Ameen Qudir

Published:
2017-12-21 17:31:23 BdST

মুক্তা যেমন শুক্তির বুকে


 

 



 

 

 


অধ্যাপক ডা.অনির্বান বিশ্বাস,
কোলকাতার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক , কবি ও চিন্তক
________________________


ফুটপাতে ছোট ছেলেমেয়েরা কদম ফুল বিক্রি করছে। এই বর্ষায় সেই কদম দেখে রিকশায় বসে স্মৃতি বলে...
-এই, দেখো দেখো -কদম ফুল। আমাকে কিনে দাও !

অনি কদম ফুল হাতে ছেলেমেয়ের দিকে তাকিয়ে অতি উৎসাহে নিয়ে বলে..
=কদম্ব ফুলের আরেক নাম ভৃঙ্গবল্লভ । কদম্বের ফল রক্ত পরিষ্কারক । অবশ্য এটা বাদুরের প্রিয় খাদ্য । ফল খেতে টক টক লাগে তো এই জন্য !

স্মৃতি বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে ..
-কেউ কী করে এরকম গাধা হতে পারে ? কদম ফুলকে কেউ “কদম্ব ফুল” বলতে পারে ? তাছাড়া কদম ফুলের আরেক নাম ভৃঙ্গবল্লভ – এটা বলার মানে কী ? স্ত্রীর সামনে জ্ঞান জাহির করা ? জ্ঞান দিয়ে তো আমাকে জয় করতে পারবে না ! তোমায় বিয়ে করাই ভুল হয়েছে । বিরাট ভুল ! তুমি রিক্সা থেকে নামো । এখনই। নিজের পাশে পেট মোটা একটা ডিকশানারি নিয়ে রিক্সায় চেপে ঘুরে বেড়াবার কোন মানে হয় না !

অনি অবাক হয়ে স্মৃতির দিকে তাকিয়ে বলে,
=আমি পেট মোটা ডিকশানারি ? সামান্য কদম্ব ফুল কিনে দেই নি দেখে , তুমি এই জঘন্য জিনিসটা আমাকে বলতে পারলে ?
-অবশ্যই তুমি পেট মোটা । এখনো তোমার ভুড়ির জন্য আমি রিকশার সিটের একপাশে চেপে যাচ্ছি !

অনি গলা খাকরি দিয়ে রিকশার সিটে স্মৃতির কাছ থেকে একটা সরে বসলো। তাঁর মন কিছুটা বিষন্ন হয়েছে।স্ত্রীর কাছ থেকে “ভুড়িওয়ালা” খেতাব পাওয়া খুব আনন্দের কিছু না।

-তুমি কী সত্যি সত্যি আমাকে কদম ফুল কিনে দেবে না ?
=না। কদম ফুল এমন বিশেষ কিছু না। টেনিস বল সাইজের একটা ফুল। এটা দেখে এতো প্রেমে পড়ার কোনো মানে নেই। সামনে দোকান আছে। কয়েকটা গোলাপ কিনে দিচ্ছি।

এই রসকষহীন ছেলেটির সাথে সারাটা জীবন কাটবে ! স্মৃতির চোখ জলে ভরে উঠছে। বর্ষায় কেউ সামান্য একটা কদম ফুল কিনে দেবে না,এটা কী করে হয় ? পলিথিনে মোড়ানো গোলাপ দিয়ে সে করবেটা কি ? চোখ থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।

হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রিক্সা ঢুকেছে পাশের গলিতে। অনি ঠিক এই সময়ে চেঁচিয়ে ওঠে..
=এই রিক্সা থামো থামো।
- কী হয়েছে?
স্মৃতিকে রিক্সা থেকে নামিয়ে ,অনি রিক্সাওয়ালাকে বলে ..
=এ্যাই ভাই, সিটটা একটু শক্ত করে ধরুন দেখি।
অনি এবারে রিক্সার সিটের উপর দাঁড়িয়ে গেলো। হাত বাড়িয়ে মাথার উপর ঝুলতে থাকা কদমের ফুল ছিঁড়ে আনলো কয়েকটা ।
সিট থেকে নেমে স্মৃতির হাতে দিয়ে বলে
=প্রিয়জনকে, ফুল নিজের হাতে ছিঁড়ে দিতে হয়। কিনে দিলে ফুলের পবিত্রতা নষ্ট হয়।

হতভম্ব হয়ে স্মৃতি বৃষ্টি ভেজা কদম হাতে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির ছাঁট ঘন হচ্ছে।দৃষ্টিও আরো ঝাপসা হচ্ছে !

অনির ইচ্ছা হচ্ছে এইভাবে সারাক্ষন স্মৃতির দিকে তাকিয়ে থাকতে।

এই মেয়ে এতো সুন্দর করে রাগে কেন ? এই মেয়ে এতো সুন্দর করে কাঁদে কেন ?


মদ ও আমি
........................

ভালো আমি কোনো কালেই ছিলাম না। কেবল ভদ্রতার মুখোশ পরে চলাফেরা করতাম। মদের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয় একটি ট্যুরে। Alcohol is the most beautiful thing,God has ever created এই যুক্তিতে প্রথমবারের মত স্বাদ নিলাম সমাজে নিষিদ্ধ এক পদার্থের। এ যেন সূচনা এক মহাপ্রলয়ের। তারপর থেকে মাঝে মাঝে বন্ধুত্ব ঝালিয়ে নিতে হয়।

মাতাল হওয়ার পর চট করেই ধরতে পারি বাজারে কি খাবে! পরিবেশের উপর নির্ভর করে ভারী গলায় বলতে পারি পৃথিবীতে নারী জাতির কোনো স্থান নেই, সব অনিষ্টের মূল এরাই ইত্যাদি ইত্যাদি অথবা বিধাতাকে নিয়ে উচ্চস্তরের ফিলোসফি। মাতালদের জগতে ভিন্নমতের কোনো স্থান নেই। আমরা বাকীরা কোন মাতাল বন্ধুর ভূল শুদ্ধ থিওরী এক বাক্যে মেনে নেই। মাঝে মাঝে হু হা কিংবা রাইট রাইট বলে তাকে উৎসাহ প্রদান করি। অন্ধকারে কেউ কারো চেহারা দেখতে না পারা, এর মাঝে তার ভারী গলায় আওড়ানো থিওরীগুলোকে মনে হয় যেন দৈব বাণী! দু একটা থিওরী হয়ত বলতাম, দূর্ভাগ্যের ব্যাপার নেশা চলে যাওয়ার পর কিছুই মনে থাকেনা! আফসোস বিশ্বব্রক্ষান্ড নিয়ে দেওয়া চমৎকার সব থিওরী কোথায় যে হারিয়ে যায় নিজেই জানিনা।

সেবার আসর বসেছিল এক বন্ধুর খালি বাড়িতে । মাতাল অবস্থায় সবাই যখন ব্যস্ত নারী জাতির চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধারে। তখন কাগজ কলম হাতে নিয়ে বসলাম কবিতা লিখতে। কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা দূর্বল এই কবিতাটিকে (জানিনা এটাকে কবিতা ক্যাটাগরীতে ফেলা যায় কি না) কয়েকবার এডিট করার পর যা দাঁড়িয়েছে

"...আমার চোখে দারুণ প্লাবন,
বুকে বহে যমুনা,
আমি বন্ধু হেরে গেলেও
তুমি কিন্তু হেরো না ।"....এটি লেখার পর আমার হৃদয় হল রুদ্ধ..জগৎ হল ঝাপসা..

পরের দিন নেশা ভাঙতে কাগজের কবিতায় নজর গেল..দেখি ঠিক নিচে কেউ লিখে রখেছে
"ইচ্ছে হলে দেখতে দিও, দেখো
হাত বাড়িয়ে হাত চেয়েছি রাখতে দিও, রেখো"...


________________

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়