Ameen Qudir

Published:
2018-04-08 16:52:47 BdST

একজন কবির নীরব মৃত্যু : শোক এপিটাফ লিখলেন প্রখ্যাত দুই কবি ও চিকিৎসক


'কফিন কাঠের ঘুম’ কাব্যগ্রন্থের কবি সালু আলমগীর


ডেস্ক
_________________________

'কফিন কাঠের ঘুম’ কাব্যগ্রন্থের কবি সালু আলমগীরের নাম হয়তো জানা নেই অনেক পাঠকের । তাঁর মর্মান্তিক প্রয়াণ ঘটেছে সম্প্রতি। কেউ তাকে স্মরণ না করলেও শোকার্ঘ লিখেছেন কবি সরদার ফারুক ও কবি ভাস্কর সাহা। দুজনেই পেশায় প্রথিতযশ চিকিৎসক ।
কবি সরদার ফারুক লিখেছেন--------------

একজন কবির মৃত্যু
---------------------
কবি সালু আলমগীরের সঙ্গে ফেসবুকেই পরিচয়। বছর দুয়েক আগে তিনি আমার সঙ্গে পরিচিত হতে চাইলেন। কেরানীগঞ্জ থেকে কাঁটাবনের কনকর্ড মার্কেটে এলেন আরেকজনকে সঙ্গে নিয়ে। গৌরবর্ণ সুদর্শন এক তরুণ, তাঁকে দেখে মনেই হয়নি তিনি কোনো দুরারোগ্য রোগে ভুগছেন! এরপর আরো কয়েকবার যোগাযোগ হলো। তাঁর লেখার সঙ্গে পরিচিত হ’লাম। হঠাৎ একদিন শুনলাম তিনি ডেলটা হাসপাতালে ভর্তি। বিলাল হোসেন, ফিরোজ আহমেদ, কিরণ আকরামুল হকসহ আরো কয়েকজন তাঁকে দেখতে গেলাম। তখনই জানলাম রোগের অবস্থা ভালো নয় । মাঝে একবার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল, কিন্তু এখন আবার কর্কটরোগ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি নিজেই বললেন হাড়ে এবং ব্রেইনেও রোগ বিস্তৃত হয়েছে। একজন চিকিৎসক হিসাবে বুঝে গেলাম সম্ভাব্য পরিণতি। তিনিও জানতেন, কিন্তু তাঁর মুখে কোনো মৃত্যুভয় দেখিনি। তিনি তাঁর লেখালেখির পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছিলেন। হাসপাতালের কেবিনেই তাঁর বিষণ্ন সেবাপরায়না স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হ’ল।

এবারের বইমেলার আগে তাঁর কবিতার বই ‘ কফিন কাঠের ঘুম’ নিয়ে কথা বললেন। তিনি চাইছিলেন তাঁর মৃত্যুর আগে বইটি প্রকাশিত হোক। তাঁর ইচ্ছে অনুসারে আমি অনুপ্রাণনের কর্ণধার মুক্তিযোদ্ধা আবু এম ইউসুফ ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললাম। তিনি সম্মত হলেন। সালু আলমগীর চাইছিলেন বইয়ের ফ্ল্যাপে আমি যেন কিছু লিখে দিই । ইউসুফ ভাইও ফোনে তাগাদা দিলেন।
বইটা বের হওয়ার পরে কবি মুদ্রনপ্রমাদের কথা জানালেন। আমি প্রকাশককে অনুরোধ করাতে সংশোধিত সংস্করণ এলো। এরপরেও তাঁর আরো দুটো বই প্রকাশিত হ’ল। শেষেরটি লেখালেখি-সহায়ক প্রবন্ধের বই ‘ পাঠপ্রাচুর্য’।

কেমন লিখতেন কবি সালু আলমগীর? আসলে আমি তাঁর বিমুগ্ধ পাঠক ছিলাম। এখানেও একাধিকবার তাঁর কবিতা শেয়ার করেছি। গদ্যের হাতও ছিল চমৎকার। ছন্দশাস্ত্র, অলঙ্কারশাস্ত্রে তাঁর ঈর্ষণীয় জ্ঞান ছিল। এসব নিয়ে খুব সহজবোধ্য করে অনেক লেখাও লিখেছেন এখানে।

কবি মিডিয়া চিনতেন না, বলাবাহুল্য মিডিয়াও তাঁকে চিনতো না। হয়তো কোনোদিন তাঁকে নিয়ে আলোচনা হবে, শোরগোল হবে। তিনি সেসব দেখতে আসবেন না। ঘুমাও শান্তিতে, প্রিয় কবি, প্রিয় মানুষ সালু আলমগীর।

কবি ও শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ভাস্কর সাহা লিখেছেন------------- ·
চলেই গেলেন সালু আলমগীর ভাই। সাহিত্যের জগতে ফুল হয়ে ফুটে ঝরে গেলেন অকালেই। রেখে গেলেন কবিতার গন্ধ। কতোই বা বয়স হয়েছিলো, সাড়ে চার বছরের একটা ছোট্ট মেয়েকে পিতৃহীন করে চলে গেলেন অচেনা ঠিকানায়। গত মাসের আটাশ তারিখ যখন তাকে দেখতে যাই স্থিতপ্রজ্ঞেরর মতোই কথা বলছিলেন তিনি। যেনো দুঃখ জয়ের নেশা! মৃত্যুকে কাছাকাছি রেখে এতো নির্লিপ্ত মানুষ আমি কমই দেখেছি। মৃত্যুকে বলছেন ডেকে এসো মৃত্যু আলিঙ্গন করি তোমায়। শেষতক মৃত্যুকে জয়ী করেই নিভে গেলেন কবি। শ্রদ্ধা ছাড়া আর কি ই বা দেবার আছে? প্রনাম কবি ।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়