Ameen Qudir

Published:
2018-03-02 16:54:46 BdST

রোগী কথন'ডাক্তার যখন রোগী, ব্যাপারটা মোটামুটি ভয়াবহ: শুধু ভয়াবহ না, সুনামি টাইপ'


 


ডা.ছাবিকুন নাহার

__________________________________


অনেক দিন রোগী কথনে বিরতি চলছে। লিখছি না। না মানে লিখতে পারছি না। কেনো পারছি না? পরিস্থিতিটা ঠিকঠাক বোঝাতে গেলে, কথাটা এমন হতে পারত, লেডি ইন রেড আর নেই। ইন্নানিল্লাহ...

বালাই ষাট। দাঁড়ান বুকে বড়সরো একটু ফু্ঁক দিয়ে নেই। রোগীদের কথা প্রায়শই বলি। আজ বলব নিজের কথা। ডাক্তার যখন রোগী, ব্যাপারটা মোটামুটি ভয়াবহ। শুধু ভয়াবহ না, সুনামি টাইপ বিপর্যয় বলতে পারেন!

রোগীদের যখন কোন রোগ হয়। তারা তার কষ্ট ভোগ করে। কিন্তু রোগের কারণ জানে না সাধারনত। ফলে এর পর কি হবে? এই ভয়টা থাকে না। এটা ভালো ব্যাপার। ভালো বললাম এজন্য যে, যে লোক প্রায় মরে যাচ্ছে, সেও আশায় থাকে। আর কে না জানে, মানুষ আশায় বাঁচে?

দেখা গেলো, রোগী বুকে ব্যাথা নিয়ে ভর্তি হয়েছে। হার্ট এ্যাটাক। প্রিয়জন আকুল হয়ে জানতে চাইছে, বাঁচব তো ডক্টর? প্লিজ কিছু বলেন। নির্লিপ্ত পেশাদারির আড়ালে কষ্ট চাপা দেয় ডাক্তার। সহমর্মিতা আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেন, অস্থির হবেন না। দোয়া করেন। সব ঠিক হয়ে যাবে। অথচ ডাক্তার খুব ভালো করেই জানেন, রোগী রীতিমতো পরপাড়ে যাত্রা শুরু করে দিয়েছে।

আর সেই ডাক্তারই যখন রোগী তখন কিন্তু ব্যাপারটা এত সহজ হয় না। কেননা ডাক্তার জানেন সে কতটা ভয়াবহ অবস্থায় আছেন। কেনো হলো? এরপর কি হবে তাও জানেন। কি ভয়াবহ! খোদা! কোন সান্ত্বনা তার অস্থিরতা কমাতে পারে না। কেউ যদি জেনে যায়, সে একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে! কেমন সে অনুভূতি! কেমন?

মৃত্যুপথের সে জার্নি তে আপনাদের স্বাগত। আসুন ঘুরে আসি সেই হিমশীতল পথে। বেকার জার্নি না। যাত্রা পথের নুড়ি পাথর, আপনার পরবর্তি জীবনে কাজে লাগলেও লাগতে পারে।

০৩/০২/১৮ইং। শনিবার। সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা দিয়ে ডিএমসিতে গেলাম। খুব ক্ষিদে পেয়েছে। আজাদকে বল্লাম। সে একটু অবাক হলো মনে হয়। টম এন্ড জেরী টাইপের ক্যারেকটারে জেরীর এহেন আচরণ টমের কাছে নতুন। শুধু নতুন না, পরবর্তী এ্যাকশনের কোন প্লান কিনা সেটাও তাকে চিন্তিত করে থাকবে খানিকটা। তবে সে তার স্টাফকে দিয়ে খাবার আনালো। মোটামুটি আগ্রহ নিয়ে খেলাম। তখনো জানি না, কী অপেক্ষা করছে, আমার জন্য। কে জানত খাবার নিয়ে ঘটতে যাচ্ছে লংকা কান্ড?

আমার অবশ্য খাবার নিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা আছে। আমরা বাদাম ওয়ালা, বুট ওয়ালাদের কাছ থেকে টুকটাক খাবার কিনি। আজাদের লজিক হচ্ছে, পাঁচ দশ টাকায় আমাদের তেমন কিছু হয়তো হবে না। কিন্তু ওর তো এটা দিয়ে সংসার চলে। ও এই কাজ না করে তো ছিনতাই ও করতে পারত। আমারো মনে হলো, আরে তাইতো। কথা তো সইত্য।

খাবার নিয়ে একবার কী হলো বলি। বড় পুত্র অহন হওয়ার আগের ঘটণা। একটা বাচ্চার জন্য যতটা পাগল হওয়া যায় বলা যায় তার চেয়ে বেশি পাগল হয়ে আছি আমরা। অবশেষে... দুই মাস। আমাদের পৃথিবী সব উলট পালট করে ফেল্লাম অনাগতের জন্য। উড়াল চন্ডি বালিকা আমি। যার কাজই হচ্ছে উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়ানো। সেই লম্ফ ঝম্ফ বালিকা স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি। লাগলে বাক্সবন্দি ও ব্যাপার না। তবুও যদি রাজকন্যা ঠিকঠাক থাকে। সন্তান বলতে, আমি রাজকন্যা ই বুঝতাম। যদিও আমার রাজকন্যা বদলে গেছে রাজপুত্রে। যাহোক বাক্সবন্দি জীবনেও শেষ রক্ষা হয় না। আমাকে ভাসিয়ে দিয়ে প্লাবন আসে। রক্তের বন্যা আর ব্যাথা। প্রসব যন্ত্রণা কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি বুঝে গেলাম। দশ মাসের আর দুই মাসের ব্যাথা দেখি একই। কখনো কখনো বেশি।

বলছিলাম খাবারের কথা, মনে আছে? না থাকলে আবার বলি। এই ব্যাথার মধ্যেও গোগ্রাসে খাচ্ছি। ইলিশমাছ, ভাত। ব্যাথা আর খাবার সমানে সমান। কেহ কাউকে নাহি ছাড়ে। আজব না? ব্যাথায় কাত অবস্থায় কোন মানুষ খেতে পারে? যারা কপাল কুঁচকে ভাবছেন তাদের বলছি, প্রসব ব্যাথা থেকে থেকে ওঠে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর। আর আমার খাবার পর্ব চলছিলো, এই ফাঁকা সময়ে। কেনো খাচ্ছি, কি খাচ্ছি সেটা ব্যাপার না। রাজকন্যা হারানোর কষ্টে মাথা সর্ট সার্কিট হয়ে গিয়েছিলো বোধহয়।

গাইনী কনসালটেন্ট আমার অবস্হা দেখলেন। সুক্ষ ভাঁজ পড়লো কপালে। আজাদকে বল্লেন, তাড়াতাড়ি ওটিতে ঢুকাও। এক্ষনি ডিএনসি করা না গেলে রক্ত বন্ধ করা যাবে না। ব্যাথাও কমবে না।

ওটিতে ঢুকানো হলো। ঝামেলা বাঁধল এনেস্থিসিয়া দিতে যেয়ে। পূর্ণ অজ্ঞান করতে হলে রোগীকে অন্তত ছয় ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হয়। আর আমি কিনা এই মাত্র খেয়ে এলাম! ডাক্তার ম্যাডাম অবাক হয়ে রইলেন কিছুক্ষন। নিশ্চয় ভাবছিলেন, এরা জামাই বৌ ডাক্তার না হয়ে পাগল হলে ভালো হতো। উনি তো জানেন না, আধ পাগল তো আগেই ছিলাম; যখন জানলাম কেউ একজন আসছে। আর এখন তার প্রস্থানে ফুল পাগল।

তারপর তো ইতিহাস। এই ঔষধ সেই ঔষধ দিয়ে স্টমাক এম্পটি করা হলো। এবং কার্য সম্পাদন। সেই অভিজ্ঞতা অন্য সময় বলব। আজকের খাবারের পরবর্তী অধিবেশনে যাই।

খাদ্য পর্ব শেষে যাচ্ছি পান্থপথ। সোফা সেট পছন্দ করতে। নতুন কী ডিজাইন নাকি হিট পে হিট। যাবার পথে টিএসসিতে নতুন এক খাবারের আবিস্কার। সেটি নাকি রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলসে। খাবারের নাম কলা ভর্তা। মোটামুটি বৈপ্লবিক খাবার বললে ভুল হবে না। কাঁচ কলা, বড়ই, তেতুল, কাসুন্দি, লবন, বোম্বাই মরিচ, বীট লবন, ধনেপাতা এবং চিনি। সব মিলিয়ে হামান দিস্তায় এমন ঘুটুনী দিলো, কী বলবো! মূহুর্তে এমন চিজ তৈরী হলো! না জিবে জল ঝামেলা করে দিচ্ছে। লিখতে পারসি না...

(বাকীটা অন্য সময়)

____________________________

Image may contain: 1 person, stripes
ডা.ছাবিকুন নাহার
মেডিকেল অফিসার
ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়