Ameen Qudir

Published:
2018-04-23 01:49:51 BdST

বাসে নারী নির্যাতনের মিথ্যে পোস্টে ফেসবুক সয়লাব প্রসঙ্গে লিখলেন এক চিকিৎসক


প্রতিকী ছবি। ছবির মডেল বা চরিত্র বাংলাদেশ বা ভারতবর্ষের নন।

 

 

ডা. নাসিমুন নাহার
________________________________

"আমাদের জেনারেশনটাই সম্ভবতঃ হবে বাংলাদেশের শেষ নারী প্রজন্ম যারা এখনো লক্ষীমন্ত খেতাব গায়ে জড়িয়ে মাইর খাচ্ছে, অত্যাচারিত হচ্ছে এত জঘন্যতম সব পদ্ধতিতে।
এই প্রজন্মের মেয়েগুলো যখন মা হবে আমরা অবশ্যই নিজেদের মেয়েবেলার কথা তো ভুলে যাব না। নিজেদের কন্যা সন্তানদেরকে আমরা এই দেশের হায়েনা স্বভাবের পুরুষ নামক কীটগুলোর জন্য একদম উপযুক্ত করেই তৈরী করব, just wait and watch. "

নতুন একটা ট্রেন্ড শুরু হয়েছে এখন ফেসবুকে।
বাসে মেয়েদের সাথে নোংরামো করা নিয়ে বেশ কিছু লেখা শেয়ার হচ্ছে । আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ এবং খুব ভালো উদ্যোগ বলেই মনে হয় । বর্তমান ডিজিটাল যুগে সহজলভ্য ফেসবুক ব্যবহারের অজুহাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভীষন সহজ হয়ে গেছে আমাদের কাছে। মাত্র একটা ক্লিকে বিশ্বের যেকোন প্রান্তে থেকে যেকোন খবর নিমেষেই পৌঁছে যায় ঘরে ঘরে।

কিন্তু কথা হচ্ছে সস্তার যেমন তিন অবস্থা ;
ঠিক তেমনি আমাদের স্বভাব হচ্ছে কষ্ট করে ব্রেইন এবং শরীর খাটিয়ে যখন কোন কাজ করতে না হয় তখন শয়তানের ছোবলে কিলবিল করে আমাদের মন এবং অলস মস্তিষ্ক। আমরা শুরু করে দেই ট্রল, ভুল এবং অসুস্থ কাজকর্ম ।

এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

এ কথা অবশ্যই সত্য যে চলার পথে হর হামেশাই ইভ টিজিংয়ের শিকার হই আমরা । বাসে রেইপ কেসের ঘটনাও নতুন না বাংলাদেশে।
কিন্তু অসংগতি পূর্ণ তথ্য এবং মনগড়া ফেইক লেখা দিয়ে লাইক,কমেন্ট,শেয়ার কেনাবেচার জন্য এত সেনসিটিভ একটা ইস্যুর ব্যবহার খুবই দুঃখজনক।
শুধু তো লাইক কমেন্ট না এখানে প্রচ্ছন্ন ভাবে খুব সুদূরপ্রসারী আরো কিছু ভয়াবহ টার্গেট জড়িয়ে আছে এসব ফেইক খবরগুলো ছড়ানোর সাথে।

বুঝি না কেন নারীদেরকে পেছনে টেনে ধরা এসব টার্গেট সেট করা লোকজন আমাদেরকে এতো বোকা ভাবে ? না, আমরা এতোটা বোকা নই। লেখাপড়া শিখেছি ব্রেইন তো পুরাই সচল।শরীরে ধারন করেছি/করব মানব সন্তান। সুতরাং শরীরের কলকব্জাও পুরোই একটিভ। কমতি যতটুকু তা সমাজ কর্তৃক সৃষ্টি এবং আরোপিত।

এদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, নেক্সট টাইম কোনো মেয়ে এই ধরনের পোষ্ট দিলে যেন সবাই সেটাকে মিথ্যা মনে করে।
মেয়েরা যাতে লেখাপড়া,চাকরি বা অন্য প্রয়োজনীয় কাজে চলাফেরা করতে অস্বস্তিতে এবং আতঙ্কে ভোগে।
মেয়েদেরকে চার দেয়ালের মাঝে বন্দী করে রাখতে কোন এক কুচক্রী মহলের ফন্দি হচ্ছে এসব।

কেন ? কেন ? বরাবর ই মেয়েদেরকে কেন্দ্র করে ইস্যু তৈরি করা হবে ? আর কত ?

তবে আনন্দের খবর কি জানেন ? আমরা আশা করি,
আমাদের জেনারেশনটাই সম্ভবতঃ হবে বাংলাদেশের শেষ নারী প্রজন্ম যারা এখনো প্রতিবাদ ছাড়াই লক্ষীমন্ত খেতাব গায়ে মেখে মাইর খাচ্ছে, অত্যাচারিত হচ্ছে এত জঘন্যতম সব পদ্ধতিতে।
এই প্রজন্মের মেয়েগুলো যখন মা হবে আমরা অবশ্যই নিজেদের মেয়েবেলার কথা তো ভুলে যাব না। নিজেদের কন্যা সন্তানদেরকে আমরা এই দেশের হায়েনা স্বভাবের পুরুষ নামক কীটগুলোর জন্য একদম উপযুক্ত করেই তৈরী করব, just wait and watch.

ছোট একটা উদাহরণ দেই।
আমার খুব ছোট একটা ফেসবুক গ্রুপ আছে।মাত্র পনেরো হাজার যার সদস্য। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাংলা ভাষাভাষির উচ্চ শিক্ষিত একদল নারী এই গ্রুপের সদস্য। যাদের অধিকাংশই নিজ পরিচয়ে মহীয়ান। জানি এটাই পুরো বাংলাদেশের নারী সমাজের চিত্র না।তবে কিশোরীবেলায় আমরা পড়েছিলাম 'তিন গোয়েন্দা'। 'ভূত থেকে ভূত' থিওরি ভালোই জানি আমরা। একদিনে কিছু বদলে যায় না।তবে শুরুটা তো একদিন কাউকে না কাউকেই করতে হয় ।আমরা পনেরো হাজার নারী অনলাইনে ইতিমধ্যেই শুরু করেছি পরিবর্তনের কেতন ওড়ানো।

#এক ডাক্তার মিম্ মি যদি পনেরো হাজার মেয়েকে কনভিন্স করে ফেলতে পারি ফেসবুকে লেখালিখি করে তাহলে হিসেব কষে দেখুন পনেরো হাজার জন মিলে আমরা কত হাজার জন নারীকে কনভিন্স করে ফেলব, ফেলবই ইনআশাল্লাহ।

আমরাই একদিন আমাদের শক্তি হয়ে উঠব। ঠিক বুঝে নিব নিজের অধিকার আর মর্যাদা। কাউকে বুঝিয়ে দিতে হবে না নারীর অবস্থান কি এই পৃথিবীতে। নিজের যোগ্যতা আর পরিশ্রম দিয়েই নিজের জায়গা তৈরি করে নিব আমরা।
আমার গ্রুপের সেই একদল মায়াবতীদের কাছ থেকেই থেকেই জেনেছে--- এই প্রজন্মের মায়েরা তার শিশু কন্যাকে লেখাপড়ার পাশাপাশি ভীষন যত্ন নিয়েই শেখাচ্ছেন প্রফেশনাল সেলফ ডিফেন্স।
সো গাইস গেট রেডি টু ফেইস আওয়ার ডটারস।
ইটস এ ওপেন চ্যালেঞ্জ।

" আমাদের (নারীর ) নিরাপত্তা দাও
আমরাই পৃথিবী বদলে দিব ঠিক দেখ।"
.____________________________________


ডা. নাসিমুন নাহার। সুলেখক। লোকসেবী চিকিৎসক।

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়