Ameen Qudir
Published:2018-02-03 21:37:46 BdST
আইসক্রিম যা গরমে গলে না :একেই বলে জাপানি বুদ্ধি !
আজিজুল শাহজী
______________________________
প্রায়সই মানুষ অনুযোগ করেন লেখার বিষয় জটিল হওয়ায় আলোচনার সুযোগ থাকে না,পাঠকের কথা মাথায় রেখে এই সপ্তাহান্তে আনলাম একটু সহজপাচ্য বিষয় আইসক্রিম।
অভ্যেস খারাপ তাই এতেও কিছু তথ্য নিয়ে আসি,তাই বলে রাখি এই সুখাদ্যটি পৃথিবীকে উপহার দেয় ফরাসিরা। গরম এসে গেল,এরপর বাঙালি আবার আইসক্রিম খাবে (যদিও শীতে খেলে গরম লাগে তবু ঐসব তত্ব আজ রাখি শিকেয় ),এখন কথা হলো এমন কেউ আছেন যিনি কাঠি বা কোন (cone ) আইসক্রিম খেয়েছেন অথচ আইসক্রিম গেলে পরে নি ? আজকাল আবার তাই আইসক্রিমের সাথে একটু বড় দোকান হলে (বা কোনো শপিং মল ইত্যাদিতে ) সঙ্গে কাগজের রুমাল মানে টিস্যু /ন্যাপকিন দিয়ে থাকে। কেমন হতো যদি আপনার আইসক্রিম প্রখর বৈশাখে গেলে যাবে না আর আপনি মনের আনন্দে এর মজা নিতে পারবেন ? হ্যা, এই অদ্ভুত আবদার পূরণ করতে নতুন উদ্ভাবনী শক্তির সাহায্যে জাপান এনেছে বিশেষ আইসক্রিম।
আইসক্রিম কি ? সোজা কথায় দুধ এবং মিষ্টি জমিয়ে তৈরী করা একটি খাবার যাতে বিবিধ স্বাদের প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম স্বাদ তৈরির রাসায়নিক বা প্রাকৃতিক বস্তু দেওয়া হয়। এই বস্তুকে দুগ্ধজাত চর্বি এবং অন্য বস্তুর মিশ্রণ করা হয়। একটি আণবিক মিশ্রণ করানো হয় দুধের ওই স্নেহজাত পদার্থ,চিনি ,বরফ ইত্যাদির। তার জন্য নানাবিধ বস্তুর দরকার হয় যার আলোচনা করলে পাঠক পালাবে। এমনিতেই খুব পড়ে না ! তাই মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।
আগে জানি আসুন উন্নত বিশ্বে এই আইসক্রিম কে কি ভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। অন্য দেশগুলোর খবর বিশেষ না জানলেও ইন্টারনেট থেকে দেখছি, সব আইসক্রিম আইসক্রিম নহে মানে ওই সব বামপন্থী কমিউনিস্ট নহে বা সব মুসলিম সহি নহের মতো কোনো বায়বীয় কিছু না। মার্কিন কৃষি দফতরের বেঁধে দেওয়া মাপ অনুযায়ী এই ধরণের হিমায়িত কোনো খাদ্যে অন্তত শতকরা ১০ ভাগ দুগ্ধজাত চর্বি এবং অন্তত ৬ শতাংশ চর্বি বিহীন কঠিন দুধের অংশ থাকতে হবে। তবে অধিক চর্বি থাকলে স্বাদ বৃদ্ধি হবে আরো ক্রিম সমেত হলে আরো লোভনীয় হবে। সাধারণত ভালো মানের আইসক্রিমের এই চর্বির ভাগ ১৪ শতাংশ বা তার একটু বেশি হয়ে থাকে তবে ১৬ শতাংশের বেশি ওঠে না কারন তা হলে দাম এবং ক্যালোরি বৃদ্ধি পায়। সবচেয়ে বড় কথা হলো তাতে মানুষ একটু আইসক্রিম খেলেই আর খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায় ফলে বিক্রি ও কমে যায়।এর অধিক জানতে মানে আমেরিকার এই বিষয়ে মাননির্ণায়ক বষয়ে খবর নিতে এই লিঙ্কে গুতো দিন : https://www.ams.usda.gov/grades-standards/ice-cream
জাপানি বুদ্ধি এবং আইসক্রিমের না গলে যাওয়ার কেরামতি :
না , কোনো বিশেষ রসায়নিক এর মাধ্যমে না,প্রাকৃতিক ভাবেই এই অসাধ্য সাধন করেছেন জাপানের বিজ্ঞানীরা।আসুন,জানি কি ভাবে তা করলেন আর এর পেছনে কি কারন ছিল।ঘটনার শুরু হয় ২০১১র জাপানের সুনামি এবং পরবর্তী ভূমিকম্পর বিপর্যয়ের থেকে। কৃষিভূমির এক বড় অংশের ফসল ছিল স্ট্রবেরি।এই স্ট্রবেরির আকৃতি খারাপ হয়ে যায় এই ভুমিকম্পে।প্রচুর পরিমানে স্ট্রবেরির আকৃতি এতো খারাপ হয়ে যায় যে খদ্দের ওই ফল কিনতেই চাইছিল না। এই অবস্থায় জাপানের বায়োথেরাপি দফতরের বিজ্ঞানীরা ভাবলেন এই স্ট্রবেরির মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক একটি রাসায়নিক পলিফেনল কে অন্তত কোনো কাজে লাগানো তাই তাদের পাচক কে একটি নতুন কোনো ডেজার্ট ধাঁচের কিছু তৈরী করে ওই অপচয় বাঁচানোর কথা বলেন। তা পাচক তো ওটা বানালো ,হলো খারাপ না কিন্তু মুশকিল হলো ওই দুধের ক্রিমের সাথে এই পলিফেনল মিশানোর পরেই ওটার জমাট বেঁধে যাওয়া আবার স্বাভাবিক অবস্থায় আসছিল না মানে একই অবস্থায় থেকে যাচ্ছিল ।ওটাই হয়ে গেল সেই আর্কিমিডিস এর ইউরেকার মতো,এক নতুন আইডিয়ার সূচনা !
কেন হচ্ছিল ? জাপানি বিজ্ঞানী তোমিসা ওটার ব্যাখ্যা দেন,আসলে ওই পলিফেনল এর ধর্ম হলো জল আর তৈলাক্ত পদার্থের পৃথক হয়ে যাওয়া রোধ করে ফলে হিমায়িত হয়ে যাওয়ার পর আবার তরলীকরণের কাজ হতে অতীব দেরি হতে থাকে।অতঃপর এই পদ্ধতিতে ওটা এবং তার সহযোগীরা বানিয়ে ফেলেন 'কানাজাওয়া বরফি দানা ',এই ছোট ছোট আইসক্রিমের মতো জিনিস জাপানের বিভিন্ন দোকানে চলে আসে মানুষের উপভোগের জন্য। কাঠির উপর আইসক্রিমের মতো এই জিনিস গুলো নিজেদের আকৃতি থেকে গেলে যায় না রোদে বা গরমে রাখলেও। মজার হলো এর সাথে দাহ্য প্রাকৃতিক কিছু মিলিয়ে যদি আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় তা হলে ওটা একই আকারের থাকবে আপনার প্লেটে কিন্তু গেলে যাবে না চট করে। আর হ্যা , ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রার পরিবেশে ও ওটা গেলে যায় না। কি বুঝলেন ?
কি,খেতে ইচ্ছা করছে ? আমার ও করছে কিন্তু জাপান এখনো এই প্রযুক্তি বা ওই আইসক্রিম রপ্তানি করা শুরু করে নি সুতরাং আমাদের আপাতত দেখা ছাড়া কোনো অন্য উপায় নেই,তবে প্রবাসী মানে জাপান প্রবাসী বঙ্গ সন্তানেরা এর স্বাদ উপভোগ করতেই পারেন।খেলে একটু বলবেন কেমন লাগলো।
একটি সম্পৃক্ত ভিডিও দিলাম ইউটিউব থেকে,অসাধারন সব আইসক্রিম এই পদ্ধতিতে তৈরী আর এর উপর কিছু বিবরন পেয়ে যাবেন।একই সাথে আরো কিছু সূত্র নিচে দিচ্ছি,আরো জ্ঞান অর্জন করতে দেখে নিন।আর হ্যা ,জাপান গেলে যদি ওই সামগ্রী নিয়ে আসেন তা হলে আমাকে একটু আওয়াজ দেবেন মানে এই অধম কে খাওয়াবেন।জানি ওটা করবেন না তবু ‘আশায় মরে চাষা ‘ ,যদি কেউ খাওয়ায় তাই বলে রাখলাম-ট্যাকাটুকা তো দেবেন না তাই যা আসে !
ইউটিউব সূত্র : https://www.youtube.com/watch?v=lfGoE242KEg
এক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক হবে না যদি বলে রাখি আমেরিকার প্রচলিত আইসক্রিম স্যান্ডউইচ যা গরমে গলে যাচ্ছিল না বলে ওয়ালমার্ট এর উপর তদন্ত হয়েছিল তা আলাদা,নেসলে বা ওয়ালমার্ট ইত্যাদির ওই খাদ্যদ্রব্যতে গাম জাতীয় বস্তু থাকে ওটা হয় না আর সঙ্গে অতিরিক্ত ক্রিম ছিল বলা হচ্ছিল কিন্তু এই আলোচিত আইসক্রিম মোটেই ওটা না।তাই উহার সাথে ইহাকে মিশাইবেন না !
ভাবুন দেখি সুকুমার রায় এই আবিস্কার দেখলে কি বলতেন ?মনে হয় বলতেন :
রোদে রাঙা ইটের পাঁজা তার উপরে বস্ল রাজা
হাত ভরা আইসক্রিম ভাজা
খাচ্ছে কিন্তু গিল্ছে না ।
গায়ে আটা গরম জামা পুড়ে পিঠ হচ্ছে ঝামা
রাজা বলে "আইসক্রিম গলা - নইলে কিচ্ছু মিলছে না ।"
পুরোটা পড়ে ফেললে অনেক ক্রিম-ময় ধন্যবাদ !
লেখক আজিজুল শাহজী। খ্যাতিমান লেখক ও চিন্তক।
__________________________
তথ্যসূত্র :
১. https://phys.org/…/2017-08-japanese-scientists-ice-cream-do…
২. একদম জাপানি খবর থেকে : https://www.asahi.com/ajw/articles/AJ201707300036.html
৩. https://www.foodandwine.com/…/japanese-scientists-created-ic…
৪. https://www.hindustantimes.com/…/story-VnxKrkHO1mE9F8YFzO2M…
৫. একটি বোনাস পাকিস্থানি লিংক ,খবর সহি ওটা সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য https://www.pakistantoday.com.pk/…/an-ice-cream-that-doesn…/
৬. একটি বাড়তি প্রতিবেদন ভিডিও যারা লেখা পড়তে চান না তবে ভিডিও দেখতে ভালোবসেন
https://www.youtube.com/watch?v=Nf_TpDWxu84
আপনার মতামত দিন: