Ameen Qudir

Published:
2018-05-08 23:02:43 BdST

"স্যার ,মেশিনের মত কিছু আছে কিনা ?"


প্রতিকী ছবি। ছবির মডেল বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের নন।

 


অধ্যাপক ডা. সিরাজুল হক
________________________________

কিছু কিছু রোগী আছেন যারা রোগের কারণেই কিছু কিছু চিকিৎসকের সাথে সারাজীবন জড়িয়ে থাকেন কারণ এই রোগগুলিও তাদের সারাজীবন অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে থাকে ।কেউ কাউকে ছাড়েনা ।

আমার এরকমই একজন রোগী হলেন আবদুল হালিম সাহেব যিনি মুত্রনালীতে সংকোচনজনিত বাধা রোগে(stricture urethra) ভুগছেন এবং তারই জটিলতায় গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত লাগাতার কিড়নী ফেইলরে(CRF) আছেন অথচ তার বয়স মাত্র আটাশ বছর ।

কিন্তু তিনি দিব্যি ভালো আছেন এবং তার দর্জি পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন ।প্রায় প্রতি তিনমাস পরপর আসা- যাওয়ার সুবাধে তার সাথে একটা লৌকিকতার বাইরে হৃদয়ে মধুর অনুভবের মত সুসম্পর্ক গড়ে ওঠেছে ।

আশকারা পেয়ে সে বলে –স্যার আপনিও সেলাই করেন আর আমিও ।আপনি জীবিত মানুষের আর আমি তাদের কাপড়ের ।কিন্তু স্যার, সুন্দর সেলাই করার আনন্দ এখন আর তেমন পাইনা । এখন সব মেশিনে নিয়ে গেছে ।আগে কত অর্ডার পেতাম , এখন গার্মেন্টস এসে একেবারে কোনায় ঠেলে দিয়েছে ।

ভাবলাম তাইতো ,আমাদেরও তো ।কত রকমের মেশিন এমনকি রোবট পর্যন্ত এসে আমাদের হাতের সুনিপুণ সেলাইকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিচ্ছে ।সুন্দর সেলাইয়ের পর কি স্বর্গীয় আননন্দই না পাওয়া যেত । এখন টিকে থাকার জন্য হাতেরগুলি বাদ দিয়ে মেশিনে চলে যাওয়া লাগছে ।

তাকে খোঁচানোর জন্য বললাম –তাতে ভালইতো হয়েছে ।আগে আপনাদের কাছে গিয়ে একবার মাপ দাও আর একবার ট্রায়াল দাও এবং শেষে কাপড় ঠিকমত না পাওয়া থেকে বাঁচাতো গেছে ।বাব্বাহ কি ভোগান্তিইনা হত ?

‘না স্যার, এখন কাটিং মাস্টার আর সেলাই-পেস্টিং আলাদা লোকে করে এবং তাও মেশিনে ।এই যেমন আমি দ্বিতীয়টা করি ,একেবারে যা মাপ দেয় তাই ।কোন ভুল হয়না তাই ট্রায়ালও নেইনা ।তাই আমাদের কাজ ও কমেনি ।
পাশাপাশি আপনার বলা মত সপ্তাহে এক-দুইবার মুত্রনালী নল দিয়ে পরিষ্কার(CISC) ও করি । মোটামোটি আল্লায় ভালো রাখছে ‘ ।

‘তাহলে আবার আসলেন কেন ?

এবার তিনি লজ্জাবনত নয়নে নরম গলায় বলেন –স্যার, বিয়ে করেছি দেড় বছর ,প্রথম প্রথম ভালই ছিল ।এখন তিনি যেন উসখুশ করেন ,এমনে কিছু বলেননা ;গ্রামের মেয়ে এবং বয়সও মাত্র বাইশ বছর। তবে বুঝতে পারি -আগের মত হচ্ছেনা ,আপনাকে না জানিয়ে বেশ কিছু ঔষধপত্র ও খেয়েছি ; তবে লাভ হয়না ‘।

আসলে ওনার যে অবস্থা তাতে এটা খুবই স্বাভাবিক ।ধীরে ধীরে কিডনি কার্যকারিতা হারাতে থাকলে এই কর্মক্ষমতাও কমতে থাকে তবে ইচ্ছাশক্তি ভাল থাকে ।দেখলাম ঐ ধরনের সব ঔষধ ও শেষ করেছে ।চোখ তুলে বললাম –সবইতো শেষ করেছেন এখন কি চান ?

মিনমিন করে বললেন –স্যার ,এখনত মেশিনের যুগ ।তাই ভাবলাম কিছু করা যায় কিনা ?

মুখ উজ্জ্বল করে বললাম =হ্যাঁ ,আছেতো ।পেনাইল প্রোস্থেসিস (penil prosthesis) ।

_______________________

অধ্যাপক ডা. সিরাজুল হক।
অধ্যাপক, ইউরোলজি। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ।

 

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়