Ameen Qudir

Published:
2018-02-08 17:32:50 BdST

"আপনি প্রথমদিন বায়প্সি বলতেই আমি বুঝে নিয়েছি "


 



অধ্যাপক ডা. অনির্বাণ বিশ্বাস

_____________________
...........
চেম্বারের জানলা দিয়ে খোলা আকাশটা সুন্দর ভাবে দেখা যায়। পাশের কোন দালান এসে আকাশের কোন অংশে ভাগ বসায় নি। একটি পেঁপে গাছও আছে।তাতে অনেক পাকা পেঁপে ফলে আছে। মাঝে মাঝে পাখি এসে পাকা পেঁপে ঠুকরে খায়।

ডাক্তার মাঝে মাঝে তাকিয়ে দেখে।তাড়াতাড়ি বলার চেষ্টা করে 'পাখি পাকা পেঁপে খায়..' হয় না।সব জড়িয়ে একটি অদ্ভুত লাইন তৈরী হয়।

এই বৃদ্ধ রোগী একটু কাঠখোট্টা।সোজাসুজি ডাক্তারের চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন "কি বুঝলেন ? কি দেখলেন ?"
ডাক্তার বলে " বুকের ডানদিকে জল জমেছে।একটু ইনভেস্টিগেট করতে হবে।সেল ব্লক স্টাডি,সিটি স্ক্যান,একটা বায়প্সি ..."
"বায়প্সি ? আবার.." রোগী ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায়
"হ্যাঁ..কেন ? রোগটা পরিস্কার বুঝতে হলে ওটা দরকার..আপনি আগে বায়প্সি করিয়েছেন নাকি ?"
"না না..মানে বায়প্সি মানে আমরা ক্যান্সারের কথা ভাবি.." বৃদ্ধ অবিন্যস্ত উত্তর দেন।

 

ডাক্তার বাইরের নীল আকাশের নিচে পেঁপে গাছের দিকে তাকিয়ে বলে "বায়প্সি মানেই খারাপ রোগ এমন ভাবার কোন কারন নেই।রোগটা আমি ঠিক ধরতে পারছি না..তাই ।একটু ভর্তি হতে হবে।এক বেলাতেই সব টেষ্ট করা হয়ে যাবে। আপনি বাড়ির লোককে সঙ্গে আনবেন "

বৃদ্ধ একটু হাসেন।ডাক্তারের দৃষ্টি অনুসরন ক'রে পেঁপে গাছের দিকে তাকিয়ে বলেন "বাড়িতে আমার বৃদ্ধা স্ত্রী আছেন।আমাদের কোন সন্তান নেই। আমার স্ত্রীকে আনা যাবে না "

ডাক্তার মাথা ঘুরিয়ে রোগীর দিকে তাকায়।রোগীর দৃষ্টি বাইরে,পেঁপে গাছেরও অনেক দুরে।বৃদ্ধ বলেন "আমার এক বন্ধু কে নিয়ে আসব"
বৃদ্ধ বিদায় নেন।ডাক্তার এক দীর্ঘশ্বাস চাপে।

সব টেষ্টের রিপোর্ট আসতে চারদিন লাগে।বৃদ্ধ তাঁর বন্ধুকে নিয়ে আজ ডাক্তারের মুখোমুখি।সব রিপোর্ট দেখে ডাক্তার ইতস্ততঃদৃষ্টি নিঃক্ষেপ করে শেষে বাইরের পেঁপে গাছের দিকে স্বস্তির দৃষ্টি ফেলে বলে.." আপনার রিপোর্টে ক্যান্সার ধরা পরেছে । চিকিৎসা করলে সুস্থ থাকবেন। "
বৃদ্ধ হা হা করে হাসেন। বলেন " আমি সবই বুঝি ডাক্তারবাবু।আমার স্ত্রীরও ক্যান্সার,ব্রেস্টে।গত তিন বছর ওকে নিয়ে অনেক ছোটাছুটি করেছি।আপনি প্রথমদিন বায়প্সি বলতেই আমি বুঝে নিয়েছি।"
বৃদ্ধ একটু চুপ থেকে বলেন "ভালই হল,দুজনেই এবার একই যন্ত্রনা শেয়ার করব"
বাইরে পেঁপে গাছের দিকে তাকান বৃদ্ধ ।পাখি ঠুকে ঠুকে পাকা পেঁপে খাচ্ছে।মৃদু স্বরে বলতে থাকেন "পাখি পাকা পেঁপে খায়...পাখি পাকা পেঁপে খায়.." খুব দ্রুতলয়ে বলতে থাকেন।
অদ্ভুত ব্যাপার ! পরিস্কার সব শোনা যায়।"আমি জীবনে এত ট্যুইস্ট ফেস করেছি...এই টাঙ্গ ট্যুইস্টার গুলো খুব ইজিলি ট্যাকল করতে পারি.."
বৃদ্ধ দৃপ্ত ভঙ্গিতে চেম্বার ত্যাগ করেন।

ডাক্তার বাইরে পেঁপে গাছের দিকে তাকায়।পাখি পাকা পেঁপে খাচ্ছে।
মৃদু স্বরে তাড়াতাড়ি বলার চেষ্টা করে
পাখি পাকা পেঁপে খায়...
পাখি পাকা পেঁপে খায়..
পাখি পাপা পেঁকে খায়..
পাপি পাকা পেঁকে পায়......
নাঃ হচ্ছে না...কিছুতেই হচ্ছে না... সবাই সব কিছু পারে না।

_______________________________

- অধ্যাপক ডা. অনির্বাণ বিশ্বাস। কলকাতার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক । কবি । চিন্তক।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়