Ameen Qudir
Published:2018-04-19 16:24:12 BdST
মরছে সিরিয়ার সাধারণ নিরীহ মানুষ : মানবতার কান্না
সিরিয়ায় মানবতার কান্না। ফাইল ছবি।
ডা আশীষ দেবনাথ
_________________________
আফগানিস্তান, ইরাকের পর এবার সিরিয়া। ইস্যু কখনো মৌলবাদ, কখনো বিধ্বংসী অস্ত্র রাখার অভিযোগ কিংবা দুর্নীতি... ইত্যাদি ইত্যাদি। সিরিয়াতে পক্ষ দুটি। কলোনিয়াল উত্তর বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদের প্রজা আমরা এই দুই পক্ষেই বিভক্ত। অথচ দুটো পক্ষই যা করছে তাতে মরছে সিরিয়ার সাধারন মানুষ। আসলে মায়াকান্না করা এই আমরাও সবাই আদতে ক্ষমতারই পক্ষ। সিরিয়ার জনগনের পক্ষে কেউ নেই।
মূল কথা হলো সময় গড়ালেও ক্ষমতার চরিত্র কিন্তু পাল্টায়নি। কয়েক শতক পূর্বে এই ইউরোপই বিশ্বকে আবিষ্কারের নেশায় চারিদিকে ছড়িয়ে যাবার পর অন্যের ভূমিতে একইরকম ভাবে নিজেরা মারামারিতে লিপ্ত ছিল। কারন একটাই ক্ষমতা, শোষন। আর তখনও আমরা কেউ এই পক্ষ, কেউ সেই পক্ষের তাঁবেদারী করেছিলাম। এখন বিশ্বের মানুষ উপনিবেশিক শারীরিক দাসত্ব থেকে মানসিক দাসত্বের যুগে প্রবেশ করেছে মাত্র। ভারতবর্ষের কথাই ভাবুন। নবাব সিরাজের মৃত্যু দিয়ে শারীরিক দাসত্বের সূচনা হলে মানসিক দাসত্বের বলি নেতাজী সুভাষ।
কেন এমনটা হলো? কারনটাও বুঝি আমাদের জিনেই লুকিয়ে। অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মত মানুষও জেনোফোবিক (Xenophobic)। সে তার নিজ এলাকা, সংস্কৃতির বাইরের মানুষকে ভয় পায়, ঘৃণা করে। প্রথম যখন কোন এলাকার মানুষ তার পার্শ্ববর্তী এলাকা/ গোষ্টী/ সংস্কৃতির মানুষকে আবিষ্কার করে সে তাদের মানুষ বলেই মানতে চায়নি। নিজেকেই সে মনে করেছে আসল মানুষ রূপে। আর তাই সভ্যতার শুরুও এই 'আমরা' বনাম 'তারা' বিভাজন এবং রক্তপাতের মধ্য দিয়ে।
প্রাচীন সাম্রাজ্যগুলো রক্তপাতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হলেও তারা বিভিন্ন জাতি, গোষ্টী, সংস্কৃতির এই 'আমরা'/ 'তারা' বিভাজন কমিয়ে এনেছিল। কিন্তু মানুষের উন্নত মস্তিষ্ক তাকে মুক্তি দেয়নি। কল্পজগত নির্ভর বাস্তবতা তাকে আরও জটিল বৃত্তে বন্দী করেছে। ধর্মীয় বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদী ধারনা তাকে আবারো 'আমরা' এবং 'তারা'তে বিভাজিত করেছে।
শিল্প বিপ্লবই মূলত পশ্চিমা বিশ্বকে অন্যদের থেকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। ধর্ম কিংবা জাতীয়তাবাদী বিভাজন/ দ্বন্দ্ব পেরিয়ে তারা আজ নিজেদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের শিকড়ে 'এক ইউরোপ', 'এক আমেরিকা' ভাবতে পারছে। তাদের সভ্যতার মূল মানদন্ড এটিই।
অথচ বাকী বিশ্ব কোথাও জাতীয়তাবাদী, কোথাও ধর্মীয় চেতনায় চরমভাবে বিভক্ত। সাথে মানবতাবাদ, ব্যক্তি স্বাধীনতা, নারীবাদ, সমাজতন্ত্রের মত বিবিধ কল্পজাগতিক দেয়াল। আর সবার উপরে দৈত্যরাজ পুঁজিবাদ। এইসব চিন্তা-চেতনের সুযোগেই গড়ে উঠেছে পশ্চিমা বিশ্বকে কেন্দ্র করে একবৈশ্বিক সমাজ ব্যবস্থা। তারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সিরিয়া, প্যালেস্টাইন, রোহিঙ্গা ইস্যুর মত সমস্যাগুলি। তাই এসব সঙ্কট মোকাবেলায় নিজ নিজ পরিসরে বৃহত্তর ঐক্য ব্যতিত অন্যদের মুক্তি নাই।
________________________________

আপনার মতামত দিন: