Ameen Qudir
Published:2018-06-05 22:02:13 BdST
স্বাধীন দেশে অপরাধীদের কঠোর বিচার চাই আর সেই সাথে সব আব্বুর নিরাপত্তা চাই
পিতার জন্য প্রিয় কন্যার কান্না । প্রতিকী ছবি।
ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী
____________________________
এটা সেই সময়ের কথা যখন মোবাইল ফোন তো দূর,গ্রামে গঞ্জে টেলিফোন,ডিশ লাইন এমনকি টিভি ও ছিলো না।
আব্বু দাদাবাড়ীতে দেড় ঘন্টার বাস জার্নি করে না,আট ঘন্টা লঞ্চ জার্নি করে যেতেন।বাসে উঠে টুপ করে ফোন দিয়ে,আজ আসছি বলে আসতেন না।বরং যাবার দিনে বলে যাওয়া তারিখ অনুযায়ী আসতেন।
কি এক জরুরী কাজে আব্বু দাদাবাড়ীতে গেলেন সেবার।যাবার আগে বলে গেলেন শুক্র বারে আসবেন।
শনিবারে তার অফিস।তখনকার দিনে ব্যাংকার গন শনিবারে ছুটি পেতেন না।
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই আবহাওয়া খারাপ।শুক্রবার সকালে সেটা ভয়ংকর রূপ ধারন করল।মাঝে মাঝেই বিদ্যুৎ থাকছে না।বিটিভির নিউজ জানালো,বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে।বিপদ সংকেত এর ঘোষনা এলো।
আব্বুর ততক্ষনে লঞ্চে উঠে যাওয়ার কথা।কালো মেঘে দিনভর রাতের মত অন্ধকার।
বিভীষিকাময় সে দিন - রাত।তখনকার সময় লঞ্চডুবি খুব কমন দুর্ঘটনা ছিল আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রচারের ক্রুটির কারনে।
কারো নিকট থেকে জানার নাই আব্বু কোথায়?আদৌ কি রওয়ানা করেছেন বাড়ী থেকে!করলে কটার লঞ্চে উঠেছে!কখন এসে পৌছার কথা।এখন কোথায় আছেন?কেমন আছেন!
অপেক্ষায় দিন শেষ হলো।শেষ লঞ্চ আসার সময় ও প্রায় শেষ।
মাত্র ক্লাস সিক্স এ পড়ি আমি।আমার পরে আরো দুটো বোন তখন।অনেক কিছু না বুঝলেও এটুক বুঝি যে আব্বু নামক মানুষটাই জীবনের ছায়া।উনি বাসায় না ফিরলে আম্মু আমাদের নিয়ে কোথাও ঠাঁই পাবেন না।বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি।তাও সদর দরজায় লোহার গেট ধরে দাঁড়িয়ে আছি।চোখের পানি আর বৃষ্টির পানিতে মাখামাখি চোখের কোল।
যতটুকু দোয়া দরূদ জানি সব পড়া শেষ।আল্লাহ!
আব্বু যেন সুস্থ থাকে।আব্বুর লঞ্চ যেন ডুবে না যায়।আব্বু ফিরে এলে আব্বুর সব কথা শুনব।কোন বায়না করব না।
কত্ত বছর আগেকার কথা!তবু ভুলিনি।
আজ যখন শুনলাম, এক কিশোরী গলা ব্যাকুল হয়ে বলছে, আব্বু তুমি কান্না করতেছ যে!
সেই বুক কাঁপা অনুভূতি টা,সেই নিঃস্ব লাগার অনুভূতিটা ফিরে এলো।
দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত থাকলে সঠিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিচারিক প্রক্রিয়ায় সকল অপরাধীর হোঁতা শাস্তি পাবে।অপরাধ দমন হবে।
আর এদেশে রুই কাতলের মত অপরাধীর চাষ হয়।অপরাধীর অপরাধকে পুঁজি করে ক্ষমতাসীনগন অর্থবিত্তের মালিক হন।
বছরের পর পর অপরাধীরা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে।জনগনের আই ওয়াস করতে মাঝে মাঝে নিতে হয় মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ।
একটি মাদকসেবী সন্তান বা পিতা এই সমাজের আজীবনের কান্না।
মাদক নিয়ন্ত্রনের কঠোর পদক্ষেপের বিকল্প নাই।তবে সেটা অবশ্যই একজন নিরাপরাধের ও প্রান কেড়ে নিতে পারে না।
সরকারী হর্তা কর্তা আর সরকারী গুলি ব্যবহার করে যে সকল হীনমন্য পশু রাজনৈতিক বা অন্য প্রতিপক্ষকে খুন করে সন্তানদের পিতৃহীন করল,এই দেশে তাদের বিচার চাই।
সেদিনের ঝড় বৃষ্টির রাতে বেশ দেরীতে ফিরে এসেছিল আমার আব্বু।
ব্যাকুল কিশোরীর কান্না করার পরও আব্বু ফিরে আসেনি।এটাই ছিল তার শেষ কথোপকথন তার আদরের আম্মুর সাথে।পরমূহুর্তেই বুলেটের দাম্ভিক গুলি তার জীবন কেড়ে নিয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে অপরাধীদের কঠোর বিচার চাই আর সেই সাথে সব আব্বুদের নিরাপত্তা চাই।নির্দোষের আহাজারিময় বাংলাদেশ চাই না!
_____________________________

আপনার মতামত দিন: