Ameen Qudir
Published:2018-04-11 00:12:38 BdST
'মুখোশধারী মাস্কেটবাহিনির দাপাদাপিতেও পুলিশ যোগনিদ্রায় আর রাতুলরা জেলে'
ছবি কলকাতার তরুণ কারাবন্দী ডা. রাতুলের । এ প্রতিবেদন পশ্চিম বাংলার ও ভারতবর্ষের চিকিৎসক অধিকার নিয়ে ।
ডা. রেজাউল করীম, কলকাতা।
_________________________________
একজন ডাক্তার ইউ এ পি এ আইনে গ্রেফতার হয়েছে। অল্পবয়স্ক তরতাজা যুবক দিন বদলের স্বপ্ন দেখে-এমন একটা দিন যখন অভুক্ত শিশুকে আস্তাকুড়ের অন্ন খুঁটে খেতে হবে না, সবাই নিরাপদে বাঁচতে পারবে, ধর্ম-সম্প্রদায়-জাত-খাদ্যাভ্যাস-রাজনীতির নিরিখে কেউ অপাংক্তেয় হবে না। জ্ঞান যেখানে মুক্ত হবে, গৃহের প্রাচীর যেখানে এই বসুন্ধরাকে খণ্ড ক্ষুদ্র করে রাখবে না। এ কি খুব বেশি কি চাওয়া, যা আমাদের সংবিধান দিতে পারে না?তবে কেন রাতের অন্ধকারে তাকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেল?
ভারতভূমি চিরদিন মুক্ত মনের,মুক্ত চিন্তার সমান্তরাল দ্বার খুলে রেখেছে-অগস্ত ছিলেন, আবার জাবালিও ছিলেন। চূড়ান্ত বস্তুবাদী চার্বাক দর্শন তাই স্বচ্ছন্দে ছান্দোগ্য ও বৃহদারন্যকে জায়গা করে নিয়েছে। সেই দেশে একজন মানুষকে শুধু কথা বলার অপরাধে জেলে যেতে হবে? এই যুবকের হাতে ছিল স্টেথোস্কোপ আর কিছু ওষুধ- চারিদিকে অবিবেকী মানুষের মরুভূমিতে একমাত্র মরূদ্যান।
আমরা অকাজের ভারা নিয়ে সারাদিন জাবর কাটছি, সন্তান পুত্র কলত্রের জন্য স্বার্থপর লড়াই করছি আর এই যুবক তার বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ভাঙড়ের আন্দোলন ভুল? তাহলে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম মায় তেভাগা, সব ভুল। শাসকের দৃষ্টিতে দেখলে সবই ভুল, একমাত্র ক্ষমতা সত্য, স্বৈরাচার সত্য, শোষন সত্য, স্বজনপোষণ সত্য। বাকি সব মিথ্যা।
রাতুল সেই চিকিৎসক সমাজের প্রতিনিধিও যারা নিরন্তর সেবা দিয়েও সমাজে গনশত্রুর আখ্যা পেয়েছে। অথচ, তাদের সংখ্যাও নেহাত কম নয় যারা সামান্য অর্থের বিনিময়ে নিজেকে বিকিয়ে দেয়। একই মেডিক্যাল স্কুলের একই বই পড়ে ও কিন্তু মানুষকে ভালবাসতে শিখেছে। কোন কিছুই সাধারনীকরণ করা যায় না, একের দোষে অন্যকে দোষী করা যায় না। চিকিৎসকদের মধ্যে এরকম হাজারো রাতুল আছে যারা নিছক মানুষকে ভালবেসে তাদের পাশে থাকতে চায়। আশির দশকের আন্দোলন বা সাম্প্রতিক চিকিৎসক আন্দোলন-সব সময়েই সেইসব রাতুলদের দেখা মেলে যারা দিনবদলের রঙিন স্বপ্নকে সাকার করতে গিয়ে নিজের সব কিছু বিসর্জন দেয়।
যে রাষ্ট্র তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অধিকার হরন করে সেই রাষ্ট্র গঠনের জন্যেই কি এত বলিদান হয়েছে? একদিকে ক্ষমতা দখলের জন্য জাত আর ধর্ম দিয়ে মানুষে মানুষে কুৎসিত বিভাজন হচ্ছে, অপরদিকে নিপীড়িতের অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জেলে যেতে হচ্ছে। অনুব্রতরা অবাধে মানুষের অধিকার পদদলিত করেও ললাটে বীরের জয়টীকা লাগাচ্ছে, সারা রাজ্যে মুখোশধারী মাস্কেটবাহীনির দাপাদাপিতেও পুলিশ যোগনিদ্রায় আর রাতুলরা জেলে।
কতদিন, আর কতদিন!!
__________________________

সুলেখক। অধিকারকর্মী। লোকসেবী চিকিৎসক , কলকাতা।
আপনার মতামত দিন: