Ameen Qudir

Published:
2018-04-05 16:40:47 BdST

সমাজ,রাজনীতি ও সমকালীন কবি ও লেখকদের গতি প্রকৃতি


 

অধ্যাপক ডা. অনির্বাণ বিশ্বাস
_______________________________

মানুষের পুরো জীবনই একটা রাজনীতি।
কবি/লেখকেরা এর বাইরে যাবেন কি করে ! মানুষ মাত্রই যেহেতু রাজনৈতিক প্রাণী তখন কবি/লেখকের রচনা রাজনৈতিক ইশতেহার হতে বাধ্য।
যখন কবি/লেখক বলেন আমার কোনো রাজনৈতিক অবস্থান নেই, বুঝতে হবে সেটা আরেক রাজনীতি।কবির সমস্ত ক্ষোভ দ্রোহ প্রেম রাজনীতি থেকেই আসে।

এই রাজনীতি আসে কোত্থেকে?
আসে অর্থনীতি থেকে। মানে রাজনীতি বা সংস্কৃতি অর্থনীতির উপরের কাঠামো।বাইরের দেশে কবিতা বা সাহিত্যের একটি ইকনোমিকাল ভ্যালু আছে যেহেতু তাদের সেই মাপের প্রচুর পাঠক আছে। যারা কিনা টাকা খরচ করে বইপড়ে আর সেই রয়ালিটি নিয়ে কবি বা সাহিত্যিক বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু বাঙলাভাষায় এই জিনিসটি এতদিনেও গড়ে ওঠে নি।ফলে কবি সাহিত্যিকরা বেঁচে আছেন খুব মানবেতর ভাবে।
ফলতঃ একজন সৎ কবিকেও এখন বেঁচে থাকার জন্য অনেক ধরণের কাজ করতে হচ্ছে।কারণ ক্যাপিটালিজম সবারই শ্রম বিক্রি করবে। তার কাছে কবি নাপিত নুনের দালাল সাংবাদিক সবই একইরকম।
এইখানে কবি/লেখককে পেটের জন্য, পরিচয়ের জন্য কোন প্রতিষ্ঠানের অনুগ্রহে,সরকারের অনুগ্রহে বাঁচতে হয়।যাঁরা নিজের ক্ষমতায় জীবিকা নির্বাহ করেন,তাদেরও বিবেক নীতি নিয়ে চললে স্বীকৃতি আসে না।
প্রতিষ্ঠান/সরকার যেহেতু বাজারের নিয়মে চলে, তাই ভাল গুনমানের সাহিত্য রচনা হয় না। বাজারে চিরকাল মাছের গন্ধ থাকে যে ! তাই বর্তমানে কাউকে রুমাল দিয়ে চেয়ার ঝাড়তে হয়,কেউ ত্রিশুলে কন্ডম পড়ান,কেউ 'সিলেক্টিভ সেকুলারিসম' এর ফাঁদে পড়ে 'বিবেক'চ্যূত হন,কেউ সাহিত্য রচনা ছেড়ে যে কোন বিষয়ে আগের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি ঘৃনা প্রকাশ করেন। এই ভাবে কবিতা সাহিত্য হয় না। যাঁরা এরই মধ্যে ব্যতিক্রম,তাদের কু্ৎসা করা হয়,হয়রানি করা হয়,ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কদর্য উল্লাসে মাতা হয়।

একটি প্রশ্ন আছে। সাহিত্যে সে অর্থে প্রেম উধাও কেন ?

প্রেম এক অনুভূতির ব্যাপার। মর্যাদাপূর্ন প্রেম শিক্ষা,পারিবারিক মূল্যবোধ,সমাজের ঘাত-প্রতিঘাত এবং অবশ্যই সাহিত্য/কবিতা চর্চার ওপর নির্ভর করে।
এইসময়ের ছেলে মেয়েরা সাহিত্য(ক্লাসিক) কবিতা পড়েই না। তাদের প্রেমের গতিপ্রকৃতি দিনের পর দিন তৃতীয়শ্রেনীর সিনেমা নির্ধারন করে।বাংলায় এখন উপন্যাস লেখকরা প্রেমসংক্রান্ত ভুষিমাল দিনের পর দিন অক্লান্ত ভাবে উৎপাদন করে যাচ্ছেন। তারা একটা প্রেমব্যবসার কারখানা খুলেছেন। সেই ব্যবসা এখনো চলছে। কিন্তু এটা হচ্ছে ভুলে থাকা। বাস্তবতাকে ভুলে থাকা। সাবকন্টিনেন্টের লোকজন অনেক সমস্যায় জর্জরিত।এই সমস্যা নিয়ে মহৎ সাহিত্য রচনা অবশ্যই হতে পারে,কিন্তু সেই দম কি বর্তমান সাহিত্যিকদের আছে ? অন্যদিকে আমরা যদি প্রেমের এনাটমি দেখি..তুমি যাকে ফুল দিয়ে আকর্ষন করতে চাইছো তাকে বশ করে তুমি বিছানায় নিয়ে যাবে ...এটাই সব?
কোনো বোধবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এই দুনিয়ায় ভালবাসা বা আনন্দের কামনা করতে পারে না।কারণ বর্তমান পৃথিবী এক অসুখের কারখানা।আমার এক প্রিয় দার্শনিক অ্যান্থেস্থেনিস বলেছিলেন ‘আমি বরং আনন্দ লাভের চেয়ে উন্মাদ হবো’। কবিতায় শুধু প্রেম চর্চা করা কবিদের আমার উন্মাদ বলে মনে হয়।এও একধরনের স্বার্থপরতা।

সাহিত্যের সিন্ডিকেটবাজি নিয়ে কিছু কথা।

প্রথমেই আমরা ভাবি সিন্ডিকেটটা কী। এটা একটা ভরকেন্দ্র। যেখান থেকে চাপ তৈরি হয়। মাস্তানদের সিন্ডিকেট আছে, প্রতারকদের সিন্ডিকেট আছে, দালালদের সিন্ডিকেট আছে, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট আছে। অপহরণকারীদেরও আছে। তারা সিন্ডিকেট করে কোনো কিছুকে নিয়ন্ত্রণে রাখা বা হরণ করার জন্য।কিন্তু কবিতা বা সাহিত্য এমন একটা কাজ যেখানে তোমাকে কেউ সহযোগিতা করতে পারে না। এটা একা একাই সারতে হয়।এটা তোমার নিজস্ব পাঠ, জীবনাভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গিকে নিয়ে গড়ে উঠে।
যে কবি বা সাহিত্যিক সিন্ডিকেট করবে তখন তুমি বুঝবে তার একক কোনো শক্তিমত্তা নেই।নিজেকে ও তার মতো আরো কিছু অকবি অসাহিত্যিককে নিয়ে এই ক্ষেত্রটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই সিন্ডিকেট তৈরি করে। এখানে সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য পত্রিকা সবই এখন সিন্ডিকেটের দখলে।

এভাবে সৎ সাহিত্য কবিতা তৈরী হবে কি করে ?
________________________________

- অধ্যাপক ডা. অনির্বাণ বিশ্বাস । কবি ও চিন্তক। কলকাতার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়