Ameen Qudir

Published:
2018-02-25 16:43:57 BdST

একটাই জীবন যত পারো উপভোগ করো জটিলতা বিহীন


 


ডা. আশীষ দেবনাথ

_________________________

 

নাতিদীর্ঘ এই মানব জীবন। সাকুল্যে গড় বয়স তিন কুড়ি দশ কিংবা চার কুড়ি। তাইতো জ্ঞানীজনরা বলেন, একটাই জীবন যত পারো উপভোগ করো জটিলতা বিহীন। রসিকজনেরা বলেন বয়স কিছু না, মন'টাই আসল। মন রঙিন তো দুনিয়া রঙিন। আসলে কি তাই!! মন কি দেহ থেকে আলাদা কিছু? দেহ, মন, আত্মা- দেহতত্ত্বের এই জটিল গোলক ধাঁধায় ঘুরপাক বিশ্বচরাচর। আমি সাধারন মানব সন্তান। দৃশ্যমান নশ্বর দেহ'টাই দেখি, আত্মা বুঝি না। তবে তরঙ্গায়িত ঢেউয়ের লাহান মনের অস্তিত্ত্ব টের পাই। দেহ এবং মন একে অপরের পরিপূরক।

নানান মত ও পথের এই ভবের মেলা। সবই চলছে প্রকৃতির আপন খেয়ালে। মানুষ এই প্রকৃতিরই সন্তান। প্রকৃতির কোলেই তার জন্ম, বেড়ে উঠা, বিকাশ এবং মৃত্যু। কিন্তু মরতে কে চায়? তাইতো অনাদিকাল থেকে চিরঅমর থাকার জন্য দেবতা থেকে সমাজ নৃপতিরা কতকিছুই না করেছেন। সমুদ্র মন্থন করে অমৃতসুধা পান করেছেন! নিয়েছেন হরেকরকম আজগুবি পদক্ষেপ। কিন্তু সময়ের কাছে পরাজিত হয়েছেন তারা সকলেই। মৃত্যু শ্বাশত এবং সুন্দর। কারন মৃত্যু আছে বলেই জীবন এতটা বর্ণিল।

দুই কুড়ি দশ বছরে এসে ঠেকেছে এই জীবন চাকা। চোখ হারাচ্ছে তার স্বাভাবিক দৃষ্টি, কালো কেশ হারিয়েছে তার ঔজ্জল্য। তারুন্যের দীপ্তি হয়েছে ম্লান। খাবারে মানতে হয় হরেক রকম নিষেধাজ্ঞা। চর্বি নয়, চিনি নয়! এটা কম, ওটা বেশী- আরো কত কি? রসনা চুলোয় উঠেছে। তবে মানব জীবনতো একটাই। তাই এটাকে যথাসম্ভব সুস্থতার সহিত উপভোগ করা যায় সেটাই কাম্য।

মৃত্যুর পর এই দেহ পঁচে গলে হাঁড়গোড়ই হবে। এরপর আর কিছু নেই। পরপারে অপেক্ষমান নর্তকীদের নিয়ে বিশ্বাসীরাই মাস্তি করুক। অবিশ্বাসীদের জন্য মর্ত্যলোকের নর্তকীরা টিকে থাক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই মানুষ যা কিছু বিশ্বাস কিংবা পালন করেছে, সবই করেছে তার নিজের স্বার্থে। পৃথিবীতে যতদিন বেশী বেঁচে থাকা যায়। তাই বুঝি ভোগবাদী জীবনের এই লগ্নে এসে কেউ হয় সন্ন্যাসী, কেউবা যায় বানপ্রস্থে কিংবা কেউ করে তীর্থযাত্রা। অদৃষ্টের ছায়াতলে নিজেকে সমর্পিত করে তথাকথিত পাপমুক্তি এবং দীর্ঘায়ূ লাভের বাসনায়। কতটা মুক্তি ঘটে কেউ জানেনা!!

আমিও বাঁচতে চাই সবার মতোই। কোন অদৃষ্ট নয় বরং জাগতিক বিধি-নিয়ম মেনেই প্রকৃতির কোলে যতদিন থাকা যায়। মানব কল্যানে, মানবের মাঝে থেকেই জীবনটা উপভোগ করতে চাই। সোনার খাঁচার নানা রঙের দিনগুলি বুঝি আমার আর থাকলো না। তাই সাদা-কালো পাল তোলা নৌকায় বাকিটা সময়ে এই জীবন তরী ভিড়াতে হবে যে মহাকালের খেয়াঘাটে। প্রকৃতির সন্তান প্রকৃতির কোলেই যেতে হবে ফেরত।।

সবার জন্য শুভকামনা।।

___________________________

লেখক ডা. আশীষ দেবনাথ
বিশেষজ্ঞ এনেসথেসিওলজিষ্ট, নোয়াখালী। সিএমসি ২৮।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়