Ameen Qudir

Published:
2017-09-07 20:47:39 BdST

আমরা কি এমন হীনমন্য কবি চেয়েছিলাম ?





রাজিক হাসান , লন্ডন
__________________________________

 

দীর্ঘ ১৫ বছর লন্ডনশহরে কাটিয়েছি। লন্ডনের অলিগলিসহ রাজবাড়ি থেকে মুচির দোকান পর্যন্ত; এমনকোনো জায়গা নেই- যেখানে আমার পায়ের ছাপ পড়েনি।


অনেককিছু দেখার মাঝে- জুতো পলিশওয়ালাও দেখেছি। লিভারপুল স্ট্রিট আন্ডার গ্রাউন্ডে এক সাদা ইংরেজকে। সে আমার দেখা শ্রেষ্ঠ জুতো পলিশওয়ালা। কোনো কথা নেই মুখে। চোখ ঠিক জুতোতে। একমনে পলিশ করে চলেছে। মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কাজে সে নিজেকে নিমগ্ন রেখেছে। কেউ-কেউ জুতো না খুলেই পা রাখছে তার সামনে। সে তার মুখের দিকে না তাকিয়েই একমনে করে চলেছে তার কাজ। দেখে মনে হয় একজন শিল্পী যেনো ছবি আঁকছে একমনে। অনেকবার দাঁড়িয়েছি, দেখেছি তার এই শিল্পকলা অবাক বিস্ময়ে। আমি তখন লিভারপুল স্ট্রিট বার্গারকিং-এ কাজ করি সেলস ম্যান হিসেবে।


বলতে গেলে আমার মত হাজারের ওপর বাঙালি সেখানে কাজ করে। কিন্তু কেউ তো জুতো পলিশ করতো না। আমার ইচ্ছে হত, ইশ! আমি যদি ওই জুতো পলিশওয়ালার মত হতে পারতাম! না, সেটা সম্ভব নয়। কেন নয়? কারণ, এরজন্য ওখানকার কাউন্সিল থেকে পারমিট বের করতে হবে। দেখতে হবে ওটায় দক্ষ আমি। বিজনেস লাইসেন্স। একখণ্ড জায়গার লিজ। ম্যালা হাঙ্গামা। এরচেয়ে বার্গার কিং-এ বার্গার বিক্রি অনেক সহজ কাজ যে।

 


একদিন সময় করে সাহস নিয়ে গিয়েছিলাম সেই জুতো পলিশওয়ালার কাছে, তার সাথে আলাপ করতে। খুব গম্ভীর মানুষ সে। মনে হয় তার ঠোঁটদুটো এমনভাবে সেলাই করা; যেন তার ফাঁকগলে কোন কথা বের হবার নেই কোন উপায়। অভিবাদন জানিয়ে সরাসরি জানতে চাইলাম তার নাম। সে প্রথমে দেখলো আমায়। ঠোঁটের কোণে একটুকরো হাসি মিশিয়ে নাম বলল, জাস্টিন। আমি যেচে শুরু করে দিলাম আলাপ। খুব ভদ্রলোক সে। কোন প্রশ্ন করে না। শুধু উত্তর দেয়। জানলাম এটা তার ফ্যামিলি বিজনেস। বাপ্ও এই কাজ করেছেন। এমনকি তার দাদাও। সে থাকে নটিংহিল গেট-এ। মানে পশ এরিয়াতে। তার একটিই মেয়ে- পড়ে ক্যামব্রিজে। সে কাজ নয়মাস করে বছরে। বাকিসময় কাটায় ফ্রান্সে। মাঝে-মাঝে সে তার বোনের কাছেও যায় স্পেনে। বছরে একবার যায় সাউথ আফ্রিকার জঙ্গলে। যতখানি বিস্ময় নিয়ে তার সাথে আলাপ শুরু হয়েছিল; তার দ্বিগুন বিস্ময় নিয়ে আলাপটি শেষ হল।

 

গতকয়েকদিন আগে সদ্য 'বাংলা একাডেমী' পুরস্কারপ্রাপ্ত এক কবি নাকি প্রবাসীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলেছে, 'প্রবাসীরা সব বিদেশে গেছে জুতা পালিশ করতে।' তিনি আরও বলেছেন, 'দেশ ছাড়লে নাকি আর দেশের জন্য মায়া কান্নার দরকার নেই।' তার এই সংকীর্ণতা ও চণ্ডাল রূপটি আমাকে ভীষণভাবে অবাক ও আহত করেছে। মনে হয় প্রবাসীদের গালমন্দ করার পেছনে তার কোনো প্রবাসীর সঙ্গে কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্বের ভূমিকা রয়েছে। সাধারণত কবি'রা খুব সংবেদনশীল হয়, তাদের অনেককিছুই উপলব্ধি করতে হয়- যা সাধারণেরা পারেন না। একজন কবিকে তার সময় ও সময়ের মানুষদের পাঠ করতে শিখতে হয়। আর তিনি? আমরা কি আবু হাসান শাহরিয়ারের মতো এমন হীনমন্য কবি চেয়েছিলাম ?

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়