Ameen Qudir

Published:
2017-09-10 16:37:12 BdST

মহালয়ামহালয়ার আর নদিন বাকি






ডা. রেজাউল করীম

______________________________________

মহালয়ার আর নদিন বাকি। শরৎ আজকাল আসে কিন্তু ইঁট কাঠের জঙ্গলে তার সুখটুকু অনুভব করতে পারিনা। দিন চলে যায় প্রাত্যহিক কাজের পসরা নিয়ে আর দিনান্তে রেখে যায় পরিশ্রমক্লান্ত নির্জীব সৈনিক। কয়েক বছর আগেও কাজটা এত ক্লান্তিকর ছিল না, এর মধ্যেও আনন্দ ছিল, বেঁচে থাকার রসদ জোগাড করা যেত, জীবনকে বহুমুখে অনুভব করা যেত, দিনভর পরিশ্রমের পরও একটা তৃপ্তি থাকতো। হায়, সে সব সুখের দিন মরীচিকায় বিলীন। থাক সে দু:খের কথা।

 

মা আসছেন, কলকাতার বড়লোকদের মা আসেন কোটি টাকার সোনার শাড়ী পড়ে। আমার পছন্দ গরীবের মা যে বাংলার ঘরে ঘরে অকালেও সুখের ঠিকানা রেখে যায়। শরতের আকাশ মেঘের পাহাড়ে পাহাড়ে সাজিয়ে ফেললে আর মাঠ-ঘাট কাশ ফুল ভরে উঠলেই অকারণ পুলকে মন ভরে যায়, বুকের ভেতর গুনগনিয়ে ওঠে অজানা সুর। তাই আশ্বিন-কার্তিকের টানাটানিতেও লোকের মুখে হাসি, কাপড়ের দোকানে দোকানে লম্বা লাইন, ডোম পাড়ার ছেলে বুড়োরা ঢাক নিয়ে তৈরী। মন্ডপের সামনে প্রশস্ত চাতালে চলছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। মাটি জোগাড়, ভুসি দিয়ে ছানা, কাঠামোর ওপর প্রলেপ দিয়ে ধীরে ধীরে মাটি মা হয়ে আসেন। এক অর্থে আমরাও এই রকম- এক একটি নিষ্প্রান কাঠামো। তার কৃত্রিম সাজ-সজ্জা দিয়ে জগৎকে ভোলাই, নিজেও ভুলে থাকতে চাই।


কৃত্রিম সে নিষ্প্রান কাঠামোকে সপ্রান, সুন্দর করতে একজন কারিগর লাগে- শিক্ষায়, দীক্ষায়, প্রেমে, মানবতায় সে অনন্য হয়ে ওঠে। এই যে ঘরের মেয়ে উমাকে হৃদয়ের সতোৎসারিত আবেগ আর অমলিন ভালবাসার স্পর্শে নির্মান করে তুলছি, এই বাঙালীর যুগ যুগের সাধনা। তা যাক, শরত তাই অনন্য- কলকাতার মেকি শরত নয়, গ্রাম বাঙলার শরত, সতেজ, সপ্রান, অকৃত্রিম।


পুজোয় আমাদের গ্রামে মেলা বসে। খুব সামান্য জিনিসের পসরা সাজিয়ে দোকানীরা বসে পড়ে। সামান্য টুকিটাকি জিনিসের জন্য দীর্ঘ দরদাম হয়, আকাশ বাতাস মুখর হয়ে ওঠে। ছেলেদের সবার হাতে বাঁশি, গায়ে নতুন জামা আর মেয়েদের মাথায় বাহারী প্লাসটিকের ফুল। ষষ্টির সকাল থেকে সপ্তমীর সন্ধ্যা আমাদের কেটে যেত মেলার মধ্যে ঘুরঘুর করে। পাঁপডের দোকানে লম্বা লাইন আর মিষ্টি ঝুরি বিক্রি হত অঢেল। আমাদের গ্রামে পাঁঠা বলি হত, বোধ হয় এখনো হয়। একবার বেশ মনে আছে প্রায় শ খানেক বলি হয়েছিল। আসলে এই দেবস্থানের বেশ নামডাক ছিল। একটা ছোট পুকুর ছিল যেখানে চান করলে নাকি চোখের অসুখ সেরে যায়। বেশীর ভাগ বলি হল সেই মানতের বলি। এখনো হয় নিশ্চয়। আমাদের সে মন্ডপ এখন আর তেমন দরিদ্র নয়, জমিদারদের অকাল বিদায়ের পর মা আবার তার বাপের বাড়ীতে এলে অন্তত: ঝকঝকে তকতকে ঘরে সন্তান নিয়ে নিশ্চিন্তে তেরাত্তির থাকতে পারে।


এই সুদুরে বসে আন্তরিকতার আর আকন্ঠ ভালবাসার সেই পুজোর দিনগুলির জন্য মন কেমন করতে থাকে। উমার চোখের কাজল, তাঁর টকটকে লাল ঠোঁট, মাথার মুকুট পরে রাজরানীর সাজ- যেন সুখে ভরপুর নিজের কন্যাকে দেখছি আর গর্বে, ভালবাসায় আর তৃপ্তিতে মন ভরে উঠছে।


________________________________

ডা. রেজাউল করীম। ওপার বাংলার প্রথিতযশ লেখক, চিন্তক , চিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়