Ameen Qudir

Published:
2018-06-07 15:44:19 BdST

নকল মাংসের বার্গার : স্বাদে কোন তারতম্য নেই


ডেস্ক
___________________________

মাংস ছাড়া কি বার্গার হয়? তা কি মানুষের মুখে রুচবে? তবে মাংস না দিয়েও যদি বার্গারে মাংসের স্বাদ দেওয়া যায় তাহলে মন্দ হয় না। সেই চিন্তা থেকেই কিনা ক্যালিফোর্নিয়ার ইম্পসিবল বার্গার নামের একটি প্রতিষ্ঠান গম, আলু ও নারকেলের তেল দিয়ে তৈরি বার্গারে মাংসের স্বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছে! তাদের তৈরি নকল মাংসের বার্গার ইতিমধ্যে বেশ সাড়াও ফেলেছে। ইম্পসিবল বার্গারের যাত্রা শুরু ২০১১ সালে। এরই মধ্যে তাদের তৈরি বার্গার আমেরিকার ১ হাজার ৫০০ রেস্তোরাঁয় সরবরাহ করা হচ্ছে। গত মাসে তারা বাজার সম্প্রসারণ করেছে হংকংয়ে।

ইম্পসিবল বার্গারের প্রতিষ্ঠাতা প্রাণ রসায়নবিদ ড. প্যাট ব্রাউন। তিনি স্ট্যানফোর্ড মেডিকেল স্কুলের প্রাণ রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। সেটি হলো উদ্ভিজ্জ উপাদান দিয়ে এমন খাদ্যদ্রব্য তৈরি করা যেটি মানুষ মাংসের চেয়ে বেশি পছন্দ করবে।


ব্রাউন সিএনএনকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাকে উদ্বুদ্ধ করে (মাংস খাওয়ার) তীব্র পরিবেশগত প্রভাব। সুন্দর এ পৃথিবীকে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রক্ষা করতে চাই। পশুর ব্যবহার ও খাদ্য উৎপাদন প্রযুক্তির কারণে এ বিশ্ব আসলেই অত্যন্ত ঝুঁকির মুখে।’
কয়েক বছরের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ২০১১ সালে বাউন সফলভাবে ‘উদ্ভিজ্জ মাংস’ আবিষ্কার করেন। সেই বছরই যাত্রা শুরু হয় ইম্পসিবল ফুডসের। ব্রাউন বলেন, তাঁর খাবার প্রস্তুত প্রণালির (রেসিপি) মৌলিক অংশে আছে ‘হেম’ নামের একটি যৌগ, যেটি খাবারে মাংসের মতো ঘ্রাণ দেয়। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ইম্পসিবল বার্গারের গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ সাধারণ গরুর মাংসের বার্গারের চেয়ে ৮৭ শতাংশ কম।
প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। তারা গুগল ভেঞ্চারস ও বিল গেটসসহ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৪০ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে। তবে এটি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) অনুমোদন পায়নি। সরকারি এই দপ্তর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির তৈরি করা হেম এর আগে মানুষ খায়নি।
ব্রাউন বলেন, তারা সব নিরাপত্তা তথ্য স্বেচ্ছায় এফডিএতে হস্তান্তর করেছে। এবং তারা অত্যন্ত আশাবাদী যে তারা এফডিএর অনুমোদন পাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো এফডিএর অনুমোদন পাইনি। কিন্তু আমরা জানি, আমরা তা পেয়ে যাব।’
ব্রাউনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনে বেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষী। তিনি বলেন, ২০৩৫ সাল নাগাদ তিনি খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পশুপাখির মাংসের জায়গাটা পুরোপুরি বিকল্প মাংসের দখলে নিতে চান।
কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভোক্তার আচরণ শিগগিরই ব্যাপক পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। গবেষণা প্রতিষ্ঠান মার্কেটস্যান্ডমার্কেটসের হিসাব অনুযায়ী, মাংসের বিকল্প উপাদানের বৈশ্বিক বাজার বিস্ময়করভাবে নয়, ধীর গতিতে বাড়ছে। বর্তমানে এই বাজার ৪৬০ কোটি ডলারের। ২০২৩ সাল নাগাদ তা বেড়ে ৬৪০কোটি ডলার হবে।
আরও কিছু প্রতিষ্ঠান মাংসহীন খাবারের মাধ্যমেই ভোক্তাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। এদের মধ্যে বিয়ন্ড মিট নামের একটি প্রতিষ্ঠান গেটসের পছন্দের তালিকায় আছে। বিয়ন্ড মিট মাংসের বিকল্প হিসেবে মটরশুঁটি দিয়ে আমিষ সমৃদ্ধ খাবার উৎপাদন করে। এশিয়ায় হংকংয়ের নিরামিষ পণ্যের বিশাল প্রতিষ্ঠান চীনের বাজার দখলের চেষ্টা করছে। তাদের ‘অমনিপর্ক’ নামের শূকরের মাংসের বিকল্প খাবার তৈরি হয় সয়া, মটর, মাশরুম ও চালের আমিষে।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়