Ameen Qudir

Published:
2017-08-19 16:31:39 BdST

" হাসু আপা,তোমার আব্বুকে আমি একটু আব্বু বলি?"


 

 

 

 


প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম

_____________________________________


এ ক
শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা বাংলাদেশে।ইতিমধ্যে বাংলাদেশ আক্রান্ত। গতরাতেই জানা যায় বন্যার ছোবলে নিহত হয়েছে ৩২ জন।
এই জাতীয় দূর্যোগের সময় সকল রাজনীতি, বিচার নীতি শিকেয় তুলে সরকারের সব সম্পদ এবং জনগনের সকল সামর্থ্য নিয়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাড়াতে হবে।( এক যুগ আগেও জাতীয় দূর্যোগের সময় দেখতাম অসংখ্য তরুনদল স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে দূর্গত মানুষকে সহায়তার জন্য ছুটে যেতো।আজ তারুন্যের সে আদর্শিক চেতনায় মরচে ধরছে কেন?)
ব্যক্তিগত ভাবেও আমাদের প্রত্যেককে এগিয়ে আসতে হবে
দুই
১৫ আগষ্ট বাঙ্গালি জাতির কলঙ্কের ও শোকের দিন।
আমি কোন দল করি না( সেটি আমার ধাতের সঙ্গে ও যায় না), কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আমি এক গুন মুগ্ধ ভক্ত।
আমার লেখা আত্ম উন্নয়মূলক বই ও সবচেয়ে জনপ্রিয় হওয়া বই " মন ও মানুষ" এর শেষ অধ্যায়ে মনুষত্বের বিকাশ ও বিবর্তনের উপর আলোচনা করতে গিয়ে " সমসাময়িক " মানুষ ও" চিরায়ত/সাত্ত্বিক " মানুষ নিয়ে আলোচনা করি।চিরায়ত মানুষের উদাহরণ দিতে গিয়ে বাঙলাদেশে থেকে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখ করেছি( বইটি লিখেছি ২০০৪ সনে- যেটি আওয়ামীলীগ শাসন ছিল না)।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সহ ১৫ আগষ্টে ঘৃন্য হত্যা কান্ডে নিহত সকলের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বঙ্গ বন্ধুর " অসমাপ্ত আত্ম জীবনী" থেকে নির্বাচিত কিছু অংশ স্মরন করছি (আমি মনে করি আদর্শিক মুজিবকে স্মরন ও ধারন করা হবে তার প্রতি সম্মান জানানোর সঠিক পন্থা) :


১। " বন্ধু বান্ধবরা বলে " তোমার জীবনী লেখ".. সহধর্মিনী বলে " বসেই তো আছো,লিখ তোমার জীবন কাহিনী "। বললাম"... আমার জীবনের ঘটনাগুলো জেনে জনসাধারণের কি কোন কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না.."। পৃষ্ঠা-১
( যিনি ১৩ টি বছর জেলে কাটিয়েছেন,শত নির্যাতন সহ্য করে একটি জাতিকে " স্বাধীনতা" উপহার দিয়েছেন,সেই মহান নেতার কত উদারতা " কিছুই তো করতে পারলাম না" বলে আক্ষেপ। অথচ বর্তমানে অনেকের দাপট ও অহঙ্কার দেখে মনে হয় দেশের জন্য তারা "কত কিছুই না করে ফেলেছেন "।)-


২। ক)হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী দুই গ্রপের দ্বন্দ্ব মিটমাট করতে বঙ্গবন্ধুকে আনোয়ার সাহেবকে একটি পদ দিতে বলেন।বঙ্গবন্ধু না বলে দেন।শহীদ সাহেব তখন বলেন" who are you? you are nobody. "বঙ্গবন্ধু জবাব দিলেন " if am nobody, then why you invited me? you have no right to insult me.I will prove that I am somebody.. " পৃষ্ঠা-২৯
খ) গোলাম মোহাম্মদ শহীদ সাহেবকে আইন মন্ত্রী করলেন পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য। সবাই এতে ক্ষিপ্ত,বঙ্গবন্ধু ও।শহীদ সাহেব বঙ্গবন্ধুকে করাচী ডেকে নিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেখানে গিয়েও শহীদ সাহেবের সঙ্গে দেখা করেন না।পরদিন দেখা হলে শহীদ সাহেব বলেন" রাত্রেই দেখা করা উচিৎ ছিল.."। বঙ্গবন্ধু বললেন ".. আর এসেই বা কি করবো, আপনিতো এখন মোহাম্মদ আলী সাহেবের আইন মন্ত্রী। তিনি বললেন " রাগ করছো।বললাম " রাগ করবো কেন স্যার,ভাবছি সারাজীবন আপনাকে নেতা মেনে ভুলই করেছি কিনা?" পৃষ্ঠা-২৮৬
( সোহরাওয়ার্দীর মতন শীর্ষ নেতাকে মুখের উপর এভাবে উচিত কথা বলতে ওনার বিন্দু মাত্র সংকোচ হয়নি।আর এখন নেতাদের স্তাবকতায় কে বেশি এগিয়ে সে প্রতিযোগিতায় সবাই নেমেছে।অন্য দিকে এরকম প্রতিবাদ করা সত্বেও শহীদ সাহেব বঙ্গবন্ধুকে পরিত্যাগ করেনি বা কোন শাস্তিও দেননি। এখনকার নেতারা তেমন সহনশীল কি?)
৩। " বেকার হোস্টেলে কতগুলো ফ্রি রুম ছিল,গরীব ছাত্রদের জন্য। তখনকার দিনে সত্যিকার যার প্রয়োজন তাকেই তা দেওয়া হতো।.. টেলিফোনে দলীয় ছাত্রদের রুম দেওয়ার অনুরোধ আসতো না"। পৃষ্ঠা-৩৭
(এখন টেলিফোনে দলীয় অনুরোধ না,আদেশ আছে)।
৪। কলকাতায় ১ বছরের মাহিনা বাকী,কাপড় চোপড় কিনতে হবে।বাবা কিছু টাকা দিয়ে বললেন পাকিস্তান আন্দোলন বলে কিছু নাই- কিছু শুনতে চাই না।বিএ পাস ভালোভাবে করতে হবে"। সবার থেকে বিদায় নিয়ে রেনুর ঘরে এলাম বিদায় নিতে। দেখি কিছু টাকা হাতে করে দাড়িয়ে আছে।"অমঙ্গল অশ্রু জল" বন্ধ করে বললো" একবার কলকাতা গেলে আর আসতে চাও না।এবার কলেজ ছুটি হলেই বাড়ী এস।"( এ যেন এক বিপ্লবী তরুনের রোমান্টিক উপন্যাস)
৫। " আমার মনে আছে খুবই গরীব এক মহিলা কয়েক ঘন্টা রাস্তায় দাড়িয়ে আছে।শুনেছে এ পথে আমি যাবো।আমাকে দেখে হাত ধরে বললো" বাবা আমার এ কুড়ে ঘরে তোমায় একটু বসতে হবে।... খাও বাবা,আর পয়সা কটা তুমি নেও,আমার তো কিছু নেই।" আমার চোখে পানি এলো।.... সেদিনই আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম " মানুষেরে ধোকা আমি দিতে পারবো না"। ( বড় নেতা তিনিই সাধারন,দরিদ্র মানুষ যাকে এভাবে ভালোবাসে এবং এই মহান নেতা কখনো তার জাতিকে তাই ধোকা দেননি।তার আদর্শ বাস্তবায়নের শ্লোগান যাদের তারা কি নেতার এই একটি আদর্শটুকু অন্তত অনুসরন করবেন?জনগনকে কোন রাজনৈতিক ধোকা দিবেন না?)

____________________________

প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম
সোশাল সাইকিয়াট্রিস্ট
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি এন্ড সোশাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ
জাতীয় মানসিক স্বাস্হ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল,ঢাকা
মোবাইল :০১৭১৫১১২৯০০
ইমেইল :[email protected]

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়