Ameen Qudir

Published:
2017-09-19 16:10:21 BdST

"সুইসাইড করার ইচ্ছে আমারও হয়"





ডা. নাসিমুন নাহার

__________________________________

যেহেতু স্কুলে কলেজে ডিবেট ক্লাবের নিয়মিত সদস্য ছিলাম আমি, সেহেতু যথেষ্ট যুক্তি সংগত অনেকগুলো কারন আমি দাঁড় করাতে পারব আত্মহত্যা করতে চাইবার পেছনে।
আপনাদেরকে মুগ্ধ করার জন্য দারুন একটা সুইসাইড নোটও আমি লিখে ফেলতে পারব ত্রিশ মিনিট সময় হাতে পেলে।বিগত দেড় বছরের ফেসবুকে হাবিজাবি লেখালেখির বদৌলতে আপনাদের ভালোবাসা সেই আত্মবিশ্বাস আমাকে দিয়েছে।আরো পারব ফেসবুকে একটা ঝড় তুলতে।বারো তের হাজার মানুষ যাকে ফলো করে, যার সাত হাজার সদস্যের একটা নিজস্ব ফেসবুক গ্রুপ আছে এবং যে বাস্তব জীবনে পেশায় একজন চিকিৎসক, বয়সে তরুণী ,সিঙ্গেল মাদার তার আত্মহত্যা অবশ্যই আলোচিত সমালোচিত হতে বাধ্য !!

এখন কথা হলো, আমার সুইসাইড করতে চাওয়ার কারনগুলো কি কি হতে পারে বা হওয়া উচিত ?

 

______এক নম্বর কারন আশেপাশের লোকজনের অহেতুক অসুস্থ কৌতুহল।আমার ধারনা সুইসাইড যারা করেন বা করতে চান সবার জন্যই এই কারনটা প্রযোজ্য।
এই সমাজের কথা মাথায় রাখলে আমার সুইসাইড করতে চাইবার পেছনে----"আয় হায় একা !! একা মেয়ে মাথা উঁচু করে নির্লজ্জের মতো ড্যাং ড্যাং করে এখনো টিকে আছে !! কেম্নে থাকে(সবথেকে অশ্লীল প্রশ্ন) !! কখন বাসায় ফিরে !! বাসায় কে কে আসে !! বাজার কে করে !! মোবাইলে কয়বার কত টাকা ফ্লেক্সি করে !! বেতন কত পায় !!" ইত্যাদি প্রশ্নগুলো যথেষ্ট না বলেন ?!
বাংলাদেশে একজন নবীন লেডি ডাক্তারের পক্ষে সন্তান সাথে নিয়ে একা ফ্যামিলি রান করানোটা আত্মহত্যার ই সামিল বটে অর্থনৈতিক ভাবে।এই পয়েন্টটা শুধুমাত্র একজন ডাক্তার ই বুঝতে পারবেন।
অসভ্যতা, অসম্মান, সন্দেহ আপনাকে যখন প্রতি নিয়ত ঘিরে ফেলবে তখন সুইসাইড করতে না চাইবার কিছু নেই।
যখন বাবার বয়সী প্রফেসর/বস রাত দিন 'শুভ সকাল শুভ রাত্রি এবং চলতে থাকা শব্দমালা' বলতে থাকে তখন আমার সুইসাইড করতে ইচ্ছে করে।
যখন হাঁটুর বয়সী ছেলে let's have some fun বলে তখনও ইচ্ছে করে মরে যাই।
যখন বন্ধুরা বলে তোর নিরাপত্তার( হায়রে নিরাপত্তা! ) জন্য হলেও পাশে সাইনবোর্ড লাগানো দরকার।তখনও প্রশ্ন করি নিজেকে--- মরি না কেন ?
আরো অজস্র অসংখ্য কারন আছে যা হয়তো লিখব বৃদ্ধবয়সে, যদি বেঁচে থাকি।

 

এখন কথা হচ্ছে---- সুইসাইডটা তবে কেন করছি না ?
#নিজেকে ভালোবাসি--- অন্যতম প্রধান কারণ এটা।
#বিশ্বাস করি-- জন্ম মৃত্যু সৃষ্টিকর্তা ইচ্ছায় হয়।
#আমি মরে গেলে আমার ছেলেটাকে সবাই মিলে ক্লাসে ফার্স্ট বয় বানানোর জন্য উঠে পড়ে লাগবে।মায়ের মতো ডাক্তার হতেই হবে--- এ কথা বলে বাচ্চাটাকে ব্লাকমেইল করবে।
ছেলেটার ক্রিকেটার, সার্ভাইভর, লেখক, মাষ্টারশেফ হবার মতো পাগলামিময় স্বপ্নগুলো কখনোই পূরণ হবে না।
#আমার আব্বু আম্মু সময়ের অনেক আগেই শয্যাশায়ী হয়ে যাবে বড় মেয়ের শোকে।
#ফেসবুকে আমাকে যারা ফলো করেন তার বিশাল একটা অংশ হচ্ছেন 'মেয়ে'--- নানা বয়সী, নানা পেশার, নানা শ্রেণীর।তবে সবার একটা কমন ফ্যাক্টর আছে---'সবাই সাহসী হয়ে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্নে বিভোর'।তাদের স্বপ্ন এবং বিশ্বাসের ভীত নড়ে যাবে।এই অন্যায় টা করতে আমার কেন যেন কষ্ট হবে !
#আর এত বছর ধরে সুযোগ সন্ধানীর দল যারা আমাকে নিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে যেসব গসিপ তৈরি করেছেন কিন্তু অণুবীক্ষণ যন্ত্রে খুঁজেও কিছু পায়নি তাদেরকে সুযোগ করে দেয়া----- "বলছিলাম না কাহিনী আছে।কারো সঙ্গে লটকা লটকি করে এখন সুইসাইড করছে।"
ভাইরে লটকা লটকি করলে সুইসাইড ক্যান করব ? আমি তো বাচ্চা না যে জোর করে ভয় দেখিয়ে লটকা লটকি করে ফেলবে কেউ।তাই না ?মনে রাখবেন-- নিজের পায়ে দাঁড়ানো মানুষ লটকা লটকি করলে নিজের বিবেক বুদ্ধি খাটিয়ে সব ধরনের যৌক্তিক ভিত্তিতেই তা করবে।এটা বোঝার জন্য ব্রেইনে পদার্থ থাকতে হয়, পটি না।


জীবন দারুণ এক জিনিস।
বেঁচে থাকাটাও চরম রোমাঞ্চকর ব্যাপার, যদি আশেপাশে ভেজাল করার, পেইন দেবার মানুষ না থাকে।সমস্যা হচ্ছে আমাদের সমাজে কেন যেন ভেজাল মেশানো খাবারের প্রভাবেই মনে হয় ভেজালযুক্ত মানুষ ই বেশী।যাদের কাজ হচ্ছে অন্যকে বিরক্ত করে বিনোদন লাভ করা।
তাদের বিনোদনের খোরাক হতে যেয়ে কারো কারো যে বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাও চলে যেতে পারে তা এরা ভাবে না।
আমি একদিন যখন অনেক বড় হব, ঐ রৌদ্রজ্বল ঝলমলে আকাশটা ছুঁয়ে দিব (দিব ই একদিন, ঠিক জানি) তখন দেশে বিনোদনের ব্যবস্থা করব নিয়ত করেছি।
যাতে মানুষ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে, অন্যকে নিয়ে ঘাটাঘাটি না করে।
নিজে বাঁচুন, অন্যকেও বাঁচতে দিন, প্লিজ।

_________________________

ডা. নাসিমুন নাহার । লোকসেবী চিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়