Ameen Qudir

Published:
2018-04-28 18:10:04 BdST

এক ডাক্তারের প্রেমের গল্প


 

 

ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন
_______________________________

আমি খুবই দায়িত্ববান এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন চিকিৎসক।যতক্ষণ রোগী দেখি,রোগীকে নিজের বাবা মা ভাই কিংবা বোনের জায়গায় বসিয়ে দেখি।কিন্তু কেন জানি বিদিতার ব্যাপারে সেই হিসাবটা খাটলো না।তাকে আমি কিছুতেই বোন হিসেবে দেখতে পারলাম না।বয়সের দোষেই কি না,তাকে আমার প্রেমিকা হিসেবে ভাবতেই বেশি ভালো লাগছিলো।

ও আচ্ছা,আমার পরিচয়টাই দেয়া হয়নি।আমি ডাক্তার নাহিয়ান,এই হাসপাতালে আছি আজ প্রায় পাচ বছর।বয়স ত্রিশ ছুই ছুই,কিন্তু নানা ব্যস্ততায় বিয়ে করা হয়ে উঠেনি।এতোদিন অবশ্য মাথাতে বিয়ের কথা আসেও নি,কিন্তু বিদিতাকে দেখে আজ মনে হচ্ছে বয়স আমার যথেষ্ট বেশিই হয়েছে বিয়ের জন্য।আরো আগে কেন দেখা হলো না বিদিতার সাথে?

যা ই হোক,বিদিতার বয়স বিশ।হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রচণ্ড পেটব্যথা নিয়ে।প্রচন্ড ব্যাথায়-আহারে,ব্যাথায় মেয়েটার ফর্সা মুখটা কেমন লাল হয়ে উঠেছিলো।রাত একটায় রীতিমতো চিৎকার করতে করতে হাসপাতালের ইমার্জেন্সী মাথায় করে ফেলেছিলো মেয়েটা।সেই রাতেই ঔষধ পত্র দিয়ে মেয়েটার ব্যাথা কমানোর ব্যবস্থা করি।তারপর সকালে ফলোআপ দিতে গেলে মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে ছোট্ট করে জানালো,"থ্যাংকস"।ইস,হাসি তো ছিলো না,আমার গলার ফাসি ছিলো।

কিভাবে এই মেয়েটাকে পাবো আমি?ওর বাবা মা কে বিয়ের প্রস্তাব দেবো?তারা যদি মানা করে দেন?উহু,কোন মানাই আমাকে বিদিতা থেকে দূরে সরাতে পারবে না।এই মেয়েকেই আমার চাই।ভাবতে ভাবতে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে আমার,কিন্তু মাথায় কিছুই আসছে না।

আজ বিদিতার ব্যাথাটা আবার বেড়েছে।মোটামুটি সবগুলো ইনভেস্টিগেশন করানো শেষ,কিন্তু ঠিক বোঝা যাচ্ছে না কেন তার এতো ব্যাথা হচ্ছে,আর কেনইবা কিছুতেই কমছে না।স্যার তাই অপারেশন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।ল্যাপারোটমি করা ছাড়া আসলে আর কিছু করারও নেই।আজ সন্ধ্যা সাতটায় অপারেশন।বিদিতার বাবা মা খুব ভয় পাচ্ছেন।স্যার নিজেও একটু দ্বিধান্বিত-খারাপ কিছু হয়ে যায় নি তো?নাহলে কিছুতেই ব্যাথা কমছে না কেন?আমি নিজেও খুব উদ্বিগ্ন।না,বিদিতার বাবা মা কিংবা স্যার যে কারণে উদ্বিগ্ন,সেই কারণে না।অনেক ভেবেও আমি কোন উপায় বের করতে পারিনি বিদিতাকে নিজের করে পাওয়ার।সম্ভব অসম্ভব সব সম্ভাবনাই ভেবেছি আমি,কিন্তু কিছুতেই কিছু উপায় করতে পারিনি।স্বাভাবিক,কোন বাপ মা'ই বা চাইবেন তার আদরের সন্তানকে একজন ভুতের হাতে তুলে দিতে?

হ্যা,আমি ভুত।জীবিত থাকা অবস্থাতেও আমি চিকিৎসকই ছিলাম,খুব ভালো চিকিৎসক ছিলাম।মাত্র পোস্ট গ্রাজুয়েশন শেষ করেছিলাম,সামনে সুন্দর ভবিষ্যৎ উকি দিচ্ছিল।এর মাঝেই,মাত্র উনত্রিশ বছর বয়সেই সড়ক দুর্ঘটনায় আমার মৃত্যু হলো।তারপর আর কি,কবরস্থানের পাশের এই হাসপাতালেই এসে জুটলাম ভুত হয়ে।সেই থেকে আমার বয়স আটকে আছে উনত্রিশে,আর বাড়েনি।

বিদিতার বাবা মা'র পাশে আমিও বসে আছি অপারেশন থিয়েটারের বাইরে।অপারেশন শেষ হয়ে যাবার কথা আরো ঘন্টা খানেক আগেই,দেরি দেখে অমঙ্গল চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছেন তারা।এই তো,মাত্রই স্যার বের হলেন অপারেশন থিয়েটার থেকে।স্যারের মুখটা এতো মলিন কেন?ভয়ে মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে বিদিতার বাবা মা'র,আর আমি কিছুতেই নিজের খুশি আটকে রাখতে পারছি না,বেচে থাকলে যে কিছুতেই আমার বিদিতাকে পাওয়া হবে না...
______________________________

ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন, ঢাকা। সাবেক শিক্ষার্থী ; শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ,০২ ব্যাচ।

 

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়