Ameen Qudir

Published:
2018-03-23 17:40:53 BdST

ধর্ম,বিজ্ঞান দর্শন



অধ্যাপক ডা. অনির্বাণ বিশ্বাস
________________________________

আমার এক শিক্ষকবন্ধু দর্শন নিয়ে সুন্দর একটি উদাহরণ দিয়েছিলেন। দর্শন তো কিছুই বানায় নি। না পেন্সিল, না মহাকাশযান। তাহলে দর্শনের এতো কদর কেন? তার মতে, দর্শন সেই ভাবনা যেটা বলে দেয় কেন পেন্সিল বানাতে হবে, কেন মহাকাশে যেতে হবে। আর যখন বানানোর কাজটা হয়ে যায় তখন এটা বিজ্ঞান, দর্শন না। যখন কেউ দর্শনকে মোকাবিলা করে যুক্তি, বুদ্ধি ও পদ্ধতির সাহায্যে তখন সে দর্শন চর্চাই করে।

বলা হয় ধর্ম যেমন বিশ্বাস দর্শনও একটা বিশ্বাস। এখন দুটি বিশ্বাস সাংঘর্ষিক, ফলে যিনি ধর্ম করেন দর্শন তার বিপরীত।

বিশ্বাস শব্দটা নিয়ে আমার আপত্তি আছে। ধার্মিকরা প্রায়শই ধর্মকে বিশ্বাস বলে প্রচার করেন। আবার সেই বিশ্বাসকে তারা অপরাপর বিশ্বাসের মতো একইভাবে ব্যাখ্যা করে। এটা মূলত: প্রতিপক্ষ জ্ঞানে। কিন্তু ধর্মের যে বস্তুকে (অধ্যাত্মিকও হতে পারে) তারা বিশ্বাস বলছেন তা কি অপরাপর বিশ্বাসের মতো কোন বস্তু? নাকি এরমধ্যে ফারাক আছে? বিশ্বাসের অন্তর্গত বলে ধর্মকে যদি হাজির করা হয়, তখন তা আপন বৈশিষ্ট্য হারিয়ে গড়পরতা বিষয় হয়ে যায়। ভূতে বিশ্বাস করার মতো স্বর্গে বিশ্বাস করা যায় না। একই সাথে ধর্মের যে রেফারেন্স তাতে ধর্মের নিজস্ব স্বাক্ষ্য ছাড়া কাল্পনিক বিশ্বাসের স্থান নেই। তাই ভেদযুক্ত জ্ঞানকান্ডের রেফারেন্সে সব বিশ্বাসকে এক করে তোলা যায় না।

যদি কাওকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনার জীবন দর্শন কি? এর উত্তর শুনি ‘মানুষের মতো মানুষ হওয়া’ এই ধরনের কিছু। কিন্তু এর নির্যাস আর পথের খোরাক কি এক জিনিস। এটা কি কোন মতাদর্শ... বোঝা যাচ্ছে না জীবনে কোন বিষয়টাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
হতে পারে এটা দার্শনিক বিশ্বাস। এটা পদ্ধতির প্রশ্ন..কিন্তু মতাদর্শের প্রশ্ন অন্য কিছু। বিজ্ঞানের প্রতি বিশ্বাস এটাও এক ধরনের দার্শনিক বিশ্বাস। কারণ, এই বিশ্বাস চিন্তা করার পদ্ধতির দিক থেকে। চিন্তা কিভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে চায় সেটাই আসল। আর একই সূত্র বা সংজ্ঞা দিয়ে সবকিছু ব্যাখ্যা করা যায় এমন তো না। মানবিক জ্ঞানে সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান।

এই যে বিশ্বাসের ছড়াছড়ি, সেটা দর্শনের কোন বিশ্বাস নয়। বিশ্বাস যদিও দর্শনে জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু আমরা কোন জ্ঞান নিয়ে নিঃসংশয় নই। কিন্তু দর্শনের কোন চিন্তা কিভাবে দাঁড়ায়? আপনি যদি কোন চিন্তা পদ্ধতি ধরে এগিয়ে যান, সেখানে প্রাথমিক কিছু অনুমান থাকে, যেটা দর্শনের ক্ষেত্রে এমনকি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনিবার্য। কিন্তু এটা অনিবার্য নয় শেষ পর্যন্ত, সেই প্রাথমিক অনুমানে টিকে থাকা। কিন্তু ন্যূনতম অর্থে একে বিশ্বাস বললেও ধর্মকে যারা বিশ্বাস বলে, তাদের সে রকম কোন কর্মপন্থা বা সিদ্ধান্ত কোন দার্শনিক আলোচনায় আসে কি? দর্শনের রিচুয়্যাল কোথায় সেখানে ?

ধর্মে সিদ্ধান্ত থাকে। কিন্তু দর্শনে যখন সিদ্ধান্ত এসে যায়, তখন তাকে দর্শন বলে না, বিজ্ঞান বা অন্য কোন শাস্ত্র বলে। যেমন- পদার্থবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ইত্যাদি। সুতরাং, বিশ্বাসের যে ধারণার উপর দাঁড়িয়ে আমরা কথা বলি চিন্তার অন্তনিহিত সঙ্গতিকে তার সাথে এক করা যায় না।

- অনির্বাণ বিশ্বাস
( এই বিশ্বাসের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে কিন্তু..

_____________________________

অধ্যাপক ডা. অনির্বাণ বিশ্বাস, প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক, কলকাতা।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়