Ameen Qudir

Published:
2018-04-03 16:40:02 BdST

" ক্লাশ ফোরে থাকাকালে এক কাজিন আমাকে রেপ করার চেষ্টা করে"


প্রতিকী ছবি___________________________

 

প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম ____________________

আজকের সমস্যাঃ

আমি আমার ব্যাক্তিগত কিছু সমস্যার কথা বলতে চাইছি।যদি সম্ভব হয় সাহায্য করবেন।

তাজুল স্যার অথবা অন্য কোন স্যার/ম্যাডাম যদি সময় করে উত্তর দেন সেটা অনেক বড় সাহায্য হবে।

আমি একাই।কোনো ভাইবোন নাই।পারিবারিক দিক দিয়ে একাই বড় হয়েছি।ছোটবেলায় আর্থিক সমস্যা ছিল পারিবারিক ভাবে,তবে সেটা আমাকে কখনো টের পেতে হয় নি।

কিন্তু আর্থিক অবস্থার কারনে আত্নীয়স্বজন,কাজিনদের কাছ থেকে খুব অল্প বয়সেই বারবার অপমানিত হয়েছি।আল্লাহ রহমতে এখন পারিবারিক আর্থিক অবস্থা এত খারাপ না।

কিন্তু অতীতের এত খারাপ স্মৃতির এমনভাবে গঁথে গেছে,আমি সবাইকেই ঘৃনা করি।বন্ধুবান্ধব নাই।কাউকে বিশ্বাস ও করতে পারি না।যাকেই বিশ্বাস করি, সেই এমন কিছু কে বসে তার থেকে বিশ্বাসটা উঠে যায়

আম্মৃর শ্বশুড়বাড়ির লোকজন আম্মুকে মানসিক নির্যাতন করত।বিষয়টা খুব ছোট বেলা থেকেই খুব খারাপ লাগত।নিজের চোখের সামনে মা কে মারধোর খেতে দেখেছি তার শ্বশুড়বাড়ির মানুষের কারনে।ছোট থাকতে প্রতিবাদ করতে পারতাম না।

ক্লাস সিক্স থেকে, এসব নিয়ে আমি ঝগড়া করতাম।প্রতিবাদ করতাম। এসব করতে করতে এককথায় ঝগড়াটে হয়ে গিয়েছি।অনেক জোরে কথা বলি।চালচলন খুবই উগ্র আমার।মানুষের সাথে মিশি না।মিশি,যাদের ভালো লাগে শুধু তাদের সাথে।

এখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে আছি।২২ বছর চলছে।
বাসা থেকে বিয়ের জন্য ঝামেলা করছে।এত কিছু দেখেছি এত ছোট্ট লাইফে,আর কিছুতে জড়ানোর ইচ্ছা নাই।
ভয় হয় আম্মা যা ফেইস করছে সারাজীবন,আমি যা ফেইস করছি এতদিন অবধি, বিয়ের পর যদি আরো খারাপ হয়!

এসব নিয়ে সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকি।আমি ছাত্রী হিসেবে খারাপ না।তবে রেজাল্টে কন্সিসটেন্সি নাই।একবার ভাল রেজাল্ট হলে তারপর আবার খারাপ হয়ে যায়।আট ডাউন চলছেই।

কিন্তু একাকীত্বটা আর যাচ্ছে না।
বছরখানেক আগে ডিপ্রেশন এর কারনে টানা মানখানেক বাসা থেকে, রুম থেকেও বের হই নাই।
কারনটা বলছি।

আমি গার্লস স্কুল কলেজ থেকেই এসেছিলাম।ভার্সিটি তে কম্বাইন্ড।
নতুন নতুন অনেক ফ্রেন্ড হয়েছিল।ছেলে,মেয়ে সবাই।প্রথম সেমিস্টারের পর কারো মাধ্যমে কিছু স্ক্রিনশট দেখতে পেলাম।বিশ্বাস হলো না।পরে আইডি গিয়ে নিজেই ম্যাসেজ গুলো দেখেছিলাম।

আমাকে নিয়ে খুব খারাপ ভাষায় কিছু লেখা ছিল।

আমি শকে ছিলাম।এত দিন কারো সাথে মিশি নাই।ভার্সিটিতে যাও মানুষের সাথে মিশতে শুরু করলাম,ফলাফল প্রচন্ড খারাপ আসলো।

একদিনের ঘটনা বলি,
ক্যান্টিনে বসে ছিলাম।আমার পাশে দুইজন মেয়ে, দুই জন ছেলে।আর আমি।
ওরা একজন আরেকজনের শরীর স্পর্শ করছিল।আমি দেখেও না দেখার ভান করে ছিলাম।যেহেতু আমিও সেখানে,আমার সাথে এমন কিছু করার চেষ্টা করছিল আরেক জন।

আমি সাথে সাথে একটা ছেলেটার পায়ে একটা লাথি দিয়ে কিছু কথা বলে সেদিন চলে এসেছিলাম।
আর কোনোদিন সাহস পায় নি।

তারপর থেকেই আমাকে নিয়ে গবেষনা শুরু হয়ে গেল।যার কথাবার্তার নমুনা এক সেমিস্টার পরে ম্যাসেজ আকারে দেখেছি।

সেই ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে একবছর লেগেছে।আসলে ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠেছি সেটাও বলা যায় না।একদম চুপ হয়ে গেছি।

কারো সাথে মিশি না।বাসায় কেউ আসলে দেখা করি না।কারো সাথে যোগাযোগ করি না।বাসার সমস্যা ত আছেই।

এসব নিয়ে প্রায়ই আত্নহত্যার। চেষ্টা করি।মা কথা চিন্তা করলে আর সাহসে কুলায় না।

কয়েকবার ডাক্তারের কাছে যেতে চেয়েছি।বলেছে, মানসিক ডাক্তারের কাছে গেলে লোকে খারাপ ভাববে

।কি করব মাথায় আসে না।ডাক্তারের কাছে যাওয়া সম্ভব না।যদি সম্ভব হয় সাহায্য করবেন নাম প্রকাশ না করে।

একটা কথা বলা হয় নি।
ক্লাস ফোরে থাকাকালীন সময়ে আমার কাজিন আমাদের বাসায় রেইপ করার চেষ্টা করে।করতে পারে নি।
এ কথা আমি আমার পরিবারের লোকজনকে জানিয়ে ছিলাম।একটা মানুষও কোন কিছু করে নি তার বিরুদ্ধে। তার সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত বন্ধ করে নি কেউ।

পরামর্শ
তোমার জীবন কাহিনী অনেকের জন্যই শিক্ষনীয়

।শৈশবকালীন পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ আমাদের মন- মেজাজ,স্বভাব ও ব্যক্তিত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ব্যক্তিত্ব ও আবেগীয় পরিপক্কতা( ম্যাচুরিটি) অর্জন করতে হলে একটি অনুকুল,নিরাপদ ও আনন্দদায়ক শৈশবের প্রয়োজন।

দূর্ভাগ্যবশত তোমার ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি।

তুমি ছোটকালেই কাজিন দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছো অথচ তার কোন প্রতিকার পাওনি।

২য়ত: তুমি সম্ভবত একটু অতিরিক্ত "সেনসিটিভ " ধরনের।

তাই আর্থিক কারনে অন্যদের অবহেলা, অপমান তোমাকে গভীর ভাবে আহত করেছে,যে পীড়াদায়ক স্মৃতি তুমি এখনো ভুলতে পারছো না।

একই কারনে তুমি তোমার মায়ের প্রতি করা অবিচারের তীব্র প্রতিবাদ করতে।

এভাবে মন- মেজাজ,আবেগ ও স্বভাবে নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়ে যায়।ফলে হীনমন্যতা,হতাশা,ঘৃনা,মানুষের প্রতি অবিশ্বাস গাড় হয়


তদুপরি এক ছেলের যৌন হয়রানির প্রতি তোমার প্রতিবাদের কারনে তোমার নামে কুরুচিপূর্ণ ম্যাসাজ পাঠানো হয়।এরকম চরিত্র হননের কারনে তুমি আরো ভেঙ্গে পড়েছো।

মোট কথা এসব পটভূমিকায় তুমি ডিপ্রেশন এ ভুগছো,
হীনমন্যতায় ভুগছো,
বিয়ে- সংসারের প্রতি ভীতি কাজ করছে,
মানুষকে বিশ্বাস করতে পারছো না-

এভাবে নিজকে গুটিয়ে নিয়ে,চুপচাপ, নিসঙ্গ,হীনমন্য জীবন যাপন করছো।

পরামর্শ : তোমাকে অবশ্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।মনোচিকিৎসক দেখালে অন্যরা কি বলবে,ভাববে এরকম চিন্তা কেন করছো?

এখন পরিস্হিতি অনেক বদলেছে।সাইকিয়াট্রিস্টদের এখন আর মানুষ পাগলের ডাক্তার ভাবে না।এরকম লোক লজ্জা ঝেড়ে ফেলো।

তোমাকে আত্মমর্যাদা বোধ বাড়াতে হবে,
আত্মবিশ্বাস সবল করতে হবে
,মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে,
বন্ধুর সংখ্যা বাড়াতে হবে,
বাইরে বেরুতে হবে,
নিজের সম্বন্ধে,অন্যদের সম্বন্ধে ও জীবন সম্বন্ধে ভুল ও নেতিবাচক ধারনাগুলো বদলাতে হবে

এবং এভাবে একটি ইতিবাচক, জীবনমুখী, ফলপ্রসূ, কার্যকর চিন্তাপ্রনালী ও দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে ঘুরে দাড়াতে হবে-

জীবন লক্ষ্য স্হির করে পূর্ন উদ্যমে তা বাস্তবায়নে লেগে পড়তে হবে।

এরজন্য প্রয়োজনীয় সিবিটি সাইকোথেরাপি নিতে হবে।

আশা করি তুমি জীবনকে পুন:র্গঠিত করে নিয়ে, সম্মান জনক,সফল ও সুখী জীবন গড়তে পারবে।
_______________________________

প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম । সুলেখক। অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়