Ameen Qudir

Published:
2017-09-11 16:52:57 BdST

পাবলো পিকাসো ও কিউবিজম


 



ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়

_____________________________

পাবলো পিকাসোর পুরো নাম -- পাবলো দিয়েগো হোসে ফ্রান্সিসকো দে পাউলা হুয়ান --- এই নামেই তাঁর বাপ্তাইজেশন হয়। এই বিরল প্রতিভার জন্ম ২৫ অক্টোবর ১৮৮১ তে এস্পানা ( ইং, স্পেন) র আন্দুলেশিয়ার মালাগা শহরে। তিনি পিতা দন হোসে ও মাতা মারিয়া র প্রথম সন্তান। মা মারিয়া কিন্তু ১/৪ অংশে ইতালিয় এবং ইতালিয়ার জেনোয়া অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন মায়ের পূর্বজ রা। আশ্চর্য যে পিকাসো ও যৌবনে নাস্তিক হয়ে যান। মধ্যবিত্ত পরিবারেই পিকাসোর জন্ম এবং পিতা ছিলেন চিত্রকর এবং তাঁর পারদর্শিতা ছিল বিভিন্ন পাখী আঁকায়।
বাল্যকালেই পিকাসোর অঙ্কন শিল্পের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ পায়। তিনি বাল্যে পিখ - পিখ বলতে থাকেন, যা আসলে স্পেনীয় ভাষায় লাপিখ ( Lápiz) বা পেন্সিলের অপভ্রংশ। ৭ বছর বয়েস থেকেই তিনি পিতার কাছে স্কেচ আঁকা এবং তেল রং এ আঁকা শিখতে আরম্ভ করেন।
১৮৯১ সালে তাঁরা কোরুঈনা ( Coruña ) শহরে চলে আসেন এবং তাঁর পিতা এস্কুয়েলা দে বেঈয়াস আর্তেস (Escuela de bellas artes) এ প্রফেসর ( Profesor) হিসেবে যোগদান করেন। প্রায় চার বছর তাঁরা কোরুঈনা তে ছিলেন। পিতা তখনই পুত্রের অঙ্কনশিল্পের বিশেষ প্রতিভা আঁচ করেন।
১৮৯৫ সালে প্রিয় বোন কঞ্চিতার ডিপথেরিয়া তে মৃত্যু হলে পিকাসো মানসিক ভাবে অত্যন্ত ভেঙে পড়েন। মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবার বার্সেলোনা তে চলে আসেন এবং পিতা বার্সেলোনা র এস্কুলা দে বেঈয়াস আর্তেস এ যোগদান করেন। পিকাসো র যেন আবির্ভাব হলো বার্সেলোনা তেই। পিতা অনেক বুঝিয়ে পিকাসো কে ক্লাসে আভানখাদা ( Clase avanzada) তে ভর্তির প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসাতে কর্তৃপক্ষ কে রাজি করান, তখন পিকাসো ১৩ বছরের বালক। কার্যক্রম শেষ করে পিকাসো পরীক্ষায় বসেন এবং উত্তীর্ণ হন সসম্মানে। কিন্তু পিকাসো ছিলেন একটু উড়নচণ্ডী প্রকৃতির এবং তাঁর পক্ষে সমবয়সী বন্ধু মেলা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছিল।
পিকাসোর বাবা এবং কাকা তাঁকে মাদ্রিদের রেয়াল আকাদেমিয়া দে বেঈয়াস আরতেস দে সান ফেরনান্দো( Real Academia de Bellas Artes de San Fernando) , তৎকালীন দেশের সেরা বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই পিকাসো গতবাঁধা শিক্ষণ প্রণালী তে বিরক্ত হয়ে যান এবং এমনকি ক্লাসে যাওয়ায় বন্ধ করে দেন। মাদ্রিদে আকর্ষক বস্তুর অভাব ছিলো না। প্রাদো ( Prado) যদিও আক্ষরিক অর্থে সবুজ মাঠ, এখানেই পিকাসো র পরিচয় হয় দিয়েগো ভেলাস্কেখ ( Diego Velazquez) , ফ্রান্সিস্কো গোইয়া ( Francisco Goya) এবং ফ্রান্সিস্কো জুরবারান ( Francisco Zurbarán) র মতো নামী চিত্রকর দের অঙ্কনের সঙ্গে। পিকাসোর বেশী পছন্দ ছিল এল গ্রেকো ( El Greco)র আঁকাগুলি, যেগুলো ছিল একটু বা অনেক অন্য ধরণের অঙ্কন প্রণালী --- যার বৈশিষ্ট ছিল লম্বাটে হাত - পা, উজ্জ্বল রং এবং সচরাচর সাধারণের বোঝার উর্ধে। ইংরেজিতে মিস্টিকের আর ভালো প্রতিশব্দ খুঁজে পাইনি আর।
পিকাসোর শিক্ষক ছিলেন আপন পিতা, এবং তাঁর বয়:সন্ধির আঁকা গুলি বার্সেলোনা র মুসেউ তে প্রদর্শিত আছে।
১৮৯৬ সালে পিকাসো আঁকেন তাঁর প্রয়াত বোন লোলার প্রতি তাঁর স্নেহের আর্তি --- লা প্রিমেরা কমুনিয়ন ( La primera communión ) ছবিতে। একই বছরে, তখন তিনি ১৬, আঁকলেন পরত্রেত দে তিয়া পেপা ( Portrait de tia Pepa)।এই ছবিতেই নিজের প্রতিভার সম্পূর্ণ প্রকাশ হলো প্রথমবার। হুয়ান এদুয়ার্দো সিরলোত ( Juan - Eduardo Cirlot)এর মতো নামী শিল্পী এই অঙ্কন টিকে এস্পানার ইতিহাসে সেরা চিত্র আখ্যা দিলেন।
১৮৯৭ এ নতুন ধাঁচে আঁকতে আরম্ভ করলেন পিকাসো। রং এর প্রয়োগের এমনতর উজ্জ্বল উদ্ভাস এই প্রথম দেখলো মানুষ। রোজেত্তি, স্টাইনলেন, তুলুজ - লোত্রেক, এদোয়ার্দ মুনখ এই প্রমুখ অঙ্কনশিল্পীদের আঁকা বিশেষ প্রভাবিত করলো প্রতিভাবান পিকাসো কে।
১৯০০ সালে পিকাসো পাড়ি দিলেন ইউরোপের তথা পৃথিবীর সাংস্কৃতিক রাজধানী পারি তে। সেখানে ফরাসি সুহৃদ মাক্স জাকবের কাছে শিখলেন ফরাসি ভাষা এবং সাহিত্যসম্ভার। একই ঘরে দিনাতিপাত করতেন দুই বন্ধু। মাক্স ঘুমোতেন রাতে আর দিনে ঘুমোতেন পিকাসো আর সারারাত কাজ করতেন। এক বিষণ্ণ বিষাদ, দারুণ শৈত্য আর চরম অভাবের মধ্যে চলছিলেন পিকাসো।
নীল পর্যায় ( ১৯০১- ১৯০৪) :--
এই সময়ের কিছু অংশ পিকাসো কাটান বার্সেলোনা আর পারি মিলিয়ে। তাঁর আঁকায় বেশী বেশী করে এলো নীল আর নীল সবুজ,ভিখারি আর বারবণিতারা। বিষণ্ণ প্রতীকি ছবি আঁকলেন --বন্ধু কার্লোস কাসাগেমাস এর মৃত্যু তে -- নাম দিলেন লা ভি ( la Vie) বা জীবন ; চরম ব্যাঙ্গাত্মক নাম।
লাল পর্যায় ( ১৯০৪- ১৯০৬)
এই সময়ের আঁকাগুলি তে হালকা রং ব্যবহার করেছেন শিল্পী। কমলা আর গোলাপি রং এর ব্যবহার হলো। এই সময়েই পিকাসো পরিচিত হন ফ্যারনান্দ অলিভিয়ের সঙ্গে, যিনি নিজেও এক বোহেমিয়ান শিল্পী, এবং থাকতে শুরু করলেন একত্রে। (Fernand Olivier)। অলিভিয়ে তাঁর লাল সময়ের বহু আঁকার মডেল। ১৯০৫ সালে তাঁর সঙ্গে আলাপ হলো নামী ফরাসি চিত্রকর অঁরি মাতিজ (Henri Matisse) এর। এঁরা আজীবন একইসঙ্গে বন্ধু ও প্রতিদ্বন্দ্বী রয়ে গেলেন।
বিশ্লেষণী কিউবিজম্ এবং কৃত্রিম কিউবিজম্ --- ১৯০৯ -- ১৯১৯
প্রথমে পিকাসো ব্যবহার করলেন বাদামী এবং সাদাটে রং। ফরাসি শিল্পী জর্জ ব্রাক্ ( Georges Braque)একসঙ্গে আঁকলেন বেশ কিছু ছবি।
এরি ঠিক পরে এলো কৃত্রিম কিউবিজম, যা পিকাসোর নিজের সেরা সৃষ্টি বললে অত্যুক্তি হবে না। প্রথমত কাটা কাগজের টুকরো, এবং তাঁর রঙের তুলির আঁচড় ----- এই নিয়েই তৈরী হলো কোলাজ। মঁমাত্র এবং মোঁপার্নাসে পিকাসো গীয়ম আপোলোন্যার, আঁদ্রে ব্রেতঁ, গারত্রুদ স্টাইন এর উপস্থিতিতে তাঁর প্রথম প্রদর্শনী হয় পারি তে।

এই সময়েই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ লাগে লাগে --- সৃষ্টি হলো এমন অবস্থার। পিকাসো তখন আভিনোঁ ( Avignon) এ। আপাতত যবনিকা পড়লো কারুশিল্পে।

____________
এর পর দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি মঙ্গলবারে

__________________________

লেখক ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় । কলকাতার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক। সুলেখক । কবি।

Diabetes & Endocrinology Consultant
M.D. at University of Madras । প্রাক্তন :
Calcutta National Medical College and Madras Medical College (MMC)

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়