Ameen Qudir

Published:
2018-03-06 16:04:51 BdST

ফেসবুকের মতো ফেইক ওয়ার্ল্ড হয়ে উঠছে দিনে দিনে রিয়েল ওয়ার্ল্ড



ডা. মোরশেদ হাসান
_______________________

লাইক আর কমেন্ট পাওয়াটা নিশ্চয়ই কারও মুখ্য উদ্দেশ্য হতে পারে না। অবশ্য পেলে কারও খারাপ লাগে এমনও নিশ্চয়ই নয়। কিন্তু লাইক দেওয়া, কমেন্ট করা একটি মানুষের মুড, ব্যস্ততা ও আরও কিছু অনুষঙ্গের ওপর নির্ভর করে। আমার পেশার সঙ্গে ফেসবুকে সময় দেওয়া নিয়ে অনেককে বিস্মিত মনোভাব প্রকাশ করতে দেখেছি। শুধু ফেসবুকে থেকেই কারও জীবনচাকা নিশ্চয়ই চলে না। অস্বীকার করার উপায় নেই, ভূতের অদৃশ্য কিল খেলেই এমন অবস্থায় পড়তে হয়।

অসম্ভব ব্যস্ত মানুষরাও ফেসবুক ব্যবহার করেন। কেন করেন? নিশ্চয়ই ভালো লাগা থেকে করেন। এবং এজন্য প্রচুর সময়ও দিতে হয় নিশ্চয়ই। সারাদিনে কার হাতে কী পরিমাণ অবসর আছে তার ওপর নির্ভর করে তিনি ফেসবুকে লিখবেন বা আড্ডা মারবেন সে বিষয়টি। ফেসবুকে অনেকের সঙ্গেই ভালো বন্ধুত্ব, চেনা-জানা হয়, যা এই মাধ্যমটি না থাকলে হত না। পাশাপাশি এও স্বীকার করতে হয় এটি একটি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড, খুব খোলাখুলি বললে ফেইক ওয়ার্ল্ড। আমি গত কয়েকদিনের আলোচিত বিষয়গুলো নিয়ে বাস্তব জগতে কিছু মানুষের সঙ্গে আলাপ করার চেষ্টা করেছি। আমি দেখেছি, তাঁদের হাতে মোটেই সময় নেই এ নিয়ে আলাপ করার। অফিসে বা ফোনে এ নিয়ে আলাপ করার তেমন কোনো সুযোগ নেই, ব্যতিক্রমী কিছু ক্ষেত্র ছাড়া। এমনিতেও দোকানদার, স্বজন-বন্ধুদের সাথেও প্রসঙ্গটি তুলে দেখেছি। সবাই আসলে ব্যস্ত, কারও হাতে এত সময় নেই দেহ-মনে-প্রাণে এক বিষয় নিয়ে পড়ে থাকার। একজন অফিসযাত্রী তীর্থের কাকের মতো রাস্তার জ্যাম কখন খুলে যাবে সেদিকে তাকিয়ে থাকেন, কখন বাসায় ফিরতে পারবেন। আগের মতো পাঁচটায় অফিস শেষ, সাড়ে পাঁচটায় বাসায় ফিরে একটু পর গাছ-গাছালির পাশ দিয়ে হেঁটে এসে পারিবারিক সময় কাটাবেন, সেদিন সুদূরপরাহত।

ফলত ফেসবুকের মতো ফেইক ওয়ার্ল্ড হয়ে উঠছে দিনে দিনে রিয়েল ওয়ার্ল্ড। ইমোশন, মান-অভিমান, দুঃখ-যন্ত্রণা-ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম হয়ে উঠেছে এটি। আমরা দিনে দিনে এক অজানা গন্তব্যের দিকে ধাবিত হচ্ছি কোনো এক অচিন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার অচিন সুরে।


২.
একটা অটো সিল-ছাপ্পড় থাকা দরকার। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সিস্টেমে ক্লিক করে দেব। আর লাইক সাইন চলে যাবে সব বন্ধুদের দেয়ালে। তারপর চা খেয়ে ধীরে-সুস্থে বন্ধুদের লেখা পড়ব, ছবি দেখব। বন্ধুরা শুধু লাইক দেবে অথচ পাবে না। আমি শুধু পাব, দেব না -- এ রকম যুগ এখন আছে না কি! মেরেছ কলসির কানা, তাই বলে কী প্রেম দেব না--এ তো সত্যযুগের ডায়ালগ রে বাবা। এ ঘোর কলিকাল। বন্ধুদের মন জুগিয়ে চলতে হয়। নাহলে ঠোঁট উল্টিয়ে যেকোনো সময়ে বলে দেবে, এহ্‌ একটু লেখে আর কী, আর সেটা পড়ার জন্য হাত গুটিয়ে বসে আছি মনে হয়। হাতের পাশে বুকসেলফ নগর, সেথায় মুজতবা রচনাবলী বসত করে -- আমি একদিনও না হাতে নিলাম তারে। আর কেষ্ট-বিষ্টু-যদু-মধুকে শুধু লাইক দিয়েই যেতে হবে।
এদিকে হাজারখানেক ফ্রেন্ড নিয়ে বড় সংসার। এদিক দেখি তো ওদিক দেখে উঠতে পারি না। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মতো বন্ধু পরিকল্পনা বিভাগ বলেনি যে, ছেলে হোক মেয়ে হোক নির্দিষ্ট সংখ্যক বন্ধু নিয়েই সন্তুষ্ট থাকুন। একটা উপায় তো দরকার। সারাদিন কী ও নিয়েই থাকব নাকি?
ও নিয়ে থাকার গল্প জানেন তো? এই সেরেছে!
গল্পটা একটু কেমন কেমন! তা চোখ বন্ধ করে বলেই ফেলি --

একবার গোপাল ভাঁড়ের বাড়িতে মেয়েজামাই এসেছে। তা মেয়েজামাই শিগগির যাচ্ছেও না। অষ্ট ব্যঞ্জনের যোগাড় করতে করতে গোপালের নাভিশ্বাস অবস্থা। গোপাল জামাই বিদায় করার ফন্দি এঁটে জামাইকে ডেকে বলল, বাবা, আর বছর লেবু গাছটা লাগিয়েছিলাম। চোরের জ্বালায় একটু যে লেবু কচলে দুটো ভাত মুখে দেব সে জো নেই। রাতের বেলায় এমনই কম্ম কাবার করে দেয়। তা বাবা তুমি যখন আছ...
জামাই বলল, আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেন না বাবা, আমি দেখছি।
জামাই সন্ধ্যা থেকে অন্ধকারে লেবু গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে চোর ধরবে বলে।
এদিকে গোপাল বউকে রাতের খাবারের সময় বলল, ওগো গাছ থেকে একটা লেবু পেড়ে নিয়ে আস তো। গোপালের বউ অন্ধকারে লেবু পাড়তে গেল।
জামাই তক্কে তক্কে আছে চোর ধরার জন্য। হঠাৎ দেখল অন্ধকারে চোর লেবুগাছে হাত বাড়িয়েছে। আর অমনি চোরকে জাপটে ধরে হুঙ্কার দিয়ে বলল, এইবার ধরেছি তোকে।
অবস্থা সমঝে হৃষ্টচিত্তে গোপাল হারিকেন বাগিয়ে ধরে লেবুতলায় এসে বলল, সারাদিন কী ও নিয়েই থাকবে তোমরা। জামাই দেখল এ যে শাশুড়ি, কী লজ্জা! আর শাশুড়ি তো মরমে মরে যায়।
জামাই সে রাত পোহাতেই বিদায় নিল।
__________________________

লেখক ডা. মোরশেদ হাসান ।
Works at Medical College, Assistant Professor.
Past: Works at Ministry of Health, Maldives and ICDDR,B

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়