামনে মরে যাবে,আমি কিছুই করতে পারবো না।দেখাচ্ছি ব্যাটা আমি কি করতে পারি।'

বলতে দেরি,আদেশ পালনে দেরি নাই।পাইক পেয়াদা এসে ধরে বেধে তাকে নিয়ে গেলো রাজার সামনে থেকে।

এইবার দ্বিতীয় জ্যোতিষের পালা।তিনিও এসে কুষ্টি নিয়ে বসলেন।সব দেখেটেখে মারহাবা মারহাবা করতে করতে বলতে শুরু করলেন,
"আমার অভিনন্দন গ্রহণ করুন মহারাজ।আপনি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান,আপনি আপনার বংশের মাঝে সবচেয়ে বেশিদিন বাচবেন।আপনি হবেন সবচেয়ে দীর্ঘজীবী।আহা,আমরা কতো সৌভাগ্যবান,মহারাজার মতো মানুষ আমাদের মাথায় ছায়া হয়ে থাকবেন শেষ পর্যন্ত।মারহাবা মারহাবা।"

এই না শুনে রাজা ভীষণ খুশি।এইবার আদেশ করলেন,
'এই কে আছিস,একে দশ ঘড়া সোনার মোহর দে।আর আজ থেকে সে আমার সভায় রাজ জ্যোতিষ হিসেবে থাকবে।ওর থাকার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করো।আর এই নাও,এই হীরের আংটি তোমার উপহার।'
বলে আঙুল থেকে নিজের মহামূল্যবান আঙটি খুলে তুলে দিলেন জ্যোতিষের হাতে।জ্যোতিষ আনন্দে লাফাতে লাফাতে রাজা মশাইকে কুর্ণিশ করে বিদায় নিলো রাজদরবার থেকে।

তো,কি বুঝলেন?এই দুইজন জ্যোতিষের ভবিষ্যৎ বাণী একই,এক চুল এদিক ওদিক নাই।শুধু দুইজনের উপস্থাপনায় পার্থক্য।একই কথা,শুধু ভিন্নভাবে বলা।তাতেই একজন চড়লো শূলে,আরেকজন পেলো রাজ জ্যোতিষীর পদ।

আমরা সামাজিক যোগাযোগে আজকাল কেমন যেন সেই প্রথম জ্যোতিষের মতো হয়ে যাচ্ছি।'ধর তক্তা মারো পেরেক' টাইপ।কোন সহনশীলতা নাই,যে যেভাবে পারছি,কোথাও কারও সামান্য ভুল দেখলেই ব্যক্তিগত আক্রমণ করা শুরু করে দিচ্ছি।ক্ষেত্রবিশেষে কি বলতে চেয়েছে বা বুঝাতে চেয়েছে সেটা বোঝার জন্য অপেক্ষা পর্যন্ত করছি না,আমার কাছে খারাপ মানেই খারাপ।সবার সামনে হেনস্থা না করা পর্যন্ত শান্তি মেলে না।চাইলেই তাকে ব্যক্তিগত ভাবে জিজ্ঞাসা করা যায়,কিন্তু তাতে যে তাকে সবার সামনে অপমান করা হয় না।তাই আমরা আর এই জিজ্ঞাসার ঝামেলায় যাই না,'ডাইরেক্ট ভাইঙ্গা দিমু' টাইপ আচরণ করা শুরু করি।

তাতে কি হয়?সম্পর্কে দূরত্ব বাড়ে,ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়।শেষমেশ সুন্দর একটা সম্পর্কের দুঃখজনক পরিসমাপ্তি।এই তো?
এর চেয়ে ভালো না,মানুষের সাথে সম্মান আর নম্রতা দিয়ে কথা আগানোর?কারো ভুল থাকলে তাকে সেটা হাসিমুখে ভদ্রভাবে ধরিয়ে দেয়া?কথায় আছে না,"Courtesy begets Courtesy"।এতো সুন্দর সহজ কথাটা আমরা ভুলে যাই কেন?
খুব কি দরকার মানুষকে শুরুতেই আঘাত করার?এর চেয়ে অনেক ভালো সেই দ্বিতীয় জ্যোতিষ হওয়া,তাতে জীবনটাও বাঁচে,ভালো কিছুও মেলে।সেটা রাজ জ্যোতিষীর পদ না হোক,মানুষের ভালোবাসা তো পাওয়া যায়।সেটাই বা কম কি সে?

__________________________

ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন
শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ
০২ ব্যাচ।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়