Ameen Qudir

Published:
2018-04-14 22:54:45 BdST

বাংলা নববর্ষ ও চড়ক মেলা


 


দীপংকর গৌতম
___________________________

বাঙালী উৎসব প্রবণ জাতি উৎসব তার অস্থি-মজ্জায়। যে কোন বিষযে তার উৎসব করতেই হবে। তার কিছু ধর্মীয় উৎসব আর কিছু লৌকিক, ঋতুভিত্তিক উৎসব।
ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করা হত। খাজনা আদায় সহজ করতে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুর“ হয়। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়। তবে প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির মধ্যে দেখা যায় নববর্ষকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপাচার নির্মান হয়েছে এর মধ্যে চড়ক মেলা, শিবের গাজন, অষ্টক গান, পাট চালান,বাসুর মরনসহ বিভিন্ন উৎসব রীতি দেখা যায়। বৈশাখের প্রথম দু-তিন দিনব্যাপী চড়ক পূজার উৎসব চলে। উচ্চ স্তরের লোকদের মধ্যে এ অনুষ্ঠানের প্রচলন খুব প্রাচীন নয়। তবে ভারতের পাশুপত স¤প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীনকালে এ উৎসব প্রচলিত ছিল। ভুমিকেন্দ্রিক সভ্যতার এই দেশেউর্বরতা ও প্রার্থনা স্বরূপ এ পুজার উৎপত্তি বলেও উ ল্লেখ আছে। উর্বরতা শুধু জমিতে নয় ঘরেও। যে জন্য চড়কের গাছের যে আঙ্গিকে পোঁতা হয় তা পুর“ষাঙ্গেও আকৃতি বলেই ধরা হয়। এজন্যই চড়ক গাছ যেদিন পুকুর থেকে উঠানো হয় সেদিন যেসব নারীদেও সন্তান হয় না তাদেও ওই পুকুরে øান উৎসব করা হয় সন্তান হওয়ার প্রত্যাশায়। চড়কে ঘোরার বিষয়টি চান্দ্র মাসের পরিচয় বহন করে। এজন্য পুর“ষরাও এ সময় বান -বড়শী ফোড়ার মানত করে।

চড়ক মেলা

 

এবার চড়ক গাছ সম্বন্ধে আরো একটু শোনা যেতে পারে -লম্বা চড়কগাছ। গাছের চ‚ড়া থেকে মাজা পর্যন্ত— চারটি পাখার মতো করে বাঁধা হয় চারটি মোটা বাঁশ এবং তাতে যুক্ত করা হয় মোটা-লম্বা রশি। আগের বছর উৎসব শেষে দীঘিতে ডুবিয়ে রাখা হয়েছিল চড়কগাছ। দীঘিরপাড়ে গর্ত খুঁড়ে সোজা এবং খাড়া করে পোঁতা হয় গাছ। বলিচ্ছেদ নিয়ে নৃত্য, শিবের নৃত্য ও কালীর নৃত্য দেখানো হয়। নৃত্য শেষে ঐতিহাসিক দীঘিতে ­ স্নান করে ভক্তদের জিহবা ও নাকে গহনা গেঁথে দেওয়া হয়। নৃত্যের তালে তালে চড়কগাছ ঘোরানো হয়। দেবতার পূজা-অর্চনা শেষে অপরাহ্নে মূল সন্ন্যাসী ৪ জন ভক্তের পিঠে লোহার দুটি বড়শি গেঁথে রশিতে বেঁধে চড়ক গাছে ঝুলিয়ে ঘোরানো হয়। দর্শনার্থীদের অনেকে বাতাসা আর কলা ওপরের দিকে উড়িয়ে দেন আর দর্শনার্থীরা তা কুড়িয়ে খেতে থাকেন। পূজা উপলক্ষে একসময় প্রাঙ্গণে বিশাল মেলায় রূপ নেয়। আধি পুরাণে বর্ণিত আছে, রাজা দক্ষের এক কন্যা ছিল চিত্রা । চিত্রার নামানুসারে এক নক্ষত্রর নাম করা হয় চিত্রানক্ষত্র এবং চিত্রা নক্ষত্র থেকে চৈত্র মাসের নামকরণ। তাই হিন্দু ধর্মে চৈত্রের আছে বিশেষ স্থান। চৈত্র মাসের শেষদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বসে বিধাতাকে তুষ্ট করার নানা আয়োজন। এর মধ্যে সবচেয়ে অভিনব ও প্রাচীন আয়োজন চড়ক পূজা, সে সঙ্গে মেলা। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানেও চড়ক মেলা বসে।আর সে মেলায় আসে কত শত উপাচার বহু ধরনের মিষ্টি-মন্ডা- খেলনা বায়াস্কোপ,নাগর দোলা থেকে প্রাত্যহিক ব্যবহার্য জিনিসপত্র পর্যন্ত —।

 

বাড়ি বাড়ি ছেলে-মেয়েরা যায়,বড়দের প্রনাম করে। সবাইকে তরমুজ ,বাঙ্গি, ছাতু, চিড়ে মুড়ি, মোয়া মুড়কি আরো কতোকি।সেদিন এখনো আছে।শুধু গ্রামে গেলে দেখা যায়- মানুষ যেন আপ্যায়নের জন্য অধির হয়ে আছে।চড়ক পূজা উৎসবের ১০-১২ দিন আগে থেকে বিভিন্ন এলাকার পূজারিদের মধ্যে ৪০-৫০ জন সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হয়ে গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিব-গৌরীসহ নৃত্যগীত সহকারে মাগন করেন। চড়ক পূজা পর্যন্ত — তারা পবিত্রতার সঙ্গে সন্ন্যাস ব্রত পালন করেন ও আমিষ খাদ্য গ্রহণ করেন না। সারা দিন উপবাস পালন করেন। চড়ক পূজার ২ দিন আগে থেকে পূজারিরা শ্মশানে গিয়ে পূজা-অর্চনা করেন ও শেষে গৌরীর বিয়ে, গৌরী নাচ ও বিভিন্ন গান গেয়ে ঢাকের বাজনায় সরগরম করে গোটা এলাকা প্রদক্ষিন করেন। চৈত্র মাসের শেষ দিন পূজারিরা পূজা করে পান বাটা দিয়ে চড়ক গাছকে নিমন্ত্রণ জানায়। দীঘি থেকে ভেসে ওঠে ১০০ ফুট লম্বা চড়কগাছ। গাছের চ‚ড়া থেকে মাজা পর্যন্ত— চারটি পাখার মতো করে বাঁধা হয় চারটি মোটা বাঁশ এবং তাতে যুক্ত করা হয় মোটা-লম্বা রশি। আগের বছর উৎসব শেষে দীঘিতে ডুবিয়ে রাখা হয়েছিল চড়কগাছ। দীঘিরপাড়ে গর্ত খুঁড়ে সোজা এবং খাড়া করে পোঁতা হয় গাছ। বলিচ্ছেদ নিয়ে নৃত্য, শিবের নৃত্য ও কালীর নৃত্য দেখানো হয়। নৃত্য শেষে দীঘিতে স্নান করে ভক্তদের জিহবা ও নাকে গহনা গেঁথে দেওয়া হয়।

 

নৃত্যের তালে তালে চড়কগাছ ঘোরানো হয়। দেবতার পূজা-অর্চনা শেষে অপরাহ্নে মূল সন্ন্যাসী ৪ জন ভক্তের পিঠে লোহার দুটি বড়শি গেঁথে রশিতে বেঁধে চড়ক গাছে ঝুলিয়ে ঘোরানো হয়। দর্শনার্থীদের অনেকে বাতাসা আর কলা ওপরের দিকে উড়িয়ে দেন আর দর্শনার্থীরা তা কুড়িয়ে খেতে থাকেন। পূজা উপলক্ষে একসময় প্রাঙ্গণে বিশাল মেলায় রূপ নেয়। আধি পুরাণে বর্ণিত আছে, রাজা দ¶ের এক কন্যা ছিল চিত্রা । চিত্রার নামানুসারে এক ন ক্ষত্রর নাম করা হয় চিত্রা ন ক্ষত্র এবং চিত্রা ন ক্ষত্র থেকে চৈত্র মাসের নামকরণ। তাই হিন্দু ধর্মে চৈত্রের আছে বিশেষ স্থান। চৈত্র মাসের শেষদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বসে বিধাতাকে তুষ্ট করার নানা আয়োজন। এর মধ্যে সবচেয়ে অভিনব ও প্রাচীন আয়োজন চড়ক পূজা, সে সঙ্গে মেলা। এই সব পূজার মূলে রয়েছে ভ‚তপ্রেত ও পুনর্জন্মবাদের ওপর বিশ্বাস। এর বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রাচীন কৌমসমাজে প্রচলিত নরবলির অনুরূপ। পূজার উৎসবে বহু প্রকারের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মেরঅঙ্গ বলে বিবেচিত হয়। চড়কগাছে ভক্ত বা সন্ন্যাসীকে লোহার হুড়কা দিয়ে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানো হয়। তার পিঠে, হাতে, পায়ে, জিহবায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বাণ শলাকা বিদ্ধ করা হয়। কখনো কখনো লোহার শলাকা তার জিভে ফুঁড়ে দেয়া হয়। চড়ক মেলা ব্রিটিশের সময়ে আইন করে বন্ধ করা হলেও ভারত, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টিকে আছে এ মেলা। এর মধ্য দিযে এখনও অসাম্প্রদায়িক এক চেতনার তৈরী হয় যেটা সমাজের সমস্ত অপসংস্কৃতি ও সাম্প্রদায়িক শকুন নিপাতের জন্য জরুরি।
_______________________________

দীপংকর গৌতম

 

লেখক দীপংকর গৌতম বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। প্রখ্যাত লোকসংস্কৃতিবিশারদ।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়